নারী সংস্কার কমিশনের মানসিক সংস্কার করবে কে? মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
তাতে এ দেশের সংস্কৃতি শিক্ষা ও নৈতিকতা বিবর্জিত কতিপয় পশ্চিমা নোংরামী নারী অধিকারের নামে চাপানোর হেন চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাঝে কয়েকটি উদ্ধৃত করা হলো:
এক. যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।
মন্তব্য: বেশ্যাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘যৌন শ্রমিক’ সাব্যস্তের সুপারিশ কোন পেশাজীবীরা করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হলো এমন নিম্নরুচির লোকগুলো কীভাবে সংস্কার কমিটিতে জায়গা পায়?
দুই. অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
মন্তব্য: এটিতো গুজরাটের কসাই মোদির বিজেপির মিশন, যা ভারতে মুসলিমদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মোদিজির প্রেতাত্মারা কীভাবে এমন দুঃসাহস প্রদর্শন করে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। 
তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।
মন্তব্য: মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। 
চার. সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৬০০ করা ও এর মধ্যে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা ও অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরি।
মন্তব্য: একদিকে নারীদের অস্বাভাবিক অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য আলাদাভাবে তিনশত আসন রাখার প্রস্তাব। অপর দিকে অভিন্ন পারিবারিক আইন করে নারী পুরুষের সমতার আলাপ কী পরিমাণ দ্বিচারিতা ভাবা যায়?
সারাদেশের যেকোনো আসনে, চেয়ারম্যান, মেম্বারি থেকে এমপি পর্যন্ত সব পদেই নারীরা প্রার্থী হতে পারে। যেখানে পুরুষ প্রার্থী হতে পারে, সেখানে নারীরাও প্রার্থী হতে পারে। তাহলে নারীদের জন্য আলাদা স্বতন্ত্র আসন রাখাতো পুরুষের জন্য অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক। কারণ, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ প্রার্থী হতে পারে না। কিন্তু পুরুষের প্রার্থীতার স্থানে ঠিকই নারীরা প্রার্থী হতে পারবে। তাহলে বৈষম্যহীন আন্দোলনে পাওয়া সরকারের কমিশন কীভাবে এমন বৈষম্যমূলক প্রতিবেদন জমা দেয়?
দ্বিতীয় বিষয় হলো: যদি আসন ও প্রার্থিতা বিষয়ে নারীদের পুরুষের ভিন্ন আইন করার সুপারিশ হয়, তারাই আবার কীভাবে নারী পুরুষের পারিবারিক আইনে সমতার কথা বলে? এখানে সমতা আর ওখানে অসমতা এমন উদ্ভট আচরণ কেন?
আমাদের পরিস্কার কথা! রাষ্ট্র সংস্কার হোক এটা আমরা সবাই চাই। একথাও সত্য যে, এখন অধ্যাপক ইউনূস সরকার প্রায় একা হতে চলেছে। বিএনপি প্রথম থেকেই এ সরকারকে দ্রুত ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দিতে চাপ দিয়ে আসছে। দুদিন যাবত জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সমমনা ইসলামি দলগুলোও একই সুরে কথা বলছে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও অল্প কিছু দল এখনো সংস্কারের জন্য সময় চাওয়ার পক্ষে। এর মাঝে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক বড় অংশও এ সরকারকে আরও সময় দেওয়ার পক্ষে। সংস্কার করেই নির্বাচন হোক এ ইচ্ছে লালন করেন। 
কিন্তু এভাবে যদি সংস্কারের নামে পশ্চিমা নোংরামি চাপানোর চেষ্টা হয়ে থাকে, তাহলে সবাই একাট্টা হয়ে ড. ইউনূসের গদি নাড়াতে কালক্ষেপণ হবে না। 
তাই আমাদের পরিষ্কার দাবি হলো: 
১. নারী সংস্কার কমিশনের ধর্মীয় ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী এসব বিষয় অবিলম্বে ভুল ও বাতিল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। 
২. নারী সংস্কার কমিশনে বায়তুল মুকাররমের খতিব সাহেবের মাধ্যমে সম্পাদনা করিয়ে ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে।
৩. যারা এসব নোংরা বিষয় সংযুক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদেরও জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। 
সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান দেওয়া। নতুবা এর ফলাফল কিছুতেই ভালো হবে না।
লেখক: পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা