শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

কার কথা, কোন কথা গ্রহণ করবো: হজরত উবায় বিন কা‘ব রা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত উবায় বিন কা‘ব রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে একলোক আসলো। এসে বললো, আপনি আমাকে নসিহত করুন। সংক্ষিপ্ত উপদেশ করুন। যেনো আমি আবার ভুলে না যাই। ওইলোককে তিনি বললেন, ‘তুমি সত্যকে গ্রহণ করো। সত্য বহনকারী যে-ই হোক না কেনো। হোক দূরের কেউ বা তোমার শত্রু। আর বাতিলকে প্রত্যাখান করো।

বাতিল যে-ই নিয়ে আসুক না কেনো। হোক না সে তোমার একান্ত বন্ধু। কাছের কেউ। আর তাকওয়ার পরিমান অনুযায়ী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করো। আর জীবিত কারো উপর ঈর্ষা করো না। তবে মৃত ব্যক্তিরা যে বস্তুর বিষয়ে ঈর্ষা করে তুমি সেই বিষয়ে ঈর্ষা করতে পারো।’ (আর মৃত ব্যক্তিরা নেক কাজের জন্য ঈর্ষা করে থাকে, সুতরাং জীবিত কারো উপর ঈর্ষা করতে হলে, তুমি তার নেক কাজের উপর ঈর্ষা করতে পারো)

লেখক বলেন, উক্ত উপদেশটি একটি নীতিকথা। কারণ, মানুষ কথা এবং ব্যক্তি দুটিকে একত্র করে ফেলে। অথচ, দুটি ভিন্ন বিষয়। কথা যদি সত্য হয় তাহলে সেটিকে গ্রহণ করা। কে বললো সেদিকে না তাকানো। আর কথা বাতিল হলে সেটিকে প্রত্যাখান করা। কে বললো সেদিকে না তাকানো। গ্রহণ করা বা না করা নির্ভর করবে কথা হক না নাহক এর সাথে। ব্যক্তির সাথে নয়। হ্যাঁ, ব্যক্তি নির্ভরতারও একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটি ভিন্ন কথা।

তবে অনেকেই উক্ত নিয়মটির বিপরীত কাজও করে থাকেন। যার সাথে মহব্বত আছে সে নাহক কথা নিয়ে আসলেও সেটিকে গ্রহণ করে বসে। এটি একদম ভুল কাজ। সুস্পষ্ট ভুল। কারণ, নাহক সেটি অগ্রহণযোগ্য। তা মহব্বতের মানুষে নিয়ে আসলেও অগ্রহণযোগ্য। যারা এই ধরনের কাজ করে তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آَبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَامُرُ بِالْفَحْشَاءِ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ আর যখন তারা (কাফেরগণ) বেহায়াপনার কাজ করে তখন বলে আমরা আমাদের পূর্বসূরিদেরকে এরূপ কাজ করতে পেয়েছি। আর আল্লাহ তায়ালাই আমাদেরকে এমন কাজ করতে আদেশ করেছেন। আপনি বলুন! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নির্লজ্জ কাজের আদেশ করতে পারেন না। তোমরা আল্লাহ তায়ালার সম্পর্কে এমন কথা বলছো যা তোমরা জানো না? সুরা আরাফ: আয়াত-২৮।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آَبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا এই মিথ্যাপ্রচারকে قُلْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَامُرُ بِالْفَحْشَاءِ উক্ত কথার দ্বারা প্রত্যাখান করে দিয়েছেন।

লেখক বলেন, বাতিলরাও হক কথা বলতে পারে এর দৃষ্টান্ত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে রমজান মাসে জাকাতের মালের পাহাড়ার দায়িত্ব প্রদান করেন। একলোক (হঠাৎ করে) এসে হাত দ্বারা থাপিয়ে খাবার নেওয়া শুরু করলো।

আমি তাকে ধরে ফেলি এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে আসবো বলি। (এই কথা শুনে) সে বললো, আমার অনেক সন্তান-সন্ততি আছে। আমি অভাবী মানুষ। আমার অনেক জরুরত। (এভাবে সে কাকুতি-মিনুতি করতে শুরু করলো।

তার উপর আমার দয়া হলো) আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আমি সকাল করলাম। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! গত রাতে তোমার বন্দি কী করেছে? আমি বললাম, সে প্রচণ্ড অভাবের কথা বললো।

