পাকিস্তানে নির্বাচন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:৩৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা বাতিল চেয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি করবে।

বেঞ্চের অপর দুই সদস্য থাকবেন বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার ও বিচারপতি মোশারাত হিলালি। পিটিশনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ও ফেডারেল সরকারকে বিবাদী করা হয়েছে। এদিকে সরকার গঠনে পদ ভাগাভাগির কাজটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে পিএমএল-এন ও পিপিপি।

আলি খান নামে এক নাগরিক ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেছেন তিনি।

এছাড়া, এই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছেন আলি খান। ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে, নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ ৭৫টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসনে জয়লাভ করে। পিটিআইসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পরাজিত প্রার্থীরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে।

৮৫ আসনে ভোট চুরি: পিটিআই

জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ৮৫টি আসনে ভোট চুরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পিটিআই। গতকাল শুক্রবার পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় তথ্য সেক্রেটারি রওফ হাসান বলেন, দল ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভোট চুরির কারণে দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সাল মনে রাখা হবে।

ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে রওফ বলেন, ‘হিসাব অনুযায়ী ১৭৭টি আসন আমাদের পাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে আমরা পেয়েছি মাত্র ৯২টি আসন। আমাদের থেকে ৮৫টি আসনই চুরি করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তার দল এ বিষয়ে সাংবিধানিক ও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ৪৬টি আসনের তথ্য যাচাই করেছি। এর মধ্যে ৩৯টি আসনে গরমিল করা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য দলটির কাছে তিনটি উপায় ছিল।

তার মধ্যে একটি হলো ফর্ম ৪৫ ও ফর্ম ৪৭-এর মধ্যে অমিল রয়েছে। রওফের দাবি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে ভোটের সংখ্যার মধ্যেও বিশাল পার্থক্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভোট গণনা করে বিজয়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে পাকিস্তান জুড়ে আজ শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফসহ (পিটিআই) কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্রও

পাকিস্তানের সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কারচুপির খবরে নতুন করে উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনে ‘ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন ও দমন’ নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা এখনো প্রতিবেদন দিচ্ছেন। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনই উপসংহারে যেতে চাইছি না। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, জোট সরকার গঠনের চেষ্টা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

দ্রুত ভাগাভাগির চেষ্টা

ছয়টি দলের সমন্বয়ে দেশটিতে জোট সরকার গঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। এবার জাতীয় পরিষদের স্পিকার দাবি করেছে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি এই পদে আসতে পারেন। ডেপুটি স্পিকারের পদ পেতে পারে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ। এমকিউএম-পি সিন্ধু প্রদেশের গভর্নরের দাবি জানিয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

দেড় বছর টিকবে সরকার!

নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পাকিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা। জোট করে সরকার হলেও কত দিন টিকবে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এর মধ্যেই সরকারের মেয়াদ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (মেঙ্গল) বা বিএনপি-এমের প্রেসিডেন্ট সরদার আখতার মেঙ্গল। দেড় বছরের মধ্যে পাকিস্তানের নতুন সরকারের পতন হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বিএনপি-এমের সভাপতি সরদার আখতার মেঙ্গল। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় মেঙ্গল এ কথা বলেন। —জিও নিউজ ও ডন

এনএ/