নারী সংস্কার কমিশন ও প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি খেলাফত মজলিসের
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৪৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রস্তাবনা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। আজ এক বিবৃতিতে দলের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কর্তৃক যে ধৃষ্টতামূলক সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট পেশ করা হয়েছে, তাতে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পারিবারিক বিধানকে চরমভাবে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা হয়েছে। তারা তথাকথিত “অভিন্ন পারিবারিক আইন” এর মাধ্যমে সকল ধর্মের নারীদের বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নামে ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত বিধানাবলিকে বাতিল করে পশ্চিমা অনুকরণভিত্তিক একটি উলঙ্গ বল্গাহীন সমাজব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

তাঁরা বলেন, এই কমিশন এদেশের মানুষ, ধর্ম, সমাজ সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। এই চিহ্নিত মহলটি বিকৃত রুচিবোধে বেড়ে উঠা  ধর্ম-বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। 

নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত নারীর উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত বিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সমানাধিকারের নামে এসব বিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ ইসলামবিরোধী ও মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। অন্ধকার গলীর পথভ্রষ্টরা কখনও আলোর পথের যাত্রীর পথ প্রদশর্ক হতে পারে না । প্রকৃত অর্থে ইসলাম-ই নারীকে মুক্তি-প্রগতি ও মর্যাদার পথে পরিচালিত করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- ইসলামে নারীর জন্য নির্ধারিত উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাকের বিধান কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত, যা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে সমানাধিকারের নামে শরিয়াহকে পরিবর্তন করার উদ্যোগ কেবল ইসলামবিরোধী নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।

নেতৃদ্বয় বলেন,  বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ আখ্যায়িত করার প্রস্তাব ইসলামী বিয়ের মূল দর্শনকেই অস্বীকার করে। ইসলাম বিবাহকে একটি পবিত্র চুক্তি হিসেবে গণ্য করে, যেখানে উভয়ের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারিত। এই ধরনের প্রস্তাব পারিবারিক বন্ধনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। তারা আরও বলেন, ইসলাম পতিতাবৃত্তিকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। যৌনপেশাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া বা শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সরাসরি কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী এবং সমাজে ব্যভিচার, অনাচার ও নৈতিক অধঃপতনকে অবাধ করে দেবে।

তাঁরা অভিযোগ করেন, তথাকথিত ‘নারী অধিকারের নামে’ ইসলামি মূল্যবোধ, সামাজিক কাঠামো ও পারিবারিক বন্ধনকে বিনষ্ট করা একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। আমরা এই ষড়যন্ত্রকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করছি। 

নেতৃদ্বয় বলেন, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ইসলাম সমর্থন করে, তবে সংখ্যাবৃদ্ধির নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লিঙ্গকে প্রধান ভিত্তি করে একটি বিশৃঙ্খল কাঠামো দাঁড় করানো- ন্যায় ভিত্তিক  সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, কমিশনের প্রস্তাবনার মাধ্যমে নারীকে পণ্য করে তোলার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে এবং তাদের করুনার পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তাঁরা সরকারের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজে কমিশনের প্রস্তাবিত রিপোর্ট প্রচারের ঘোষণাও প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে ইসলামী শরিয়াহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তাঁরা দাবি জানান, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে গঠিত এই ধরনের কমিশন বাতিল করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট মহলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।

সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমা আদলে সমাজ রূপান্তরের প্রয়াস থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। আগামী ৩ মে’র মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নতুবা উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে।

এমএইচ/