হজ: আত্মশুদ্ধি, আত্মোপলব্ধি ও সান্নিধ্যের সফর 
প্রকাশ: ০৯ জুন, ২০২৫, ০৭:০২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| মুর্শিদ সিদ্দিকী ||

আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও তাওফিকে, গতকাল তৃতীয় দিনের মতো জামারায় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে হজের মূল কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল বিদায়ি তাওয়াফ বাকি রয়েছে। হজের সূচনালগ্নে মনের ভেতর যে একধরনের অজানা ভয় কাজ করছিল, আল্লাহ ধাপে ধাপে তা দূর করে দিয়েছেন। প্রতিটি আরকান পালন সহজ করে দিয়েছেন।

হজের প্রতিটি ধাপে শারীরিক পরিশ্রম, ধৈর্য ও ক্লান্তি রয়েছে তবে এই কষ্টগুলোর পরক্ষণেই উন্মুক্ত হয় আধ্যাত্মিক প্রশান্তির দুয়ার। বাইতুল্লাহ, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা, জামারাহ সবগুলো স্থান জুড়েই রয়েছে আধ্যাত্মিকতা ও প্রশান্তি লাভের মহোৎসব।

এবারের হজ কার্যক্রমে কারোই কোনো বড় বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়নি। কোথাও ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে থাকলেও বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন না করা যার কারণে মানুষের মধ্যে এ বরকতময় সফর সম্পর্কে অনাগ্রহ/ভীতি তৈরি হয়।

আমার উপলব্ধি হলো, হজের পরিশ্রম সবার জন্য একরকম নয়। আমি তুলনামূলক কম বয়সে হজে এসে বিশেষ করে মুযদালিফায় সামান্য বিশ্রামে রাত কাটানো, তারপর পায়ে হেঁটে জামারায় গিয়ে কংকর নিক্ষেপ, সেখান থেকে হেঁটে হারামে পৌঁছে তাওয়াফে জিয়ারত, আবার মিনায় ফেরা‌ পুরো প্রক্রিয়াটা যে কতটা কষ্টসাধ্য, তা নিজের শরীরে টের পেয়েছি। কখনও মনে হয়েছে, শরীর আর চলছেই না।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যাঁরা শারীরিকভাবে দুর্বল, প্রবীণ বা অসুস্থ, তাঁরাও এই পুরো রুকনগুলো একইভাবে পালন করেছেন। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবি, আমারই যখন এমন অবস্থা, তাঁদের পক্ষে তো এগুলো পালন করা অসম্ভব হওয়ার কথা! কিন্তু না, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরও সক্ষমতা দিয়েছেন, তাঁদের কষ্টেও রেখেছেন সহজতা।

এই প্রসঙ্গে নিভৃতচারী, মহাক্কিক আলেম, জামিয়া রহমানিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা শফিকুল ইসলাম সাহেব (হজের সফরে আমার হুজুরের সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয়েছে) হজের কষ্টের গভীরতা বোঝাতে এক অসাধারণ উপমা দিয়ে বলেন- ‘একজন মা যদি দশটা সন্তান জন্ম দেয়, তখনও সে কারও কাছে বলে না ‘আমার কষ্ট হয়েছে।’ হজের কষ্টও ঠিক তেমনি; আদায়ের পর প্রশান্তির কারণে সেই পরিশ্রমের কথা স্মরণে থাকে না।’
আল্লাহ সকলের হজকে কবুল করে হজে মাবরুর নসিব করেন।

লেখক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতা ও তরুণ লেখক

এমএম/