আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী: বহুমুখী প্রতিভায় আলোকিত ব্যক্তিত্ব
প্রকাশ:
১৫ জুলাই, ২০২৫, ০১:০২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামাবাদী —একজন আলোকিত মানুষ, যিনি গাঁয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশ, জাতি ও দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছেন। যিনি জীবনের চার দশকের বেশি সময় ব্যয় করেছেন লেখালেখি, সাংবাদিকতা, গবেষণা ও ইসলামি রাজনীতির খেদমতে। অথচ শহরের বৈভব ও পদ-পদবি নয়, তিনি বেছে নিয়েছেন গ্রামের নিভৃত পরিবেশকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাজীবন
১৯৬৪ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল ভাঙ্গাদিঘীরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা হাজী আরেছ মিয়া (রহ.), মাতা নুরজাহান বেগম। তার দাদা মাওলানা আবদুস সাত্তার (রহ.) ছিলেন একজন আলেম ও আধ্যাত্মিক সাধক। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন নিজ গ্রামের মাদরাসায়, পরে দক্ষিণ সুয়াবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিতাব বিভাগে নাজিরহাট বড় মাদরাসা ও পরে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৮২ সালে। এরপর ফেকাহ, তাফসির, তাজবিদে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত পাশ করেন। কামিল (হাদিস) নাজিরহাট মাহমুদিয়া আলিয়া মাদরাসা, এবং কামিল (ফেকাহ) সম্পন্ন করেন সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা থেকে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। কিছু সময় চট্টগ্রাম কলেজে আইন শিক্ষাও গ্রহণ করেন।
লেখক, সম্পাদক, গবেষক
তিনি একাধারে লেখক, সম্পাদক, অনুবাদক ও গবেষক। ৪৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসলামি সাহিত্যচর্চায় সম্পৃক্ত। সাপ্তাহিক জমিয়ত, মাসিক আর রশীদ, মাসিক পয়গামে হক—প্রতিটি প্রকাশনায় ছিলেন সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ইসলামি বিশ্বকোষ-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখকও তিনি। দৈনিক ইনকিলাব, ইত্তেফাক, যুগান্তরসহ দেশের প্রথম সারির বহু দৈনিক ও মাসিকে তার অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্বের ওপর লেখা তার সংক্ষিপ্ত জীবনী আজও পাঠকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
রাজনৈতিক ভূমিকা
ইসলামাবাদী একজন সক্রিয় ইসলামি রাজনীতিবিদ। খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে ফটিকছড়ি এবং ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম সদর আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (একাংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আধ্যাত্মিক জীবন
তিনি চারটি তরিকায় ইজাজতপ্রাপ্ত এবং আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে পরিচিত। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)-এর মুরিদ। খেলাফত পেয়েছেন মুফতি আহমদুল হক (রহ.), শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রমুখ ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে। তার প্রতিষ্ঠিত খানকাহে এমদাদিয়া ও মাদানি মসজিদে প্রতি সোমবার ইসলাহি মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজসেবা
২০০৭ সালে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব সুয়াবিল তালিমুল ইসলাম বালিকা মাদরাসা (দাওরায়ে হাদিস)। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম। ইতোমধ্যে তিনতলা মসজিদ-মাদরাসার অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে বালক শাখা, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাহিত্য বিভাগ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলি
তার রচিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে:
ইসলাম ও বিশ্বশান্তি (অনুবাদ)
হায়াতে মাওলানা হারুন বাবুনগরী
মাকামে সাহাবা (অনুবাদ)
নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
তারীখে ইসলাম
আযীযুত্তালেবীন
শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ভারতবর্ষের ওলামাদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাস
আদালত খান, খিলাফত আন্দোলন কি চায়, কেন চাই, কিভাবে চাই ইত্যাদি। এসব ছাড়াও শতাধিক জীবনী ও প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী তার ত্যাগ, শ্রম ও সাধনায় আজও নিরবচ্ছিন্নভাবে আলোর দিশা দিচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্রীয় বা সামাজিকভাবে তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতি এখনও আসেনি। শহর ছেড়ে গ্রামের নিভৃত জায়গায় থেকেও তিনি আলোর দিশা ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
তিনি বলেন—‘আমি ইসলামি রাজনীতি কিংবা লেখালেখি, যাই করেছি বা করছি—সবই এলায়ে কালেমাতুল্লাহর জন্য। মাওলাকে রাজি-খুশি করার জন্য। দুনিয়ার কোনো স্বার্থ বা চিন্তা করিনি।’ এই কথাগুলো শুধু একটি মনীষার বক্তব্য নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বিশাল প্রেরণার উৎস। তার মতো মানুষদের চিনতে পারলেই জাতি উপকৃত হবে। আমাদের উচিত তার অভিজ্ঞতা ও চিন্তার ধারাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি সাহিত্য ও সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
আইএইচ/
|