বন্ধ হলো আতশবাজি, ফরিদাবাদের ছাত্রদের সাহসী পদক্ষেপে শান্তিতে ঘুমালো এলাকাবাসী
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪, ১০:৪৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| কাউসার লাবীব ||

গতকাল ছিল পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব। সাকরাইন উৎসব উদযাপনের মূল কাঠামো ছিল ঘুরি উড়ানো। ‘মাঞ্জা’ দেওয়া ঘুড়ির সুতায় এক জন আরেক জনের ঘুড়ি কাটাকাটি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সারা দিন ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়ির ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি, ফানুস উড়ানো, সীমাতিরিক্ত আওয়াজে ডিজে পার্টি বা গান-বাজনা। এসব কারণে থার্টি ফাস্ট নাইটের মতো সাকরাইনে বিপাকে আর আতঙ্কে রাত কাটান পুরান ঢাকার অসুস্থ রোগী, মা-বোন, শিশু ও বৃদ্ধরা। দুর্বল চিত্তের শিশুরা সাউন্ডবক্সের আওয়াজে কেপে ওঠে বারবার।

তবে  গতকাল সাকরাইনের ডিজে পার্টির কারণে এলাকার মসজিদগুলোতে নামাজ পড়া ও স্বাভাবিকভাবে ঘরে বসে থাকা কঠিন হয়ে পড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার ছাত্ররা। তাদের পদক্ষেপে প্রশাসন সাড়া দিয়ে বন্ধ করে এসব অযাচিত আয়োজন।

ফরিদাবাদ মাদরাসার শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ যায়েদ খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম গতরাতে মূলত কী হয়েছিল? তিনি বলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বলা সেই ঘুরি ওড়ানো দিবস বলে যাকে সেটা হলো সাকরাইন। পৌষের শেষ দিন, জানুয়ারি ১৪/১৫ তারিখ পুরান ঢাকার অধিবাসীরা খুব করে পালন করে এটা। সাধারণত ভোরবেলা থেকেই ঘুরি ওড়ানো শুরু করে। বেলা বাড়ে তো ঘুরিতে ঘুরিতে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এই উৎসবটা শুধু ঘুরি ওড়ানোতে সীমাবদ্ধ থাকে না। প্রায় প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদে লাইটিং করা হয়। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়। বক্সের সাউন্ড থাকে বিকট। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় আতশবাজি, তারাবাজি ও নাচ গানের আয়োজন।

তিনি জানান, ফরিদাবাদ মাদরাসার চতুর্পাশের এই দৃশ্যটা দেখে আসছি গত তিনবছর ধরে। গতকাল সাকরাইন ছিলো। বক্সের সাউন্ড এতো বিকট ছিল যে আমরা নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারিনি। পুরো ঢাকা যেন কাঁপছিলো। অতিষ্ট হয়ে ফরিদাবাদের ছাত্ররা এশার নামাজ শেষেই নারায়ে তাকবিরের আওয়াজ তুলে। প্রথমে মাদরাসার ছাদে উঠে জোর গলায় আল্লাহু আকবরের ধ্বনি তুলে। দুয়েকটা ছাদের লাইট ও সাউন্ড বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু বাকিসব চলতে থাকে। তখন মসজিদে বেলালের মাইক ব্যবহার করে এই পার্টি ও নোংরামি বন্ধের আওজ করা হয়। কিন্তু তাতেও তারা না থামায় সকলে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়।

‘প্রথমে গেন্ডারিয়া থানার সামনে গিয়ে প্রশাসনকে এই পার্টি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বললে, তারা আমাদের থেকে দশ মিনিট সময় নেয় এবং কাজ শুরু করে। কিন্তু তাতেও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন ছাত্ররা আর মাদরাসায় ফিরে যায়নি। উল্টো পথ ধরে পোস্তগোলা পর্যন্ত প্রতিবাদী মিছিল করে। যে যে বাড়ির ছাদে পার্টি হচ্ছিলো ওই সমস্ত বাড়ির কাছে গিয়ে নারায়ে তাকবিরের আওয়াজে তাদেরকে প্রতিহত করে।’ –জানান যায়েদ খান

ফরিদাবাদ মাদরাসার এই শিক্ষার্থী জানান, শেষপর্যন্ত প্রশাসন আমাদের সাথে থেকে তা একেবারে বন্ধ করে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে নিরব হয়ে যায় পুরো পুরান ঢাকা। সস্তির নিঃস্বাস ফেলে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। হিন্দুদের মুখেও শুনেছি, ‘হুজুররা ভালো একটা কাজ করেছে। এই পদক্ষেপ আরও আগে নেওয়া দরকার ছিলো। আমরা অতিষ্ট হয়ে গেছি। ঘুরি উড়াবি ভালো কথা, কিন্তু বিকট আওয়াজে এসব বাজানোর কী দরকার!’

কেএল/