ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন কমাতে নীতিমালা!
প্রকাশ:
০৯ জুলাই, ২০২৫, ১২:০১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
||যুবায়ের আহমাদ|| বেতন-ভাতা বাড়াতে সাধারণত নীতিমালা হয়। কিন্তু মডেল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। সরকারের মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ অনুযায়ী একজন শুধু ইমাম (পেশ ইমামের আলাদা বেতনস্কেল, খতিবের আলাদা) কমপক্ষে ৯ম গ্রেডে (প্রথম শ্রেণি) ২২,০০০/- টাকা প্রারম্ভিক বেতন পাবার কথা। সঙ্গে যুক্ত হবে বাড়িভাড়া ও অন্যান্য। সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। মডেল মসজিদের ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত ও পরিচালিত মসজিদেও যদি সে নীতিমালা বাস্তবায়ন না হয় তাহলে নীতিমালা কিসের জন্য? সমস্যা হলো, ওই নীতিমালা অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিলে তো বেতন অনেক বেশি হয়ে যায়! অপ্রয়োজনে সরকার নানা জায়গায় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারলেও ইমামদের ক্ষেত্রে অভাব। সেজন্য নীতিমালা থাকতেও ইমামদের বেতন কমাতে আলাদা নীতিমালা করা হলো। সে নীতিমালায় একজন ইমাম ও খতিবের বেতন সর্বসাকুল্যে ১৫ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া নেই, চিকিৎসা ভাতা নেই, অন্য কিছু নেই। তা-ও বাড়বে না। ইনক্রিমেন্ট নেই। ফিক্সড। অনেক ভালো না? তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে নিয়োগ পাওয়া ইমামের সর্বসাকুল্য বেতন ১৫ হাজার। এমন একটি সম্মানিত পদে থাকা ব্যক্তির জীবনমান যেমন, তাতে তার একটি আবাসন দরকার। উপজেলা পর্যায়ে বাসা ভাড়াই তো ৮-১০ হাজার টাকা। থাকল ৫ হাজার। তা দিয়ে রাজার হালে চলতে পারবেন তো। তাই না? তার মতো উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক বেতন ৩০-৩৫ হাজার। উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাকে বসতে হয়, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। কিন্তু বেতন তিন ভাগের একভাগ বা তারও কম। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রায় ১ বছর ধরে মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা বলে আসছেন, নীতিমালা করা হচ্ছে। মাশাআল্লাহ, খুবই ভালো। কিন্তু নীতিমালা তো করা আছে! সংশোধন করতে এতই সময় লাগলে আগেরটিই বাস্তবায়ন করা হোক! অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন ইমামদের জাতীয় স্কেলে বেতন দিতে। মাশাআল্লাহ! কিন্তু নিজের মন্ত্রণালয়ে তো তিনি নিজে করতে পারেন। মডেল মসজিদের একজন খাদেমের বেতন ৭,৫০০/- টাকা। সর্বসাকুল্যে। ফিক্সড। থাকা-খাওয়া নেই। প্রতিদিন ২৫০ টাকা! তারাও নিয়োগ পেয়েছেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে। মুয়াজ্জিনের বেতন ১০ হাজার। কিন্তু ২০০৬ এর নীতিমালা অনুযায়ী মুয়াজ্জিনের প্রারম্ভিক বেতন হবার কথা ১০ম গ্রেডে, ১৬ হাজার টাকা। সঙ্গে বাসা ভাড়া ও অন্যান্য। থাকা-খাওয়ার সুবিধাবিহীন ৭৫০০ টাকায় খাদেমের চাকরি পাগলেও করবে না৷ কারণ, থাকা খাওয়াতেই এ টাকা চলে যাবে। ফলে মডেল মসজিদের অনেক খাদেম মুয়াজ্জিন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, দিচ্ছেন। আমাদের দেশের সরকারি কলেজগুলোর মসজিদের ইমামের বেতন ওই কলেজের পিওন, মালি-সুইপারের চেয়েও কম। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, আদালত, সরকারি বড় বড় অফিসের শত শত কর্মচারীর বেতন সরকারি স্কেলে হলেও ওইসব অফিসের মসজিদের ইমাম, যার পেছনে ছোট বড় সব কর্মকর্তা কর্মচারী নামাজ পড়েন, তার বেতন সরকারি স্কেলে নয়৷ করুণা করার মতো সামান্য বেতন। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। নতুন বাংলাদেশ এনে দিতে ইমামরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ তাদের ওপর কেন বৈষম্য করা হবে? সরকারি পদমর্যাদা ও বেতনস্কেলে দ্রুত মডেল মসজিদসহ সব সরকারি মসজিদের ইমামদের বেতন কার্যকর করা হোক! মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি অনুরোধ, সময় চলে চায়৷ দায়িত্বও চলে যায়। ক্ষমতাও চলে যায়। আজ সরকারি গাড়ি ও পতাকা আছে, কাল নাও থাকতে পারে। কিছু কাজ করে গেলে সুবিধাভোগী মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখে। অন্তত এতটুকু কাজের বাস্তবায়ন আপনাদের হাত ধরে দেখতে চাই, মডেল মসজিদসহ সরকারি কলেজ ও অফিসের মসজিদগুলোর ইমামদের নীতিমালা অনুযায়ী জাতীয় বেতনস্কেলে বেতন-ভাতা কার্যকর হয়েছে। লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর এনএইচ/ |