শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ।। ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিরোনাম :
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স পুরুষের ৩৫, নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ মাজার ও ধর্ম ব্যবসা সমাচার ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে নিহত ইমাম খুলনায় বিদ্যুতের মিটার রেন্ট ও ডিম্যান্ড চার্জ প্রত্যাহার দাবি ‘দ্বীনের জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধের বিকল্প নেই’ এমন দেশ গড়তে চাই, যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায় : প্রধান উপদেষ্টা ‘নবগঠিত প্রতিটি কমিশনে ৯২ ভাগ মুসলমানের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের’ কর অব্যাহতি পেল গ্রামীণ ব্যাংক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন দুই শতাধিক মুরব্বি আলেমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বেফাকের মজলিসে আমেলার বৈঠক

ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতামত : সংঘাত নয় সংলাপ চাই


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

কাউসার লাবীব, বার্তা সম্পাদক

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। আগামী বছরের প্রথম মাসেই নির্বাচন। এরই মাঝে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বড় দু’দলের (আওয়ামী লীগ, বিএনপি) মাঝে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। এই অস্থিরতা কোথায় গিয়ে থামবে সেই প্রশ্ন এখন জনমনে।প্রতিবার নির্বাচন এলেই কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়? কেন জান-মালের ক্ষতি হয়? কেন জীবন বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষের? এর সমাধানই বা কোন পথে? এসব বিষয়ে কথা বলেছিলাম দেশের তিন ইসলামী রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতার সঙ্গে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতিও জটিল, সময়ও জটিল। জটিল এই পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতা করার মত কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে যারা মধ্যস্থতার কথা বলছেন তারাও বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তাছাড়া তারা তো কখনো ইসলামের পক্ষের শক্তি না। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আল্লাহ যদি হেফাজত না করেন, সবকিছু কোন দিকে যাচ্ছে, কিছুই বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আগে দেশের রাজনীতির পরিবেশ অস্থীতিশীল হলে তা সামাল দেওয়ার জন্য সব দলেই কিছু উদারমনা নেতা ছিলেন। আমাদের ইসলামিক অঙ্গনে ছিলেন খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, মাওলানা মহিউদ্দীন খান, মুফতি আমিনী রহ. এর মতো দরদি ও সাহসী নেতা। তাছাড়া আওয়ামী লীগে ছিলেন মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ এবং বিএনপি’র ছিলেন সাইফুর রহমান। এরকম  উদারমনা পলিটিশিয়ানের এখন খুব দরকার ছিল; যাদের কমান্ড মানবে পুরো দল। এখন তো কমান্ড মানানোর মতো দেশ প্রেমিক নেতা বড় দুই দলের মাঝে নাই বললেই চলে।

তার মতে, সংঘাতময় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় দু’দলকেই উদ্যোগী হওয়া দরকার। সংলাপ দরকার। সমঝোতা দরকার। কিন্তু এখন এগুলো আশা না করাই ভালো। কারণ, এখন সবাই একক স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে।

 

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমত বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য হলো- স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হলেও আমাদের দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার জন্য এখনো কোনো সুন্দর পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি। আমরা মনে করি এর জন্য ইতিপূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল এবং বর্তমানে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই দায়ী। এটার সমাধানের জন্য প্রত্যেকেই ইচ্ছে করলে ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু এটা তারা করেনি। দ্বিতীয়ত, এপর্যন্ত যারাই ক্ষমতার চেয়ারে বসেছে, তাদের প্রত্যেকেরই টার্গেট ছিল আমি আজীবন-আমরণ ক্ষমতায় থাকবো। কোনদিন ক্ষমতা ছাড়বো না। এ সমস্ত কারণেই সাংবিধানিক বা স্বাভাবিক যে নিয়মকানুনগুলো আছে সেগুলোকে নতুন করে আইন করে নিজেদের মতো করে তারা সাজিয়ে নিয়েছে। নিজেদের চেয়ারটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য প্রত্যেকেই পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবিধান বা আইনের দোহাই দিলেও তাদের এসব কাজ অসাংবিধানিক, অমানবিক, অযৌক্তিক এবং অবাস্তব।

বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক পাঁচ বছর পর ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এদেশে যে পরিমাণ মানুষ জীবন দেয়, যে পরিমাণ রক্তপাত হয় এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এর আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচনে যারা হেরেছে তারা দাবি করেছে যে, নির্বাচনে সূক্ষ কারচুপি হয়েছে। এর জন্য পীর সাহেব চরমোনাই বা ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনের। যে সরকারে বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারাও থাকবে এবং নিবন্ধিত যত দল আছে তাদের সভার অংশগ্রহণ থাকবে সমহারে।

তার মতে, এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে সবাই মিলে যদি একটি নির্বাচন করা যায়, তাহলে সেটি মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। এবং সামনে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তা থেকে দেশ রক্ষা পাবে।

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনি তো ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেন। তার এখন উচিত হবে সুন্দর একটা গেটওয়ে তৈরি করে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়েছে, আমাদের কাছে আওয়ামী লীগও নিরাপদ, বিএনপিও নিরাপদ, জাতীয় পার্টিও নিরাপদ। এদেশের সকল মানুষ আমাদের কাছে নিরাপদ।

 

‘আমরা মনে করি, পীর সাহেব চরমোনাই যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন এটি দেশের সকল রাজনৈতিক দলের জন্য কল্যাণকর। এটা মেনে নিয়ে সরকারি দল একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ করলেই জনমনে যে ভীতিকর পরিস্থিতি আছে সেটি কেটে যাবে।’ -যোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা

অপরদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি দেশের সকল রাজনৈতিক সচেতন মানুষের। এই দাবি নিয়ে আন্তঃসংলাপ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হওয়া উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপই হতে পারে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সমাধান।

তার মতে, দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য যত রকম পদক্ষেপ নেয়া উচিত বর্তমান সরকারের সেগুলো নিতে হবে। তাদেরকে জনগণের কথা মাথায় রাখতে হবে। জনগনের দাবিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সংবিধান পরিবর্তন করার দরকার হলে করবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নিলেই তো জনগণ ঠান্ডা হয়ে যায়। সেই নির্বাচনে তারা যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে আসবে।

তবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ এডভোকেট শাহীনুর পাশা তার কথার শেষে কিছু আশার বাণী শুনিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা ইসলামী রাজনীতি করি তারা একসঙ্গে হয়ে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাই। ইতোমধ্যেই জমিয়তের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও দেরিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তবে আশা করি বিষয়টি ভালো ফল বয়ে আনবে।

হুআ/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