ভোটের মাঠে বারবার চমক দেখানো একজন আলেম
প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০১:৩৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিশেষ প্রতিনিধি

তিনি সাতবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের হুইপ। দেশের শীর্ষ এই আলেম ভোটের মাঠে বারবার চমক দেখিয়েছেন। তিনি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ তিনি ইন্তেকাল করেন। প্রায় ৭০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে পরিচিত ছিলেন নানা পরিচয়ে। 

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শীর্ষ নেতা ছিলেন। অবিভক্ত জমিয়তে দীর্ঘকাল মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ কয়েক বছর জমিয়তের একটি অংশের নেতৃত্ব দেন। ভোটের মাঠে তিনি কখনো স্বতন্ত্র, কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো ইসলামী ঐক্যজোট আবার কখনো জমিয়তের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে দলের বাইরে তাঁর ছিল একটি ব্যক্তি ইমেজ। একজন সাদাসিধে আলেম হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতির কুটিল মাঠ তিনি চষে বেরিয়েছেন এবং ভোটের মাঠে বারবার চমক দেখিয়েছেন। 

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নির্বাচনী এলাকা যশোর-৫। মনিরামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি জাতীয় সংসদের ৮৯নং আসন। এই আসনে তিনি ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।  এর মধ্যে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হন। 

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হন নির্বাহী সভাপতি। ২০১৭ সালে জমিয়ত বিভক্ত হলে তিনি একাংশের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস আলেম রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকটা ব্যতিক্রম ছিলেন। কয়েকবারের এমপি, ছিলেন মন্ত্রিপরিষদে, দেশে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে গণ্য হতেন, তবু তাঁর চলাফেরা ছিল একদম সাদাসিধে। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি পর্যন্ত ছিল না। চাইলে সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনা তাঁর জন্য কোনো ব্যাপারই ছিল না। তবু তিনি সেই পথে হাঁটেননি। এভাবে সাধারণের মধ্যেই তিনি নিজেকে অসাধারণ করে তুলেছিলেন। 

আলেমদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে এমপি হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই দলীয় পরিচয়, প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় কিংবা জোট-মহাজোটের জোরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। তবে মুফতি ওয়াক্কাসের ক্ষেত্রে দল কিংবা জোটের চেয়ে তাঁর ব্যক্তি পরিচয়টা মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিজ দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শক্ত কোনো সংগঠন ছিল না। তাছাড়া ভোটারদের একটি বড় অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এলাকায় জনশ্রুতি আছে, সেই সংখ্যালঘু ভোটাররাও একজন মাওলানাকে এমপি হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। বারবার ভোটে সেটার প্রমাণও রেখেছেন তারা। সংখ্যালঘুরা মনে করতেন, তাঁকে এমপি নির্বাচিত করলে তারা নিরাপদ থাকবেন। কারণ তাঁর কোনো বাহিনী ছিল না। এলাকায় তিনি কোনো গুণ্ডা-মাস্তান পালেন না। ফলে তাঁর নাম ভাঙিয়ে উৎপাত করার মতো কেউ নেই। 

জাতীয় রাজনীতিতেও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ছিলেন ব্যতিক্রমী। তিনি হক কথা বলতে দ্বিধা করতেন না। এজন্য অনেক সময় অনেকের রোষানলেও পড়েছেন তিনি। তবে যা সঠিক মনে করতেন তা থেকে একচুলও নড়তেন না। আকাবির-আসলাফের নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি কোনো ছাড় দিতেন না। ইসলামি রাজনীতির অঙ্গন আজও তাঁর শূন্যতা অনুভব করে। দেশে যখন নির্বাচনী ডামাডোল বাজছে, এমপি হওয়ার দৌড়ে অনেক আলেম অবতীর্ণ হচ্ছেন, তখন একজন মুফতি ওয়াক্কাসের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। তাঁর মতো ব্যক্তি ক্যারিশমায় বারবার সংসদে যাওয়ার মতো দ্বিতীয় কোনো আলেম চোখে পড়ছে না।

এমএইচ/