বহু বিবাহ: ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও সমকালীন বাস্তবতা
প্রকাশ:
২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব || বহু বিবাহ ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে একে নারীর প্রতি অবিচার বলে সমালোচিত করা হয়, অপরদিকে একে ইসলামের বৈধ ও সমস্যাসংশোধনমূলক বিধান হিসেবে তুলে ধরা হয়। বাস্তবতা হলো—ইসলাম এক্ষেত্রে না এর অসীম প্রচার করেছে, না সম্পূর্ণ নিষেধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে, বরং বহু বিবাহের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। কুরআন ও হাদীসের আলোকে বহু বিবাহ: কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন: এ আয়াতে বহু বিবাহের অনুমোদন দেওয়া হলেও কঠিন শর্ত হিসেবে ‘ইনসাফ’ করার বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হয়েছে। নবী করীম (সা.)-এর বহু বিবাহ ছিল, কিন্তু তিনি ছিলেন ইনসাফের সর্বোচ্চ আদর্শ। হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি একাধিক স্ত্রী রাখে এবং তাদের মধ্যে ইনসাফ করে না, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তার এক পাশ ঝুলে থাকবে।” (আবু দাউদ, হাদীস: ২১৩৩) ইসলাম বহু বিবাহকে ফরজ বা সুন্নত করেনি: ইসলাম বহু বিবাহকে না ফরজ, না ওয়াজিব, না সুন্নত করেছে; বরং একে ‘মুবাহ’ তথা প্রয়োজনভিত্তিক একটি সমাধান হিসেবে রেখে দিয়েছে। মুফতী তাকি উসমানী (দা. বা.) বলেন, “বহু বিবাহ ইসলামে একটি অপশন, কর্তব্য নয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই অপশনটি একটি বড় উপশম ও সামাজিক ভারসাম্যের কারণ হতে পারে।” (ফিকহুল বুয়ূ', ১/৪২১) প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজন বিবেচনায় বহু বিবাহ: হযরত আবুল লাইস সামারকন্দী (রহ.) বলেন, “যেখানে সমাজে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি, অথবা বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, সেখানে বহু বিবাহ সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার শরয়ি সমাধান হতে পারে।” (তানবীহুল গাফিলীন, পৃঃ ৩৪৮) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও, বিশেষত যুদ্ধ-পরবর্তী বা দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে, বহু বিবাহ অনেক সময় নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। কিছু বাস্তব যুক্তি ও প্রয়োগযোগ্য দিক: ১. নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান: বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা অসচ্ছল নারীদের জন্য বহু বিবাহ সম্মানজনক বিকল্প। ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, “যার ইনসাফ করার ভয় রয়েছে, তার জন্য একটিই উত্তম।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ২/২৩) প্রচারণাবাজদের বিভ্রান্তি এবং তার জবাব: বর্তমান সময়ে কিছু গোষ্ঠী বহু বিবাহের নামে এমন প্রচারণা চালায়—যেন এটি না করলে ইসলাম পূর্ণাঙ্গই হয় না। এ মনোভাব শরিয়তের সীমালঙ্ঘন এবং সমাজে অশান্তির এক মহা উৎস। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে: মধ্যমপন্থা কী হওয়া উচিত? মধ্যমপন্থা হলো— মুফতী মাহমুদুল হাসান গাঙ্গুহী (রহ.) বলেন, “একাধিক বিবাহের অনুমতি থাকলেও, কেবল সেই ব্যক্তি করুক, যার মাঝে নফস ও চরিত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসাফের বাস্তবতা আছে।” (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ৫/১৩৫) বহু বিবাহ ইসলামি শরিয়তের বৈধ একটি সমাধান। তবে এটিকে অন্ধ অনুসরণ বা অবজ্ঞার পাত্র বানানো নয়। ব্যক্তি, সমাজ ও সময়ের বাস্তবতা, ইনসাফ এবং জবাবদিহির চেতনায় পরিচালিত হওয়াই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম। ইসলাম যতটুকু অনুমতি দিয়েছে, ততটুকুই গ্রহণ করাই পরিপক্কতা। যারা অতিরঞ্জন করে প্রচার চালায়, তারা শুধু সমাজ নয়, ইসলামের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক স্ত্রীর সঙ্গে সুখী ও ইনসাফপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করাও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এরই একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। তাই বহু বিবাহ নিয়ে উগ্রতা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নেওয়া জরুরি। লেখক: ফাযেল, দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ এমএইচ/ |