শিক্ষক-বদলি: বিদায়ের শালীনতা ও প্রতিষ্ঠানের সম্মানরক্ষা
প্রকাশ: ০১ মে, ২০২৫, ০৮:৫৭ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ ||

কওমী মাদ্রাসার জগতে শিক্ষক পরিবর্তন এক পরিচিত বাস্তবতা। কখনও শিক্ষক নিজে বিদায় নেন, কখনও তাকে বিদায় নিতে বাধ্য করা হয়। বিদায়ের এই স্রোতে অনেক সময় এমন অশুভ প্রবণতা দেখা যায়—শিক্ষক বিদায়ের মুহূর্তে ক্ষোভকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিরা-উপশিরায় বিষ ঢেলে দেন। ছাত্রদের কোমল হৃদয়কে প্রলোভনের জালে জড়িয়ে নিজের পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন এবং ছাত্র ভাগিয়ে পাড়ি জমান অন্যত্র। এলাকার মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বশীলদের প্রতি বিভ্রান্তি ছড়ান। এ দৃশ্য শুধু দুঃখজনক নয়—এটি এক নির্মম আত্মঘাত।

বাস্তবতা হলো—যদি পরিচালকদের পক্ষ থেকে অন্যায়ও ঘটে, তবুও প্রতিষ্ঠান তো আল্লাহর। দায়িত্বশীলের ভুলের কারণে প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হানা বিবেকহীনতার পরিচয়। যে প্রতিষ্ঠান তাঁর জ্ঞান বিতরণের মঞ্চ ছিল, যে প্রতিষ্ঠানের ছায়ায় তাঁর শানে শিক্ষকতা করার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের মুখে বিদায়ের সময় আঘাত করা আত্মিক অজ্ঞতা। এতে ক্ষতি হয় প্রতিষ্ঠানের, বিকৃত হয় ইসলামের শিক্ষা ও মুসলিম সমাজের ঐক্য। প্রতিষ্ঠানের নুন খেয়ে, বিদায়ের সময় তার স্বরূপ নষ্ট করা নৈতিকতা ও আমানতের সুতো ছিড়ে ফেলার নামান্তর।

পক্ষান্তরে, পরিচালকরাও কখনও শিক্ষক বদলানোর নামে সীমালঙ্ঘন করেন। শিক্ষককে অপবাদ দিয়ে ছোট করা, ছাত্র-শিক্ষকদের সামনে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা, বেতন আটকে দেয়া—এসব আচরণ ইসলামি শিষ্টাচারের পরিপন্থী। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার থাকলেও সম্মানহানির অধিকার নেই। প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের নামে কারও চরিত্র হননের সুযোগ ইসলাম দেয়নি।

বিদায়ের এই সন্ধিক্ষণে উভয় পক্ষের উচিৎ, ব্যক্তিগত ক্রোধের বদলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে বড় করে দেখা। কারণ মাদ্রাসা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এটি দ্বীনের আলোকস্তম্ভ। এখানে হৃদয়ের ক্ষোভের আগুন জ্বালালে সে আগুন শুধুই গৃহদাহ ঘটায়।

মাদ্রাসা মানে কেবল একটি ভবন নয়; এটি আমানতের নাম। এ আমানতের প্রতি খেয়ানত, দ্বীনের ভবিষ্যতের প্রতি খেয়ানত। তাই শিক্ষক ও দায়িত্বশীল—উভয়কেই স্মরণ রাখা দরকার, বিদায়ের মুহূর্তেও নৈতিকতা ও তাকওয়ার পরীক্ষা চলে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তারাই প্রকৃত দ্বীনদার।


লেখকঃ ফাজেলে জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা।
শিক্ষকঃ পারখাজুরা কওমী মাদ্রাসা মনিরামপুর যশোর।

এমএইচ/