আমরা কেন জাতিসংঘের অফিস খোলার বিপক্ষে?
প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০৭:২২ সকাল
নিউজ ডেস্ক

|| আসিফ আদনান ||

আমরা কেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের কার্যালয় খোলার বিপক্ষে? এই বিরোধিতার শক্ত এবং যৌক্তিক গ্রাউন্ড আছে।

এদের কান্ট্রি অফিস সাধারণত যুদ্ধবিধ্বস্ত বা প্রাকৃতিক বা মানবিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশগুলোতে খোলা হয়। বুরকিনা ফাসো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন- এই ধরনের দেশে। বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি নেই। বাংলাদেশে এদের কান্ট্রি অফিস খোলার যৌক্তিকতা নেই।

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ওএইচসিএইচআর-এর অফিস খোলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিশেষত শ্রীলংকা ও নেপাল বহু চাপের মুখেও তাদের দেশে মানবাধিকার কমিশনের কান্ট্রি অফিস খুলতে দেয়নি। বাংলাদেশে কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার কারণে এই অফিস খুলতে দেওয়া হবে? 

বাংলাদেশ নানা ধরনের জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে আছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিদের প্রক্সি লড়াই চলছে। এখানে আমেরিকা, চীন এবং ডারতের স্বার্থের নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে। মার্কিনিদের বার্মা অ্যাক্টের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো এই গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে চীনকে এখানে বেকায়দায় ফেলা। 

অন্যদিকে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা আছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আছে। আবার আমরা মাঝেমাঝেই শুনি বঙ্গোপসাগর, সেন্টমার্টিন নিয়েও অনেকের নাকি আগ্রহ আছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এই অফিস খোলার সিদ্ধান্ত এই জমিনের নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতার ব্যাপারে শঙ্কিত করে। 

এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ঘোষণা দিয়ে এলজি টিভি এজেন্ডার প্রচার ও প্রসার করে। এটা তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে লেখা আছে। বিকৃতিকে এরা অধিকার মনে করে। নিজেদের ভ্রান্ত চিন্তা বাকি পৃথিবীর ওপর তারা চাপিয়ে দিতে চায়। এরা যৌন উপনিবেশবাদ কায়েম করতে চায়। 

আমরা অনেক দিন ধরে এই এলজি টিভি এজেন্ডার বিরুদ্ধে কাজ করে আসছি। আওয়ামী জাহেলিয়াতের সময়ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে এগুলো নিয়ে লেখালেখি করেছি। নানাভাবে জনসচেতনতা তৈরি করেছি। 

বাংলাদেশের অনেক মানুষ জানেন না, কিন্তু জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশকে বারবার যৌন বিকৃতির বৈধতা দেওয়ার জন্য, দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯ এ জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউতে ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

২০১৩ এর ফেব্রুয়ারিতে বিকৃতি যৌনতার পক্ষে কাজ করা দেশি অ্যাক্টিভিস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে বাংলাদেশ গিয়ে বক্তব্য দিয়ে এসেছে। 

আওয়ামী জাহেলিয়াতের সময় বাংলাদেশে হাজারো মানুষ গুম-খুনের স্বীকার হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কাউকে কি জাতিসংঘ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। 

কিন্তু বিকৃত যৌনতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের দেশি-বিদেশি এনজিওরা ভাড়া করে জাতিসংঘে নিয়ে গেছে। এই এনজিওদের মাধ্যমেই পাঠ্যবইয়ে শরীফ শরীফার গল্প এসেছে।  অর্থাৎ এইসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশি-বিদেশি এনজিও এদের একটা নেক্সাস আছে। যারা সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মতো দেশগুলোতে মানবাধিকারের নামে বিকৃতি প্রমোট করে। 

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয় কমিশনের কার্যালয় হলে এই বিকৃতির প্রমোশান কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে ভাবুন তো। 
কাজেই এই কার্যালয় প্রতিষ্ঠা সিদ্ধান্তের আমরা বিরোধিতা করি।
 
জনগণের ঈমান আকিদা, তাহযিব-তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে গিয়ে, কওম ও জমিনের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার ড ইউনূসের নেই, তার ক্যাবিনেটের নেই। ছাত্র উপদেষ্টাদের নেই। কোনো রাজনৈতিক দলেরও নেই। এটা মূলত এনজিও লবির লোকেদের মাধ্যমে নেওয়া সিদ্ধান্ত। 

হাসিনার আমলে যেভাবে ইচ্ছেমতো নানা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো, ঠিক একইভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসিনা যেভাবে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়েছিল। যেভাবে দেশের বড় বড় সেক্টর আদানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল, সেইভাবে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না।

লেখক: গবেষক, চিন্তক ও অ্যাকটিভিস্ট

এমএইচ/