ঈমানের মেহনত জিন্দেগিকে দামি করে
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:৪৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মাওলানা জুহাইরুল হাছান, হিন্দুস্তান ||

শুক্রবার বাদ আসরের বয়ান
আসরের পরের সময় অত্যন্ত কম কিন্তু এর দাম অনেক। এটি খুবই কিমতি সময়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা ফজর এবং আসরের পরে কিছু সময় আমাকে স্মরণ করো, আমি মধ্যবর্তী পুরো সময়ের জন্য তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবো।

মেরে মুহতারাম দোস্ত!
আসরের পরের এই সময় কিন্তু আমাদের জিন্দেগির মতোই। যেমন আমাদের জিন্দেগি অত্যন্ত কম। মাত্র কয়েক বছর। কিন্তু জিন্দেগির সময়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়কে আপনি চাইলে দামি ও কিমতি বানাতে পারেন আবার হেলায়-খেলায় নষ্টও করতে পারেন। যখন এই সময়গুলাকে দামি বানাবেন তখন পুরো জিন্দেগি দামি হয়ে যাবে। সময় বহমান। সময় চলে যাবে। যে সময় যায় তা আর ফিরে আসে না। হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন যখন নতুন সূর্য উঠে তখন সে এরকমভাবে বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহর বান্দা! দিন শুরু হয়ে গেছে। যা করার আজকেই এখনই করে নাও। এই সময় আর ফিরে আসবে না।’ তাই যে যত বেশি আমল করবে, তার জিন্দেগির সময় তত কিমতি হয়ে যাবে।

মেরে দোস্ত!
আমল কী? আমল হলো আমরা যা করে থাকি যেমন, খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, লেনদেন, বিয়ে-শাদি, মুআমালাত-মুআশারাত ইত্যাদি। এসব কাজ একজন ঈমানদার যেমন করে, একজন কাফেরও করে। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে অনেক তফাৎ। কাফের মুশরিক এই কাজগুলো করে থাকে নিজের খাহেশাত মোতাবেক। তার জিন্দেগি সে চালায় মনচাহি। যা ইচ্ছে হয়, যেভাবে ইচ্ছে হয় করে। কিন্তু একজন ঈমানদার এসব কাজ করে হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা মোতাবেক। নিজের খাহেশাত অনুযায়ী করে না। তাইতো আল্লাহর কাছে ঈমানদারের জিন্দেগি অত্যন্ত দামি। কেননা সে হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে জিন্দেগি পরিচালনা করে। মূলত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার জিন্দেগি হলো আমাদের জন্য আদর্শ এবং উসওয়াহ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আজহাব, আয়াত: ২১) তাই যে ব্যক্তি রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিন্দেগিকে নিজের জিন্দেগির মধ্যে কায়েম করতে পারবে সে দামি হয়ে যাবে। আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ না মেনে যে জিন্দেগি করবে তার জিন্দেগি আল্লাহর কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই জিন্দেগি বরবাত বলে গণ্য হবে। এর পাশাপাশি আমরা আমাদের জিন্দেগিকে যখন রাসুলের আদর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করবো তখন কিন্তু একিন ঠিক রেখে তা করতে হবে। আমলের সময় যদি আমাদের একিন ঠিক হয়ে যায়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের আমলে আল্লাহর প্রতি যতবেশি একিন তৈরি হবে, এই আমল ততবেশি দামি হবে। আর এই দাওয়াতের মেহনত কিন্তু আমাদের একিন ও ঈমান ঠিক করার জন্য।

