জুলাই যোদ্ধাদের ‘জাতীয় বীর’ উপাধি দিতে হবে: মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
প্রকাশ: ১২ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, “জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও যোদ্ধারা জাতিকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের ‘জাতীয় বীর’ উপাধি দিতে হবে।”

শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকার যাত্রাবাড়ী-ডেমরা অঞ্চলে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “পনেরো বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করলেও ছাত্র-জনতার ত্যাগ ছাড়া কিছুই অর্জিত হয়নি। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জুলাই আন্দোলন। যারা গুলির সামনে বুক পেতে শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

রফিকুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, “বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের দলীয় লোকজন সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, লুটপাট ও খুনাখুনি চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন এক গোষ্ঠী নিজেদের দেশের মালিক ভাবতে শুরু করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী দোসররা সরকারের ভেতরে-বাইরে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। প্রশাসনে সৎ ও দেশপ্রেমিকদের না বসালে জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে দোসরদের অপসারণ এবং মৌলিক সংস্কার জরুরি।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের গণহত্যায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৫০ হাজারের বেশি আহত হয়েছিলেন। রক্ষা পায়নি শিশুরাও। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে নির্বাচন এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে নতুন করে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর জামায়াত আহতদের চিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে সহায়তা দিয়েছে। ঈদ, রমজান, সব উৎসবে পাশে থেকেছে। শহীদদের তথ্য সংরক্ষণ করে ১০ খণ্ডে ১৫০০ পৃষ্ঠার গ্রন্থ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।”

বুলবুল দাবি করেন, সরকার ১১ মাসেও শহীদ পরিবার বা আহতদের পুনর্বাসনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু ভাতা দেওয়ার ঘোষণা এসেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি জুলাই সনদ ঘোষণা, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার, নির্বাচনী সংস্কার, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান।

সভায় উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও আহত আন্দোলনকারীরা আবেগতাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা বলেন, “জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদ থেকে জাতিকে মুক্ত করলেও রাষ্ট্র তাদের কিছুই দেয়নি। নতুন বাংলাদেশে পুরনো অবিচার-অনাচারের পুনরাবৃত্তি হলে তা হবে জাতির জন্য লজ্জাজনক।”

সভাপতির বক্তব্যে জামায়াত নেতা আব্দুস সবুর ফকির বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে এমন গণহত্যা বিরল, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না করে কেউ শুদ্ধি বা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারে না।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামাল হোসেন, শহীদ মাহাদী হাসানের পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন, শহীদ নুর হোসেনের মা নুরুন্নাহার বেগম, আহত জুলাই যোদ্ধা শাহ আলম, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, সাদিক বিল্লাহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ পরিবার সম্মাননা, খাবার বিতরণ, ইফতার ও ঈদ আয়োজন এবং তথ্য সংরক্ষণমূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তাঁরা শহীদদের স্মরণ করছে।

এসএকে/