শত শিশুকে যৌন নিপীড়ন: সাবেক ফরাসি শল্যচিকিৎসকের ২০ বছরের জেল
প্রকাশ:
২৯ মে, ২০২৫, ০৮:৪৭ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
শত শত শিশুকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে ফ্রান্সের সাবেক শৈল্যচিকিৎসক জোয়েল লে স্কুয়ারনেক-কে ২০ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি শত শত রোগীকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন,যাদের অধিকাংশই ছিল শিশু। ৭৪ বছর বয়সী জোয়েল লে স্কুয়ারনেক গত মার্চে ২৯৯ রোগীকে যৌন নির্যাতন করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপরই সেই মামলায় বুধবার তার সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক।
বিচারক বলেন, সাবেক এই শৈল্যচিকিৎসক অসুস্থ, দুর্বল এবং অচেতন অবস্থায় থাকা শিশুদেরই নিশানা করতেন—যা তাকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়েছে আদালত। ২০ বছরের সাজার কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ তাকে ভোগ করতেই হবে। আগেই সাত বছর জেল খাটায় তিনি ২০৩০ সালের দিকে প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী বলেন, “মামলার এই রায় ভুক্তভোগীদের সংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। আমাদের আইন পরিবর্তন করার এখনই সময়, যাতে আমরা আরও উপযুক্ত সাজা দেখতে পারি।” ওদিকে, আসামি লে স্কুয়ারনেকের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল রায় মেনে নিয়েছেন। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন না।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্রান্সের ব্রতাইঁয়ে শুরু হয়েছিল স্কুয়ারনেকের বিচার। সেখানে কয়েক ডজন ভুক্তভোগী আদালতে সাক্ষ্য দেন, শিশু বয়সে চিকিৎসার সময় কীভাবে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তা বর্ণনা করেন। এরপরই মার্চে স্কুয়ারনেক অপরাধের স্বীকারোক্তি দেন। অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের সময় অজ্ঞান অবস্থায় থাকা শিশুরা হয়েছিল তার শিকার। বিবিসি জানিয়েছে, তদন্তকারীরা তার হাতে লেখা ডায়েরি থেকে নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধার করেন, যেগুলোর ভিত্তিতে অনেক ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা যায়। অনেকেই আগে জানতেন না, তারা এমন ভয়ংকর ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। আদালতের বক্তব্যে স্কুয়ারনেক বলেন, “আমি আর নিজেকে আগের মতো দেখতে পারি না। আমি একজন শিশুধর্ষক,মানসিকভাবে বিকৃত (পোডোফেলিয়া) একজন মানুষ ।” তিনি বলেন, “অনেক কিছুই বলা হয়েছে। সব মনে নেই। সেলে ফিরে গেলে হয়ত মনে পড়বে। কিন্তু এখানে (আদালত) আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি, সেটি ছিল যন্ত্রণা ভোগ, যার জন্য আমি দায়ী।” শিশু নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এত বড় অপরাধের পরও কীভাবে এত বছর ধরে এই চিকিৎসককে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে দেওয়া হল। ২০০৫ সালে শিশুপর্নোগ্রাফিক ছবি ডাউনলোড করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও তখনও তাকে চিকিৎসা থেকে সরানো হয়নি। ভুক্তভোগীদের সংগঠন 'ভিকটিমস অব জোয়েল লে স্কুয়ারনেক' এক বিবৃতিতে জানায়, এই মামলায় সমাজ কিংবা রাজনীতিকদের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার রায়ের আগে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। একজন ভুক্তভোগীর মা বলেন, “এই প্রথম এত সাংবাদিককে দেখলাম। আশা করি এখন অন্তত আমাদের কথা শোনা হবে। আমাদের প্রজন্মের জন্য নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।” মামলার ১৪ সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন আদালতে হাজির ছিলেন লে স্কুয়ারনেক। তিনি বারবার ক্ষমা চাইলেও অনেকেই তাতে আন্তরিকতা খুঁজে পাননি। ভুক্তভোগী লুই-মারি বলেন, “তার কথা সব সময় একই, একই কণ্ঠে। কোনও অনুশোচনা নেই। আমার একটাই আশা, সে যেন বন্দিই থাকে।” তবে তার আইনজীবী দাবি করেন, “লে স্কুয়ারনেক সত্যিই অনুতপ্ত। তার পক্ষে এই স্বীকারোক্তি ছিল একটা সত্য ও ন্যায়ের মুহূর্ত।” তিনি বলেন, “এই দায় কেবল একজন মানুষের নয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাও তাকে থামায়নি।” ফরাসি চিকিৎসক পরিষদ (সিএনওএম) গত মার্চে এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তাকে চিকিৎসা থেকে বিরত রাখা উচিত ছিল। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, আমরা আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত।” এনএইচ/ |