বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ইমানের দৌলত আল্লাহর অনন্য দান: মাওলানা খুরশিদুল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

চলছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাদ ফজরে বয়ান করেন তাবলিগের মুরব্বি, পাকিস্তান থেকে আগত মাওলানা খুরশিদুল হকআওয়ার ইসলাম পাঠকের জন্য বয়ানটি অনুবাদ করেছেন মুফতি সারোয়ার হোসেন

হামদ সালাতের পর, আল্লাহ তায়ালা করীম জাত যিনি আমাদের দ্বীন দিছেন। আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়ায় সকল মানুষ কীভাবে সফলকাম হতে পারে সেজন্য একটা তরিকা দিয়েছেন সেটা হলো দীন। এই জন্য মানুষকে আল্লাহ পয়দা করছেন যে, তাকে জান্নাত দান করবেন। আর মানুষের সফলতা রেখেছেন একমাত্র দীন মানার জন্য। এই বিষয়ে রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ তোমাদের সুরত দেখেন না। বরং তোমাদের দিলের একিন দেখেন। আর তোমাদের শরীর থেকে যে আমল বের হয় এটা দেখেন। আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মালও দেখেন না বরং আল্লাহ তোমাদের সর্বদা তোমাদের একিন আর আমল দেখেন।

আল্লাহ কারিম জাত। আল্লাহ তায়ালা কামিয়াবির আসবাব সবাইকে সমান দিয়েছেন। যেমন দুটা পা দিয়েছেন চলার জন্য, কান দিয়েছেন সোনার জন্য। আর এই জন্য আল্লাহ তায়ালা কাউকে মাল দেন, আবার কাউকে মাল দেন নাই। কেননা সবাই ধনি হবে আবার গরিব হয়ে যাবে এটা সম্ভব না। বরং এটা সম্ভব যে সবাই ইমান ওয়ালা হবে। এটা সম্ভব কেননা ধনী ব্যক্তি সেও সফল কাম হতে পাবরে যদি তার ইমান থাকে, গরিব ব্যক্তি তার মাঝে ইমান থাকে সেও আল্লাহকে রাজি করতে পারবে। আর দুনিয়ায় মাল আসবাব এটা আল্লাহ রাজি খুশি করতে বাধা না। আর যাদের মাল দেননি তারও আল্লাহকে রাজি খুশি করতে বাধা না। কেননা দুনিয়াতে অনেক নবী আ. বাদশা ছিলেন। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দার ধারনা অনুযায়ী তার সাথে মুয়ামালাত করেন। এই জন্য দিলের একিন ঠিক হয়ে যায় যে দুনিয়ায় সমস্তকিছু করনেওয়ালা জাত আর দুনিয়ায় কোন কিছু কোন কিছু করতে পারে না যদি আল্লাহ না করেন ।

যেমন ইব্রাহিম আ. আল্লাহ তায়ালার একাত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন আর নমরুদ ইব্রাহীম আ.কে আগুনে পুরানোর জন্য চেষ্টা করছে এবং তাকে আগুনে নিক্ষেপ করছে। আগুন তাকে পুড়াতে পারে নাই। কেননা ইব্রাহিম আ. এর একিন ছিলো যে আগুন কাউকে পুড়াতে পারে না। যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে। যখন আগুন জালানো হলো তখন ফেরেশতাগণ সাহায্যের জন্য এলো। আর ইব্রাহীম আ. বললেন তোমাকে কি আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন? তখন ফেরেশতা বললেন, না। আর ইব্রাহীম আ. বললেন আমার জন্য আমার আল্লাহই যথেষ্ট।

সাহাবারা এক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়া নির্বাচন করলেন। রাসুল সা. এর জন্য একটি গাছ নির্বাচন করলেন আর সেখানে রাসূল সা. বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আর তখন এক কাফের এসে রাসূল সা. এর তরবারি গাছের সাথে জুলানো তা কাফের নিয়ে বললো, মুহাম্মাদ তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? তখন রাসুল সা. বললেন, আল্লাহ। আর একথা বলার সাথে সাথে কাফেরের হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। তখন রাসুল সা. তরবারি নিয়ে বললেন, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? তখন কাফের বললো, আপনি উত্তম তরবারি ধারনকারী।

