মাটির ৫০০ মিটার গভীরে ইরান গড়ে তুলেছে মিসাইল সিটি
প্রকাশ: ২৪ জুন, ২০২৫, ১১:০৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ইরান নিজের ভূগর্ভস্থ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দিনদিন আরও শক্তিশালী করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য— মাটির ৫০০ মিটার গভীরে ইরান তৈরি করেছে গোপন ‘মিসাইল সিটি’ বা ক্ষেপণাস্ত্রের শহর।

‘অন ওয়ার’ বইয়ের বিখ্যাত বক্তব্যকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ইরান। দেশটির সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল, খাড়া পাহাড় ও দুর্গম এলাকায় তৈরি করেছে সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক। এসব সুড়ঙ্গের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ভয়ংকর মিসাইল সিটি। শুধু ক্ষেপণাস্ত্র মজুতই নয়, এসব স্থাপনায় রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাও।

ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) দীর্ঘদিন ধরেই এসব মিসাইল সিটি পরিচালনা করছে। প্রতিটি সুড়ঙ্গ অত্যাধুনিক কৌশলগত অস্ত্র, ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল, ড্রোন ও বিমান প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সজ্জিত।

ইরানের সামরিক কমান্ডারদের মতে, এরকম বহু মিসাইল সিটি রয়েছে। যদিও এসব স্থাপনার সঠিক সংখ্যা বা অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি। তবে আইআরজিসি-র সাবেক বিমান বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ মৃত্যুর আগে নিশ্চিত করেছিলেন, সম্প্রতি যে নতুন মিসাইল সিটি গড়ে তোলা হয়েছে, তা মাটির ৫০০ মিটার গভীরে এবং ওপরে রয়েছে শক্তিশালী কংক্রিটের স্তর।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অফ ডেমক্র্যাসি’র ইরান বিভাগের পরিচালক বেহনাম বেন তেলেব্লু বলেন, এসব ভূগর্ভস্থ স্থাপনা উপগ্রহের নজর এড়িয়ে গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ও প্রয়োজনে নিক্ষেপ করা যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এসব মিসাইল সিটি ধ্বংস করতে চাইলে আগে সেগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রাক্তন ইউএস মেরিন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা গ্রে ডাইনামিকস-এর বিশ্লেষক মাইকেল এলমার বলেন, ইরানের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমাও এসব ঘাঁটি সহজে ধ্বংস করতে পারবে না।

তবে পাহাড়ের মধ্যে রকেট উৎক্ষেপণের যে বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করেছে ইরান, সেটি লক্ষ্য করে আঘাত হানতে পারলে এসব ঘাঁটি অকেজো হয়ে পড়বে।

বিবিসি প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরান খেইবার শেকান, হজ কাসেম, এমাদ, সেজ্জিল, কদর-এইচ ও পাভেহ ক্রুজ মিসাইলসহ বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে মজুত রেখেছে। এসব মিসাইল দুই হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুও আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে ইসরায়েল, সৌদি আরব, ভারত, এমনকি রাশিয়া ও চীনও রয়েছে ইরানের হামলার আওতায়।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো হামলায় ইরান এমাদ ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে, যা নাভাতিম বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হানে। সাম্প্রতিক হামলায় সেজ্জিল মিসাইলও ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউএস ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ)।

শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ইরান তাদের কিছু যুদ্ধ বিমান এবং এমনকি কয়েকটি যুদ্ধজাহাজও মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

এনএইচ/