‘মুসলিম জাগরণের প্রবক্তা কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী’
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৩৭ রাত
নিউজ ডেস্ক

আব্দুর রউফ আশরাফ।। 

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৮৮০ খ্রীস্টাব্দে ১৩ জুলাই সিরাজগঞ্জ শহরে সৈয়দ আব্দুল করীমের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩১ খ্রীস্টাব্দে ১৭ জুলাই এই নশ্বর পৃথিবী থেকে চলে যান। এরেই মধ্যখানে মুসলিম জাগরণে এক কৃতিত্ব অর্জন করেন। যা বর্তমান যুগের শিক্ষার্থীদের অপরিচিত। অথচ বিদ্রোহী ও  মুসলামনদের জাগরণী কবি হিসাবে কাজী নজরুল ইসলামকে সবাই চিনে। কিন্তু বড় আফসোসের বিষয় সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে চিনাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। 

সেকালে বাঙ্গালি মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন বহু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মুসলমানদের পুনজাগরণের প্রবক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অনন্য। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকে মিহির, সুধাকার, ও ইসলাম প্রচার প্রভৃতি পত্রিকার নিয়মিত লেখক। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী দেশের স্বাধীনতার জন্যে, স্ব- সমাজের জাগরণের জন্যে তুমুল লড়াই করেছেন। মুসলমানদের উন্নতির জন্যে তিনি কথা বলেছেন। তিনি সাহিত্যে চর্চায় মুসলমানদের সবসময় উদ্ধুদ্ধ করতেন। 

তিনি অনল প্রবাহসহ ২৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর সর্বপ্রথম গ্রন্থ হল 'অনল প্রবাহ ১৯০০ সালে প্রকাশ হয়,  দ্বিতীয় সংস্করণ হয় ১৯০৮ সালে। প্রকাশের সাথে সাথেই
বৃটিশ সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহর অভিযোগ তুলা হয়। বিচারে দু বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন। 

সেকালে হিন্দু বরেণ্য সাহিত্যকরা ঐতিহাসিক মুসলিম চরিত্রসমূহ বিকৃত ও কলঙ্কিত করে তাদের উপন্যাস চিত্রিত করতে শুরু করেন। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং এর জবাব দিতে গিয়ে একাধিক ক্রমে চারটি উপন্যাস রায় নন্দিনী,তার বাঈ,ফিরোজা বেগম ও নূরুদ্দীন নামক উপন্যাস রচনা করেন।  

আনন্দের বিষয় হল এই যে, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা যখন দেশব্যাপী আলোড়ন জাগায় সিরাজী তখন কাজী নজরুল ইসলামকে 'দশ টাকা মানি অর্ডার করে সম্মাননা জানান। এই তরুণ কবির মধ্যে তিনি বাঙালির জাগরণের অগ্রদূতকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামও সিরাজীকে মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করতেন। কাজী নজরুল ইসলাম যখন সিরাজগঞ্জে যান তখন সিরাজী বেঁচে নেই। নজরুল ইসলাম তখন বলছিলেন সিরাজগঞ্জ আসিয়া সর্বপ্রধান অভাব অনুভব করতেছি- আমাদের মহানুভব নেতা বাংলার মুসলিম সমাজের অগ্রদূত তারুণ্যের নিশানবরদার সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী সাহেবের। সিরাজগঞ্জের সিরাজীর মৃত্যুর সঙ্গে বাংলার সিরাজ বাংলার প্রদীপ নিভিয়া গিয়াছে। অনল প্রবাহের সেই অমর কবির কন্ঠে আর শুনিতে পাইব না-

উঠ তবে ভাই উঠ মুসলমান
জাগ তবে সবে ধরি নব প্রাণ। 

এ কথাগুলোতে বুঝা যায় সিরাজী নজরুলের কত প্রিয় ছিলেন তা ফুটে ওঠে। জাতীয় জীবনে তাঁর অবদানও তেমনি বুঝা যায়। আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক,সাহিত্যে ও  মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসৈনিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রায় এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিচিত। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর গ্রন্থসমূহ পাঠ করলে এবং বিজ্ঞদের কাছে ইসমাইল হোসেন সিরাজী সম্পর্কে গল্প করলে আশা করি সহজে পরিচিত হতে পারবো।