তার অনেক সন্তান-সন্ততির কথা বললো। এসব শুনে তার উপর আমার দয়া চলে আসলো। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। (আমার কথা শুনে) তিনি বললেন, শোনো! সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। শীঘ্রই সে আবারো আসবে।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনে আমি নিশ্চিত হলাম, সে শীঘ্রই আসবে। তাই আমি সচেতনার সাথে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। সে প্রথম দিনের মতো আবারো এসে খাবার সংগ্রহ করতে শুরু করলো। আমি তাকে ধরে ফেলি।

বলি, আজ তোমাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অবশ্যই নিয়ে যাবো। সে বলতে শুরু করলো, আমি অভাবী মানুষ। আমার অনেক জরুরত। অনেক সন্তান-সন্ততি আছে। আমাকে ছেড়ে দাও। আর আসবো না।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এবারো তার কথা শুনে তার উপর আমার দয়া চলে আসে। আমি তাকে ছেড়ে দিই। প্রথম দিনের ন্যায় আজো হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে বন্দির কথা জানতে চান। আমিও প্রথম দিনে যে উত্তর দিয়েছিলাম সেটিই বলি। দ্বিতীয় দিনও হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শোনো! সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে শীঘ্রই আবারো আসবে।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তৃতীয় দিন আমি সচেতনতার সাথে পাহাড়া দিয়ে চলছি। আর তাকে পর্যবেক্ষণ করছি। সে আসলো। এসেই খাবার সংগ্রহ করতে শুরু করলো। আমি তাকে ধরে ফেলি। এবং বলি, আজ তো তোমাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়েই যাবো। কারণ, তিন দিন ধরে তুমি বলেই চলছো আর আসবা না। অথচ, তুমি ঠিকই চলে আসো। সুতরাং আজ আর ছাড় নেই।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (এবার সে নিজেকে মুক্ত করার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে) সে বললো, তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। (ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে) আমি তোমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দিবো, যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটি কী?

সে বললো, তুমি যখন বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে নিবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী তোমাকে সর্বদাই পাহাড়া দিবে। এবং সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছেও আসতে পারবে না।

হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (তার কথা শুনে) আমি তাকে ছেড়ে দিই। যখন সকাল করি তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দি কী করেছে? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে আমাকে কিছু কালিমা শিখিয়েছে যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাকে উপকৃত করবেন।

তাই আমি তাকে ছেড়ে দিই। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কালিমাগুলো জানতে চান। উত্তরে আমি পূর্ণ ঘটনাটি শুনাই। আমার কথা শুনে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শোনো! নিশ্চয় সে তোমাকে (যা বলেছে) সত্য বলেছে। যদিও সে মিথ্যাবাদী। হে আবু হুরায়রা! তিন রাত যাবত তুমি যার সাথে কথা বলছো সে কে জানো নাকি? উত্তরে বলি, জি, না। তিনি বললেন, সে শয়তান ছিলো।

লেখক বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত হাদিস শরিফ দ্বারা উম্মতকে হক কথা শয়তান থেকে আসলেও গ্রহণ করার শিক্ষা প্রদান করেছেন। যদি শয়তান থেকে হক কথা গ্রহণ করার সুযোগ থাকে, তাহলে অন্যান্য বাতিল থেকে তো হক কথা আরো উত্তমভাবে গ্রহণ করা যাবে। তবে শর্ত হলো, কথাটি ন্যায় ও হক হতে হবে।

লেখক বলেন, উক্ত তরিকার উপর পরবর্তী আহলে ইলমগণও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। একলোক তাঁর কাছে এসে বললো, আমি এখন রওয়ানা হবো সুতরাং আপনি আমাকে কিছু পাথেয় দিয়ে দিন। (অর্থাৎ, আমাকে কিছু উপদেশ প্রদান করুন)

হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘শত্রু বা দূরের কেউও যদি তোমার সামনে হক বিষয় পেশ করে তবে তুমি তা গ্রহণ করো। প্রিয় বা কাছের কেউও যদি অন্যায় বিষয় পেশ করে তবে তুমি তা প্রত্যাখান করো।’

হজরত ফুজায়ল বিন ইয়াজ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে বিনয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো। উত্তরে তিনি বলেন, ‘হকের সামনে মাথা নত করা এবং তা মেনে নেওয়া। আর হক বিষয় যে কেউ বলুক তা শুনলে গ্রহণ করে নেওয়া।’

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