হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের অভিযোগে তুরস্কে বিক্ষোভ
প্রকাশ: ০১ জুলাই, ২০২৫, ০৩:৪৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

তুরস্কের ইস্তানবুলে একটি ম্যাগাজিনে আমাদের নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে সোমবার সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এএফপির প্রতিবেদনের মতে, উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে।

ঘটনাটি শুরু হয় ইস্তানবুলের প্রধান কৌঁসুলি লেমান ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর। অভিযোগ উঠেছে, ম্যাগাজিনটির ২৬ জুন, ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি কার্টুন ধর্মীয় মূল্যবোধকে অপমান করেছে।

প্রধান কৌঁসুলির অফিস জানায়, “লেমান ম্যাগাজিনের প্রকাশিত কার্টুনটি ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রকাশ্যে অবমাননা করেছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যায়, আকাশে ভাসমান দুটি চরিত্রের মধ্যে এক ব্যক্তি বলছেন, "সালাম আলাইকুম, আমি মোহাম্মদ," এবং অপরজন উত্তর দিচ্ছেন, "আলাইকুম সালাম, আমি মূসা।"

তবে ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক তুনচায় আকগুন এএফপিকে জানান, “এটি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নয়, বরং ইসরায়েলি হামলায় নিহত একজন মুসলিমের কাল্পনিক নাম মোহাম্মদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি মানুষের নাম মোহাম্মদ, আর এটি নবীজির (সা.) সঙ্গে কোনো সম্পর্কিত নয়। আমরা কখনোই এমন ঝুঁকি নিতাম না।”

খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই, ইস্তানবুল শহরের কেন্দ্রস্থলে লেমান ম্যাগাজিনের কর্মীরা প্রায়ই যাতায়াত করেন এমন একটি বারে বিক্ষুব্ধরা হামলা চালান। পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যা পরে ২৫০ থেকে ৩০০ জনের সংঘর্ষে পরিণত হয়।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া একাধিক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানান, “এই জঘন্য কাজের জন্য দায়ী কার্টুনিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং আরও দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইস্তিকলাল অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত লেমান ম্যাগাজিনের অফিসও পুলিশ দখল করেছে।” রাষ্ট্রপতির প্রেস সহকারী ফাহরেত্তিন আলতিন জানান, ম্যাগাজিনের আরও কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

লেমান এক্সে একাধিক পোস্টে দাবি করেছে, তাদের কার্টুনটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে উসকানিমূলক উদ্দেশ্যে। তারা জানায়, “কার্টুনিস্ট একটি ইসরায়েলি হামলায় নিহত নিরপরাধ মুসলিমের ধর্মীয় অধিকার তুলে ধরতেই এই চিত্র এঁকেছেন। এর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধ হেয় করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”

ম্যাগাজিনের সম্পাদক আকগুন বলেন, “১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের স্যাটায়ার ম্যাগাজিনটি বরাবরই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে আসছে। আমাদের বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ অত্যন্ত চমকে দেওয়ার মতো অপ্রত্যাশিত নয়। এটা ম্যাগাজিন ধ্বংসের একটা প্রক্রিয়া। মন্ত্রীরাও এতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। একটি সাধারণ চিত্রকে বিকৃত করে তোলা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনাকে ফ্রান্সের ‘শার্লি হেবদো’-এর সঙ্গে তুলনা করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গভীর উদ্বেগজনক।” উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের শার্লি হেবদো অফিসে উগ্র বন্দুকধারীদের হামলায় ১২ জন নিহত হয়, যেখানে ম্যাগাজিনটিও হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল।

আকগুন বলেন, “পুরো ঘটনার পেছনে চক্রান্ত চলছে। হয়ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এটা একটা পরিকল্পিত উসকানি এবং হামলা।”

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইয়িলমাজ তুনচ এক্সে বলেন, “ধর্মীয় মূল্যবোধকে অপমান করার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস ও পবিত্রতার প্রতি অসম্মান কখনোই সহ্য করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, “ধর্মীয় পবিত্রতা নিয়ে কৌতুক বা ব্যঙ্গ করার কোনো অধিকার স্বাধীনতা দিতে পারে না। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র শুধু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিই নয়, সামাজিক শান্তিকেও ভেঙে দেয়।”

ইস্তানবুলের গভর্নর দাভুত গুলও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে সমাজে উসকানি ছড়ানোর মানসিকতা বরদাস্ত করা হবে না। জাতির বিশ্বাসকে লক্ষ্য করে করা কোনো জঘন্য কাজের প্রতিক্রিয়ায় আমরা নিশ্চুপ থাকব না।”

সূত্র: এএফপি

এমএইচ/