উস্কানিমূলক সিনেমার রিলিজ ঠেকাতে আদালতে মাওলানা আরশাদ মাদানী
প্রকাশ: ০৮ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

||বিশেষ প্রতিনিধি||

ভারতে ‘উদয়পুর ফাইলস’ নামে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে, যেখানে ২০২২ সালে সংঘটিত দর্জি কানহাইয়া লাল হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিনেমাটি রিলিজ হলে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মাওলানা আরশাদ মাদানী। তিনি ভারতীয় মুসলিমদের অন্যতম অভিভাবক, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান। পাশাপাশি দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম নীতিনির্ধারক ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস। 

সোমবার (৭ জুলাই) আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনটি করেন মাওলানা আরশাদ মাদানী। বুধবার (৯ জুলাই) এর ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আবেদনে মাওলানা আরশাদ মাদানী দাবি করেছেন, ২৬ জুন, ২০২৫-এ মুক্তি পাওয়া সিনেমার ট্রেলারটি এমন সংলাপ ও দৃশ্যসমূহে পরিপূর্ণ যা ২০২২ সালে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল এবং যার ফলে আবারও সেই একই সাম্প্রদায়িক অনুভূতিগুলো উসকে ওঠার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে।

আবেদনে তিনি বলেন, সিনেমাটি প্রকৃতপক্ষে নির্লজ্জভাবে আদালতের দৃশ্য দেখায়, মামলার এক পক্ষকে সমর্থন করে এমন এক বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এবং সেইসাথে একটি বিতর্কিত বক্তব্যও সরাসরি তুলে ধরা হয়েছে – যা রাজনীতিবিদ নুপুর শর্মা দিয়েছিলেন – যার ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ায় এবং পরিণামে কানহাইয়া লালের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।

বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রি তার নতুন সিনেমা ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ রেখেছেন। এতে বলা হয়েছে, শুধু ট্রেলারটি দেখলেই সিনেমার কাহিনি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে না, কারণ ট্রেলার নিজেই একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়কে পক্ষপাতদুষ্টভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, যা ওই সম্প্রদায়ের সদস্যদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করে।

আবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেলারটিই যথেষ্ট এটা দেখানোর জন্য যে, এটি অত্যন্ত উসকানিমূলক, যা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে সক্ষম এবং এর ফলে দেশজুড়ে জনশৃঙ্খলার গুরুতর ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যেমনটি পূর্বেও একই বক্তব্যের ফলে ঘটেছিল, যা এখন সিনেমায় পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

আবেদনকারী বলেন, যদিও কানহাইয়া লালের হত্যাকাণ্ড দুইজন উগ্রপন্থী দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল, তবু ট্রেলারটি মিথ্যাভাবে তা এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন এটি ওই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতা ও ধর্মগুরুরা যৌথভাবে করেছে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিনেমাটির মুক্তির ফলে একটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করা, ঘৃণা ছড়ানো এবং দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির ভিত্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হতে পারে, যা ভারতের সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২১ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন – কারণ এটি বৈষম্যকে উৎসাহ দেয় এবং একটি সম্প্রদায়ের মর্যাদাসম্পন্ন ও নিরাপদ জীবনের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সিনেমাটি সাংবিধানিক নৈতিকতাকে লঙ্ঘন করে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অস্ত্র বানিয়ে ভারতের বহুত্ববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের ভিত্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে; বরং এটি এমন এক বর্ণনাকে মূলধারায় আনছে যা সামাজিক ও ধর্মীয় বিভাজনকে আরও গভীর করে। শিল্পভাবনা যতই আবেগপ্রবণ হোক না কেন, তা ভ্রাতৃত্ববোধকে ধ্বংস করার ও জাতির সংবিধানসম্মত নৈতিক ভিত্তিকে উপড়ে ফেলার বাহন হতে পারে না।

এনএইচ/