মুহতারাম দোস্ত বুজুুর্গ!
আমরা আমাদের চারপাশ ছোট-বড় যা কিছু দেখি বা না দেখি সবকিছুই আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। আমাদের জন্য আল্লাহ এই দুনিয়ায় অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে রেখেছেন যেন এগুলোর মাধ্যমে আমরা ফায়দা হাসিল করতে পারি। আল্লাহর নেয়ামত এতো পরিমাণ বেশি যে, তিনি কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না; আল্লাহ অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু (সূরা নাহল, আয়াত: ১৮)। কিন্তু আমাদের বেখবরির কারণে আমাদের আশপাশের অনেক ছোট ছোট নেয়ামতকে আমরা গুরুত্ব দিই না। নেয়ামত মনে হয় না। কিন্তু যখন তা হারিয়ে ফেলি বা হারিয়ে যায় তখন ঠিকই এর গুরুত্ব অনুভব হয়। আসলে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতরাজির মাঝে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো ঈমান। এই দৌলত আল্লাহ যাকে দিয়েছেন, এই নেয়ামত আল্লাহ যাকে দিয়েছেন তার পুরো জিন্দেগি ধন্য। যার জিন্দেগিতে ঈমান আসবে তার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জিন্দেগি সুন্দর হয়ে যাবে। জান্নাত তার হয়ে যাবে। আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে, জিন্দেগি সুন্দর হওয়া, নিজেকে জান্নাতি হিসেবে তৈরি করা কিংবা জাহান্নামের লাকড়ি হিসেবে প্রস্তুত করা কিন্তু ব্যক্তির আমলের ওপর নির্ভর করে। জন্ম থেকে কেউ জান্নাতি বা জাহান্নামি হয়ে দুনিয়ায় আসে না। তার আমল তাকে সময়ের ব্যবধানে জান্নাতের মেহমান বা জাহান্নামের লাকড়ি বানিয়ে দেয়। যে একিন ও ঈমান সঙ্গে নিয়ে আমলের পাবন্দ করে যায় সে জান্নাতের মেহমান বনে যায়। তাই দুনিয়ার জিন্দেগিতে ইমান খুবই গুরুত্ব বহন করে।

মুহতারাম ভাই ও দোস্ত!
দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত ঈমানি মেহনত। এই মেহনত বড় প্রয়োজনীয়। খোদানাখাস্তা কেউ যদি কোনো কারণে কেউ ইমান ছাড়া বিদায় নেয় আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউ তাকে আর বাঁচাতে পারবে না। এমনকি যে যদি দুনিয়ার সবকিছু দিয়েও এই পাকড়াও থেকে বাঁচতে চায়, তাও সম্ভব হবে না। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন (সূরা বুরুজ, আয়াত: ১২)। তাই ঈমান নিয়ের আমাদেরকে আল্লাহর কাছে যেতে হবে।

মানুষ যখন মেহনত ছাড়া কোনো কিছু পায় তখন তার কাছে এর কোনো মূল্য থাকে না। সে এটাকে বেহুদা বা বেকিমতি মনে করে। যেমন আমরা ইমান পেয়েছি জন্মসূত্রে। আমাদের বাপদাদা মুসলমান। তাদের ঘরে আমরা জন্ম নিয়েছি। সেই হিসেবে আজ আমরা কোনো মেহনত ছাড়াই ঈমানের দৌলত পেয়েছি। তাই আমাদের কাছে এর কোনো মূল্য নেই। এতো দামি ঈমানকে আমরা নেয়ামত মনে করি না। কিন্তু আমরা যদি সাহাবায়ে কেরামের জিন্দেগির দিকে তাকাই তাহলে বুঝতে পারবো ঈমানের কত মূল্য। ঈমান কত দামি। তারা স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বেরাদর, মা-বাপ, জমিজমা, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ এমনকি নিজের জীবনের চেয়ে বেশি দামি মনে করতেন ঈমানকে। সারা দুনিয়ার মোকাবেলায় তাদের কাছে ঈমান দামি ছিল। এর বড় কারণ হলো, এই ঈমান তারা অর্জন করেছিলেন বড় কষ্টের পর। মেহনতের পর। আমরাও যদি ঈমানের কিমত বুঝতে চাই, মূল্য বুঝতে চাই তাহলে আমাদের ঈমানের মেহনত করতে হবে। ঈমানের মূল্য বুঝতে হবে।

মুহতারাম দোস্ত!
ঈমানের মূল্য কত? ঈমানের মূল্য এতো বেশি যে, এখন তো দুনিয়ায় কোটি কোটি মুসলমান আছে। যদি দুনিয়ায় শুধু একজন মুসলমান থাকে আর সবযদি কাফের মুশরিক থাকে তাহলে একমাত্র তার উসিলায় আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সব নেজাম কায়েম রাখবেন। দুনিয়া বাকি রাখবেন। কেয়ামত দেবেন না। তার উসিলায় সবাইকে রিজিক দেবেন। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলনেওয়ালা লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০)। হাদিসে আরও এসেছে যার দিলে সরিষার দানা পরিমাণ ইমান থাকবে তাকে আল্লাহ তায়ালা ১০ দুনিয়া সমান জান্নাত দেবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমানের মূল্য বুঝে চলার তাওফিক দিক। ঈমানের মেহনতের সঙ্গে যুক্ত রাখুক।

শ্রুতিলিখন ও অনুবাদ: কাউসার লাবীব

কেএল/