বিএনপি ভোট বর্জনকারীদের নিয়ে সর্বদলীয় ঐক্য করবে
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১১:১৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

সরকার পতনের চলমান আন্দোলন বেগবান ও নির্বাচন প্রতিহত করতে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে আলোচনা করতে তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। এ ছাড়া আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কোনো অবস্থাতেই অংশগ্রহণমূলক নয় বলে বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই পাতানো নির্বাচনের তফসিল বর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বও নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার প্রশ্ন তুলেছে। তারা সংলাপের আহ্বান জানালেও

সরকার তা আমলেই নেয়নি। ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। কারণ তারা বুঝে গেছে- নির্বাচনের নামে এখানে কত বড় প্রহসন হতে যাচ্ছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ দেশে জনগণের আন্দোলন কখনই বৃথা যায়নি। এবারও যাবে না।’

স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, আর যুগপৎ আন্দোলন না করে ভোটবর্জনকারী সবাইকে নিয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ বা অন্য কোনো নামে আন্দোলনের একটি প্ল্যাটফরমের কথা ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন বেগবান ও নির্বাচন প্রতিহত করতে ভোটবর্জনকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় প্ল্যাটফরম গড়তে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোট এবং নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকটি দল বা ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। যদি তারা নির্বাচন বর্জন করে, তা হলে তাদেরও এই প্ল্যাটফরমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলের কয়েকজন নেতা বলেন, এই প্ল্যাটফরর্রে নাম কী হবে বা কবে নাগাদ এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সভাপতি নুরুল হক নুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় আন্দোলন পরিষদ গঠন সম্পর্কে আলোচনা চলছে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক  বলেন, ‘সরকারের দিক থেকে নানা লোভ এবং চাপেও নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনরত ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিয়ে আমরা গত ৩০ নভেম্বর বৈঠক করে যুক্ত বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আন্দোলনরত দলগুলোর জন্য এটি বড় সফলতা। এখন মাঠের আন্দোলন কীভাবে আরও বেগবান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আন্দোলন গতিশীল করতে অন্যান্য নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর মূলত তিন তারিখকে সামনে রেখে আন্দোলনের কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। সেখানে নিজেদের সফল মনে করছেন বিএনপি নেতারা। সামনে আছে ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। যারা চাপে ও লোভে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। এই সময়ে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি রাখা হবে না। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশসহ বিকল্প কী কী কর্মসূচি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি ও সমমনা দলের একাধিক নেতা বলেন, রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের পর কী কর্মসূচি করা যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, সমাবেশসহ স্বাভাবিক কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাতে তা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলবে।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের জন্য গতকাল ঢাকায় আসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপি। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান ও মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধি দলকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করে তারা বলেন, ভোটে অংশগ্রহণকারীরা আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্র দল। কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে তাদের দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছায় ইইউর চার সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল। এ দলে রয়েছেন ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড (ইলেকশন এক্সপার্ট), আলেকজান্ডার ম্যাটাস (ইলেকটোরাল অ্যানালিস্ট), সুইবেস শার্লট (ইলেকটোরাল অ্যানালিস্ট) এবং রেবেকা কক্স (লিগ্যাল এক্সপার্ট)।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানায় ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোট।

এমএইচ