আম্বিয়া কেরাম আ. এসে ‘আল্লাহ তায়ালা সবকিছু করেন’ এটার দাওয়াত দিতেন দুনিয়াতে। আর ইব্রাহীম আ. শাম দেশ থেকে এসে মক্কায় এখন যেখানে কাবা সেখানে আল্লাহর হুকুমে তার স্ত্রীকে রেখে যাচ্ছেন। আর যাবার সময় বিবি বলছেন আমাদের কোন জায়গায় রেখে যাচ্ছেন? যেখানে কোন কিছু নাই। তখন ইব্রাহীম আ. এর কথা বলা নিষেধ ছিলো। আর তার বিবির দিলে আল্লাহ ডেলে দিলেন যে, আল্লাহ যদি রেখে যেতে বলেন তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। আর ইব্রাহীম আ. তাদের যে খাবার দিয়ে গেছেন তা কিছুদিন পর শেষ হয়ে যায়। আর তার বিবি খাবারের সন্ধানে বের হলেন। সাফা মারওয়া সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। বাচ্চা তার পাকে মাটিতে মারতাছেন। আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল আ.কে পাঠিয়ে দিয়ে সব ব্যবস্থা করে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম আ.থেকে কুরবানির নিচ্ছেন যে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো। আবার বিবিকে মরুভূমিতে রেখে যাওয়া। এখন বাচ্চা রড় হলে তাকে জবাই করতে হুকুম করতাছেন। বাচ্চাকে জবাই করার জন্য তিনি প্রস্তুত হয়ে গেছেন। তার হুকুম অনুযায়ী কাজ করছেন আর আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করেছেন। আল্লাহ তাকে জানিয়ে দিলেন যে, হে ইব্রাহিম তুমি সফল কাম হয়ে গেছো।

মানুষের দিলের আসল জিনিস হলো তার দিল। দিলের একিন যখন ঠিক হয়ে যাবে, তখন দুনিয়ায় সব তার আনুগত্য করে দিবেন। একিনের দাওয়াত দেয়ার জন্যই আম্বিয়া একথার এই দাওয়াত দিয়েছেন।

এ ঘটনা আল্লাহ কুরআনে বর্ননা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আম্বিয়া কেরামকে পাঠিয়েছেন যে, বন্দার ইমানটা একিনের সাথে পরিবর্তন হয়ে যায়। আর আসল তো হলো একিন আর একিনের নাম হলো ইমান। আল্লাহ তায়ালা হুজুর সা.কে মেরাজে নিয়ে তিনটি এনাম দিয়েছেন । আর আমি মানুষকে বানিয়েছি। আমার ইবাদতের জন্য যখন মেরাজে রাসূল সা.কে নিয়ে নামাজকে ফরজ হিসাবে দিলেন, তখন নামায নিয়ে আসার সময় মুছা আ. এর দেখা হলে বলেন আপনার উম্মত ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবে না। কেননা তারা দুর্বল। তখন আল্লাহর কাছ থেকে ৯ বার গিয়ে রাসুল সা. কমিয়ে নিয়ে আসলেন। আবারও মুছা আ. বললেন এটাও আপনার উম্মত পারবে না। তখন রাসুল সা. বললেন যে, এর চেয়ে কমাতে আমার লজ্জা করতেছে। তখন রাসুল সা.কে শুনিয়ে দেয়া হলো যে, পাঁচ ওয়াক্তকে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব দেয়া হবে। আর নামাজ হলো এমন একটি ইবাদত এটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধ্যান খিয়াল রাখতে হয়। কিন্তু অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে এমনটি রাখতে হয় না। যেমন, হজ, রোজা, যাকাত ।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