
| 	
        
			
							
			
			  তালিমী মুরুব্বি: তালিম ও তারবিয়তের ছায়াবৃক্ষ  
			
			
	
			
										প্রকাশ:
										১২ এপ্রিল, ২০২৫,  ০৬:৩৬ বিকাল
					 
			
			
			
			নিউজ ডেস্ক  | 
		
			
			
			
			
			 
	   
	      
 || ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ || একটি বৃক্ষ যেমন ছায়া দেয়, আশ্রয় দেয়, ফল দেয় এবং আশেপাশের পরিবেশকে নির্মল রাখে—একজন তালিমী মুরুব্বিও তেমনি তালিবে ইলমের জন্য এক ছায়াবৃক্ষসদৃশ আশ্রয়স্থল। ছাত্রজীবন শুধু বই মুখস্থ করা, মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া কিংবা ডিগ্রি অর্জনের নাম নয়। বরং এটি এক গভীর আত্মগঠনের সময়কাল—যেখানে বাহ্যিক জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের পরিশুদ্ধি, নফসের সংশোধন, চরিত্রের নির্মাণ ও আখলাকের গঠন আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে একজন তালিমী মুরুব্বির দিকনির্দেশনা, নজরদারি ও সোহবত হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তালিমের মাধ্যমে একজন ছাত্র জ্ঞান অর্জন করে, আর তারবিয়তের মাধ্যমে সে মানুষ হয়। এই তারবিয়ত তখনই পূর্ণতা পায়, যখন একজন অভিজ্ঞ, দরদি এবং রূহানী গভীরতা সম্পন্ন মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে ছাত্র গড়ে ওঠে। তার কোমল হাতের স্পর্শে একজন ছাত্র আদর্শবান হয়, আদব-শিষ্টাচার শিখে, জীবনকে আলোকিত করে। কিন্তু বর্তমান জামানার বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক। তালিমী মুরুব্বি শব্দটি অনেক ছাত্রের কাছে আজ বড় অচেনা, অপরিচিত। তারা হয়তো জানেই না যে, আত্মগঠনের এই সফরে একজন অভিভাবক কতটা জরুরি। একদিকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, অন্যদিকে আত্মতুষ্টি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা—এসব কারণে ছাত্ররা মনে করে, তাদের আর কাউকে দরকার নেই। তারা নিজেরাই নিজেদের সর্বোচ্চ ভাবতে শুরু করে। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। যত বড় মেধাবী হোক না কেন, ছাত্র যদি অভ্যন্তরীণ সংশোধনের প্রয়োজন না বোঝে, তবে তার ইলম কখনোই পূর্ণতা পাবে না। এমনকি সেই ইলম হয়তো একদিন তার অহংকারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যেটি তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তালিমী মুরুব্বীর সংস্পর্শে না থাকার কারণে পড়ালেখায় অনেক ভালো হলেও আদব কায়দায় থাকে শূন্যের কোঠায়, অনেকেই চিন্তা চেতনায় বাতিলের আদর্শ গ্রহণ করে সমাজে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে, লেখনী ও বক্তব্যসহ নানান কর্মকান্ডে সমাজে বিভ্রান্ত ছড়ায়। চলাফেরা, উঠাবসা, কথাবার্তায় কোন ভারসাম্যতা থাকে না, গোমরাহী চিন্তা-চেতনা আচ্ছাদিত করে ফেলে। এমনকি উস্তাদদের বিরুদ্ধেও জবানদারাজী ও কলামবাজি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তালিমী মুরুব্বির সংস্পর্শ না থাকলে ছাত্র নিজের ভুলগুলোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় না। নফসের ধোঁকা তাকে আত্মপ্রসন্ন করে রাখে, তার কণ্ঠে হয়তো ইলমের ঝলক থাকে, কিন্তু অন্তরে থাকে না আল্লাহভীতি। একজন তালিমী মুরুব্বি সেসব অদৃশ্য ব্যাধি চিহ্নিত করেন, যেগুলো ছাত্র নিজে কখনো টেরই পায় না। এই ছায়াবৃক্ষ—এটি প্রতিটি তালিবে ইলমের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এজন্য প্রয়োজন, ছাত্রদের মধ্যে আবার সেই পুরনো মানসিকতা জাগ্রত হোক—যেখানে তারা একজন তালিমী মুরুব্বিকে শুধুমাত্র পরামর্শদাতা নয়, বরং আত্মিক গঠনের একজন সঙ্গী ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে। তারা যেন আবার মুরুব্বির দরবারে এসে নিজেদের অন্তরের জঞ্জাল উপস্থাপন করে সংশোধনের আকুতি জানায়। তারা যেন বুঝে, তালিম ছাড়া যেমন গন্তব্য পাওয়া যায় না, তেমনি তারবিয়ত ছাড়া সেই গন্তব্য কখনোই নিরাপদ হয় না। আজকের ছাত্র যদি সত্যিকার আলেম হতে চায়—যে আলেম সমাজকে আলো দিতে পারে, নিজে পথ দেখাতে পারে—তবে তার আগে নিজের জীবনেই সেই আলো জ্বালাতে হবে। আর সে আলো আসে তালিমী মুরুব্বির সোহবতের ছায়ায় বসে, বিনয় ও দোয়ার সঙ্গে আত্মগঠনের সাধনায়। এমএইচ/  |