যে সব খাবার খেতে পছন্দ করতেন নবীজি সা.
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৪:৫৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মাওলানা নূর আলম ||

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা.-কে অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে উভয় জাহানে শান্তি ও সফলতা। আল্লাহতাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)

স্বাস্থ্য অমূল্য সম্পদ। স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে চাইলে এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। নবীজি সা. নিজের সুস্থতার প্রতি যত্নশীল ছিলেন। এ জন্য তিনি নিয়ম মেনে চলতেন।

বিভিন্ন হাদিসে নবীজির পছন্দের খাবারের কথা এসেছে।

নবীজি সা. যেসব খাবার পছন্দ করতেন -

১.খেজুর

নবী করিম সা. এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। খেজুর যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে অপরিসীম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সা.-কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩০)।

অন্য হাদিসে আছে, প্রিয়নবী সা. বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই।’ এমনকি প্রিয়নবী সা. সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। খেজুরে রয়েছে খনিজ লবণের উপাদান যা শরীর সতেজ রাখে।

২. আঙুর

নবীজি সা. আঙ্গুর খেতে ভালোবাসতেন। আঙুরের পুষ্টিগুণ ও খাদ্যগুণ অপরিসীম। এটির উচ্চ খাদ্য শক্তির কারণে এটি থেকে আমরা খুব দ্রুত শক্তি পাই। আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তাছাড়াও এটি আমাদের কিডনির জন্য খুবই উপকারী।

৩. কিসমিস

কিসমিস অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। এটির পুষ্টিগুণও অনেক। রাসূল সা. এর পছন্দের খাবারের তালিকার মধ্যে কিসমিস একটি। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. এর জন্য কিসমিস ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)।

৪. ডুমুর বা ফিগস

ডুমুর অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণসম্পন্ন। এটি মহানবী সা. এর খুবই প্রিয় ছিল। যাদের পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদের জন্য ডুমুর একটি অত্যন্ত উপযোগী খাবার। এতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

৫. বার্লি বা জাউ

 বার্লি হলো গমের মতো এক প্রকার শস্য। এটি মহানবী সা. এর প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। রাসূল সা. বার্লি দিয়ে রুটি বানিয়ে খেতেন। এবং তার সঙ্গে সবসময় একটি করে খেজুর খেতেন। তাছাড়াও এটি জ্বরের এবং পেটের পীড়ার জন্য উপকারী।

৬. মাখন

মাখন প্রচুর পুষ্টিসম্পন্ন। এটি দেহের তাপ ও কর্মশক্তি বাড়ায়। তাছাড়াও এটি দেহের প্রোটিনকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। হযরত ইবনাই বিসর আল মুসলিমাইন রা. থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন, ‘একবার আমাদের ঘরে রাসূলুল্লাহ সা. আগমন করেন। আমরা তার সম্মুখে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করি। তিনি মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।’ (তিরমিজি : ১৮৪৩)।

৭. মিষ্টি ও মধু

মিষ্টি খুবই মজাদার একটি খাবার। হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৫১১৫; মুসলিম, ২৬৯৫)।

মধুর নানা পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণ রয়েছে। মধুকে বলা হয় খাবার পানীয় ও ওষুধের সেরা। ডায়রিয়া হলে হালকা গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (হাদিস নম্বর : ৫৩৫৯)।

৮. ঘি মাখা রুটি

ঘি আমাদের শরীরের তাপ ও কর্মশক্তি বাড়ায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন...। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৪০)।

৯. দুধ

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল আ. আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দু’টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল আ. বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি: ৩১৬৪, তিরমিজি, ২১৩)।

১০. সারিদ

সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। আর হায়স হলো মাখন, ঘি ও খেজুর দিয়ে যৌথভাবে বানানো খাবার। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সা. এর কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অত্যন্ত প্রিয় ছিল।’ (আবু দাউদ : ৩৭৮৩)।

১১. মোরগ

হযরত জাহদাম রা. থেকে বর্ণিত, একদিন আবু মুসা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। হজরত আবু মুসা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো তোমার? লোকটি বলল, মোরগকে আমি বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমার অপছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না। হযরত আবু মুসা তাকে বললেন, ‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসূল সা.-কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে।’ (বুখারি: ৫১৯৮, ৪৬৬২; মুসলিম: ১৬৪৯)।

১২. সামুদ্রিক মাছ

মহানবী সা. সাগরের মাছ পছন্দ করতেন। তাছাড়াও সাগরের মাছে রয়েছে খনিজ লবণ এবং এটি চোখের জ্যোতি বাড়ায়। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা. এর একটি দীর্ঘ হাদিস আছে। হাদিসটি বুখারি (৪৩৬১) ও মুসলিম (১৯৩৫) শরিফে বর্ণিত হয়েছে।

১৩. তরমুজ ও শসা

তরমুজ ও শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এ দু’টি খাবার গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তাজা) খেজুর খেতেন। (বুখারি : ৫১৩৪, তিরমিজি : ১৮৪৪)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সা.-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মুসলিম : ৩৮০৬)।

১৪. লাউ বা কদু

লাউয়ের পুষ্টিগুণ অনেক। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে। তাছাড়াও এটি আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসূল সা.-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী সা. এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসূল সা. এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসূল সা. প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪)। লাউ খাওয়া সুন্নত।

১৫. ডালিম-বেদানা

বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাদ্যগুণের পাশাপাশি এটার ধর্মীয় একটি দিক আছে। প্রিয়নবী সা. বলেছেন, এটা আহারকারীদের শয়তান ও মন্দ চিন্তা থেকে বিরত রাখে।

১৬. খাসির পায়া

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসূল সা. কুরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’

১৭. জয়তুন

রাসূল সা. বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখ। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (তিরমিজি : ১৮৫১)।

এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়, রাসূল সা. মরুভূমির এক ধরনের পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ও সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি পছন্দ করতেন।

এসব খাবার প্রিয়নবী সা. আহার করতেন। দেড় হাজার বছর পর আজকের বিজ্ঞান গবেষণা করে দেখেছে নবীজী সা. এর বিভিন্ন খাবারের গুণাগুণ ও উপাদান অত্যন্ত যথাযথ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নবীজী সা. এর পছন্দ মোতাবেক চলার তাওফিক দান করুন।

টিএ/