কাফিয়া জামাতের সিলেবাস নিয়ে তরুণ আলেমদের ১৫ প্রস্তাবনা
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৬:৫৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

সম্প্রতি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষার অন্যতম শ্রেণি ‘কাফিয়া জামাত’কে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। বোর্ড জানায় ‘আগামী বছর তথা বেফাকের ৪৮তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা (১৪৪৬ হি.) হতে অন্যান্য ক্লাসের সাথে সানাবিয়্যাহ-২ (কাফিয়া) জামাতের পরীক্ষাও কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে’।

কাফিয়া জামাতকে বোর্ড ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এ ক্লাসের সিলেবাস কী হবে তার তালিকাও প্রকাশ করে। প্রধান পরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী স্বাক্ষরিত কাফিয়া জামাতের সিলেবাস নিম্ন ছবি দ্রষ্টব্য :-

এ সিলেবাস নিয়ে নানা মহলে ওঠছে আলোচনা। এসময় প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আলেমগণ আওয়ার ইসলামের কাছে বোর্ডটির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাফিয়া জামাতের সিলেবাস নিয়ে নানা ভাবনা ও কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

৮ প্রস্তাবানা

আরেকটু ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে মারকাযুন নূর ও উম্মেহানী মাদরাসার মুহাদ্দিস, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ধর্মপাতার সহসম্পাদক আলেম সাংবাদিক মুফতি দিদার শফিক বলেন, বেফাকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। ওলামায়ে কেরামের আন্তরিক প্রচেষ্টা সফল হোক। মুরব্বিদের পরামর্শ মেনে বেকাকের কাজ আরো গতিশীল হোক। তবে বেফাকের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিনয় একটি  অনুরোধ করতে চাই। সিলেবাস প্রণয়নে জাতিকে একশ বছর এগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আরো কিছু বিষয়ে নজরে সানি করার অনুরোধ করছি।  যেমন-

১. সিলেবাসে দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি রাখা হলেও তা পরীক্ষা দিতে হবে না এমন না করে পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। এতে মাদরাসা শিক্ষার মান বাড়বে,  কমবে না।

২. সম্ভব হলে আরবির মতো বাংলা ও ইংরেজির পাঠদানকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়বে। মাদরাসা পড়ুয়ারা বহুমুখী কাজ করার সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে পারে। কিছু দুর্বলতা দূর করার সুযোগ পাওয়া যাবে। দাওয়াতি ক্ষেত্র প্রসারিত হবে।

৩. গুলিস্তা ও বাংলা (অষ্টম) সাহিত্য সওগাত সিলেবাসে থাকলেও বাংলার গুরুত্ব কতটুকু তা সবার জানা আছে। তাই বাংলাকে আরো গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করছি।

৪. উসুলুল ফিকহের মতো উসুলুল হাদিস ও উসুলুত তাফসিরও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

৫. সীরাত ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান, ইসলাম ও খেলাফত,  ভারতবর্ষে ইসলাম ও সূফিবাদ এ বিষয়ে নতুন বই রচনা করে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়গুলো স্পষ্ট না হলে এ দেশে ধর্মীয় শিক্ষার সামাজিকীকরণ সম্ভব হবে না। বিভিন্ন আলামত দেখে এটা সুস্পষ্ট এখন দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে।

৬. পুরো সিলেবাসে এক সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া ছাড়া আর কোনো সীরাতগ্রন্থ নেই। গ্রহণযোগ্য ও বিশদ বর্ণনার কোনো সীরাতগ্রন্থ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

৭.' ইসলামি সভ্যতা ও সামাজিকতা ' নামে বই রচনা করা হোক। স্কুলের শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ের জবাব ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে এমন একটি বই খুব দরকার।

৮. ৮০০ নম্বরের পরীক্ষা না নিয়ে ১২০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হোক।  

