রাগ যদি আগুন হয়, নিয়ন্ত্রণ তবে শান্তির জল
প্রকাশ: ১৬ জুলাই, ২০২৫, ০৯:৪১ সকাল
নিউজ ডেস্ক

|| শাব্বির আহমাদ খান ||

মানুষের অনুভূতির মধ্যে রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ। কিন্তু এই রাগ যদি সীমা ছাড়িয়ে যায়, তবে তা হয়ে ওঠে আত্মবিনাশের কারণ। অনেক সময় আমরা রাগের বশবর্তী হয়ে এমন কথা বলে ফেলি বা এমন কাজ করে ফেলি, যার জন্য সারা জীবন অনুশোচনায় ভুগতে হয়। তাই ইসলাম আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

রাগ মানুষের বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তখন ভালো-মন্দ, হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায়—কিছুই চিন্তা করতে পারে না মানুষ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “সদ ও অসদ সমান নয়। তুমি তা-ই দিয়ে প্রতিহত কর যা উত্তম।”
(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৪)

এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয়, বরং উত্তম পন্থায় দিতে হবে। আর রাগ হলে মানুষ অধিকাংশ সময় প্রতিশোধে অন্ধ হয়ে যায়, ফলে উত্তম পথ আর গ্রহণ করতে পারে না।

রাগের কারণে মানুষ সম্পর্ক নষ্ট করে, পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়, এমনকি অনেক সময় খুনখারাবির মতো ভয়াবহ অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে। হাদিসে এসেছে: “রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: রাগ করো না।”
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ৬১১৬)

এই হাদিসে একটি ছোট বাক্যে রাসুল (সা.) আমাদের জীবনের একটি বিশাল নীতিমালা দিয়েছেন। এক সাহাবি বারবার প্রশ্ন করলে রাসুল (সা.) বারবার একই উত্তর দেন—“রাগ করো না।” অর্থাৎ, রাগকে দমন করাই হচ্ছে একজন প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট্য।

রাগের সময় মানুষ কেবল নিজের ক্ষতিই ডেকে আনে না, বরং আশেপাশের মানুষদের জন্যও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি রাগের মাথায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরে বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রশংসা করেছেন সেই মানুষদের, যারা রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখে: “যারা রাগ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়, আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪)

এই আয়াতে তিনটি গুণের কথা বলা হয়েছে—রাগ সংবরণ করা, মানুষের প্রতি দয়া দেখানো, আর সৎকর্মে লিপ্ত থাকা। এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।

ইসলামে রাগ দমনের কিছু বাস্তব ও কার্যকর উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে। যেমন:

১. আউজুবিল্লাহ পড়া – রাগ উঠলে “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” পড়া। কারণ রাগ অনেক সময় শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়।
২. অবস্থার পরিবর্তন – রাগ উঠলে দাঁড়িয়ে থাকলে বসে যাওয়া, বসে থাকলে শুয়ে পড়া।
৩. অযু করে ফেলা – হাদিসে আছে, রাগ আগুনের অংশ, আর পানি আগুন নেভায়।
৪. চুপ থাকা – রাগের সময় কথা না বলা, যাতে অপ্রয়োজনীয় ও কষ্টদায়ক কথা না বের হয়।

রাগ একটি আগুন, যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। পরিবার, সমাজ, কর্মক্ষেত্র—প্রতিটি ক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বিপর্যয় নেমে আসে।
আর একজন প্রকৃত মুসলমান সেই, যে রাগের মুহূর্তেও আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের আবেগকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আসুন, আমরা রাগের আগুনে নিজের ও অন্যের জীবন পোড়ানো থেকে বাঁচি। আল্লাহর নির্দেশ মেনে নিজেকে গড়ে তুলি একজন সহনশীল, ধৈর্যশীল ও মার্জনাপরায়ণ মুসলমান হিসেবে।

এসএকে/