কোন শিক্ষা হলে পশুত্ব ও বর্বরতা থেকে রক্ষা করা যাবে এই জাতিকে?
প্রকাশ: ২৮ জুন, ২০২৫, ১১:২৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

।। মাহবুব কবির মিলন।।

হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিশাল হল রুমে আন্তর্জাতিক সেমিনার হচ্ছে। আমন্ত্রিত অতিথি সব হাই অফিসিয়াল। সরকারি বেসরকারি, এনজিও, ব্যাংক বিমা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

দুপুরের বুফে লাঞ্চ হলের একপাশে লম্বালম্বি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই বসেছেন গোলটেবিলের চারিপাশে। সামনে কয়েক সারি সোফা।

সমাপনী বক্তৃতা শেষ করে লাঞ্চের আয়োজন। সভাপতি শেষ পর্যায়ে। আমি লাঞ্চ টেবিলের উল্টো দিকে প্রবেশ দরজাগুলো সামনে বসেছি। কী যেন একটা লিখছিলাম। সভাপতি ধন্যবাদ জানাবার সময় পেলেন না। শুধু শুনলাম শোঁশোঁ আওয়াজ, দুপদাপ শব্দ। হঠাত ঝড় আসলে যেমন হয়, তেমন।

মাথা তুলে ডানদিকে দেখি কেউ নেই। দুইশ আড়াইশ অতিথি দশ পনের সেকেন্ডের মধ্যে লাঞ্চ টেবিলগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কে কার ঘাড়ের উপর, বগলের নিচে, ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে, প্লেট গুঁজে দিয়ে, কোটের পকেট টেনে, কারো টাই টেনে ধরে সবাই খাবার খাবলে নেয়া শুরু করে দিয়েছে। কেউ হামাগুঁড়ি দিয়ে কারো ঠ্যাঙ্গের তল দিয়ে সামনে যাচ্ছে কিনা, সেটাও দেখার চেষ্টা করলাম। হায়রে কাউয়া ক্যাচাল!!

আমরা জনা ত্রিশেক চেয়ারে বসে অসহায়ের মত দেখতে লাগলাম খাবার নিয়ে সুশীল সমাজের কাণ্ডকীর্তি। যখন সবাই সরে গেল তখন আর খাবার ছিল না। আয়োজন ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ। এতবেশি খাবার নষ্ট করেছে সবাই যে, তা পরে আর ছিল না আমাদের অনেকের জন্য।

এবার হজ শেষে দেশে ফেরার পথে জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে লিখেছে এক বোন। হুবহু তুলে দিলাম।

‘জেদ্দা এয়ারপোর্টে সৌদি এয়ারলাইনসের অপেক্ষায় ছিলাম কয়েকশত হাজি। ফ্লাইট বিলম্ব ছিল সাতঘন্টা। তাই সৌদি এয়ার লাইনসের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হল।দুজন  লোক খাবারের ট্রলিটা নিয়ে  ওয়েটিং রুমে আসার সাথে সাথে নব্য হাজিদের বেশ কয়েকজন ট্রলির ওপর যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং মুহূর্তে যে দৃশ্যের অবতারণা হল, তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু দেখলাম আমাদের দেশের যেসব ক্লিনার  সেখানে কাজ করেন তারা  লজ্জায় এদিক সেদিক মুখ লুকাচ্ছেন। অথচ  খাবার পর্যাপ্তই ছিল। কারো ভাগেই কম পড়ত না।

ঠিক  তার  আধাঘন্টা পরেই ইয়েমেনে যাত্রী দের জন্য খাবার আসল।অবাক হয় দেখলাম, প্রত্যেকে সুশৃঙ্খল ভাবে নিঃশব্দে একটি করে প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমাদের একেকজন ৫/৭টা করে নিচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না। তদুপরি ঝগড়া, হাতাহাতি ছিল দেখার মত। দেশে এসে দেখলাম  ফল উৎসব!!!’

রেস্টুরেন্টে বুফে খাবারে গিয়ে দেখবেন, মায়েরা বাচ্চাদের প্লেটে এত বেশ আইটেম তুলে দিচ্ছে যে, বাচ্চাই উল্টো বলছে, মা এত দিও না। খেতে পারব না।

আর মায়ের উত্তর হচ্ছে, নে নে! পরে দেখা যাবে। পরে দেখা গেল অনেকেই প্লেটে অনেক পরিমাণে খাবার নষ্ট করে রেখে গেছে।

শিক্ষা তো আমাদের সবার মাঝেই আছে। ঠিক কোন শিক্ষা হলে পশুত্ব, অমানবিকতা, বিশৃঙ্খলা এবং বর্বরতা থেকে রক্ষা করা যাবে এই জাতিকে!!

আপনি ব্রিজ, কালভার্ট, সেতু, টানেল, রেল, শিল্প, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, সব অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবেন, কিন্তু মানুষকে মানুষ বানাবেন কিভাবে!! মানুষকে সভ্য করবেন, তার তরিকা কোথায়!!

অসভ্য বর্বরকে সঠিক রাস্তায় না আনা পর্যন্ত উন্নয়নের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা উচিত নয়।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

এনএইচ/