বেফাক বোর্ডের সম্মানিত দায়িত্বশীলগণ এ বিষয়গুলো নজরে রেখে সিলেবাসকে সময়োপযোগী করার জন্য আরো ভাববেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চার প্রস্তাবনা

বাইতুল মুমিন মাদরাসা উত্তরা ঢাকা’র সাবেক শিক্ষাসচিব, খতিব ও লেখক হাবীবুল্লাহ সিরাজ বলেন, ‘আমি বেফাকের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। অবশ্যই বেফাক কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের ছাত্রদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল-এর চিন্তা করেই। আমি এও বোধ করি তাঁরা দীর্ঘ সময় চিন্তা-গবেষণা করে এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে এবং সময়ের চ্যালেঞ্জকে মুকাবেলা করার নিমিত্তে কয়েকটি পরামর্শ দিতে পারি। যেমন-

১. সময়কে ধারন করার জন্য তাইসির থেকে কাফিয়া পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।

২. এসব ক্লাসেগুলোতে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।

৩. আকিদার একটি ছোট কিতাবকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং

৪. কওমি মাদরাসার ভর্তি সিস্টেম এর মধ্যে টিসি সিস্টেম চালু করা হোক।

এক প্রস্তাবনা

মারকাযুল আযিয কামরাঙ্গীচর ঢাকা'র মুহাদ্দিস  মাওলানা এহতেশামুল হক সাখী বলেন, 'কাফিয়া জামাতকে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করায় বেফাককে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা প্রস্তাবনা রাখছি,

১. 'শরহে তাহজিব' না পড়িয়ে বাংলা-ইংরেজি সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক করা হলে যুগোপযোগী হবে।

তিনি বলেন, একজন ভালো আলেমের জন্য আরবি, বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি এই ৪টি ভাষায় দক্ষ হওয়া অতীব প্রয়োজন৷ তাই, বাংলা-ইংরেজিকে অপশনাল না রেখে আবশ্যক করা উচিত।

দুই প্রস্তাবনা

এদিকে কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ আল-জামিয়াতুল মাদানিয়ার সাবেক মুহতামিম লেখক মাওলানা আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ বলেন, আমার মতামত হচ্ছে, সিলেবাসের এসব পরিবর্তনের আগে আমাদের দুইটা কাজ করতে হবে।

১. প্রথমত একটা শিক্ষানীতি করতে হবে। যেখানে স্পষ্ট থাকবে, আমরা কওমি সিলেবাস থেকে কোন্ পর্যায়ের আলেম তৈরি করতে চাই, যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কী কী দক্ষতায় ছাত্রদেরকে গড়ে তুলতে চাই, শিক্ষার স্তরগুলো কী কী, কোন স্তরে কোন কোন সাবজেক্ট পড়ানো হবে, কোন সাবজেক্ট কতটুকু পড়ানো হবে, কেন পড়ানো হবে? ফন পড়ানো হবে নাকি কিতাব পড়ানো হবে? মেয়েদের ব্যাপারে আমাদের শিক্ষাদর্শন কী হবে? তারা একই সিলেবাসে পড়বে নাকি ভিন্ন সিলেবাসে পড়বে?

২. দ্বিতীয়ত এইসব বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে মাদরাসার সর্বস্তরের শিক্ষকদের মাঝে জনমত তৈরি করতে হবে। এরপর সেই নীতিমালার আলোকে যেকোনো পরিবর্তন আনলে তা একদিক থেকে একটা বৃহৎ শিক্ষাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজ করবে, অন্যদিকে তা মেনে নেওয়াও সকলের জন্য সহজ হবে।

‘এই প্রক্রিয়া ছাড়া শুধু ঘরোয়া কিছু মিটিং করে জেনারেল শিক্ষার মানের সাথে তাল দেয়ার জন্য জামাত বাড়ানো-কমানোটা আমার কাছে কল্যাণকর কিছু বলে মনে হয় না’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাআমা/