বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


বড়দের চোখে তাবলিগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।

করোনা মহামারির কারণ বিশ্ব এক অস্থিরতার মধ্যে সময় পার করছে। আস্তে আস্তে সেই অস্থিরতা কমতে শুরু করছে। লোকজনের মধ্যেও স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী করোনার আঘাতের কারণে দীন প্রচার-প্রসারের অন্যতম মাধ্যম তাবলিগ জামাতের ঐতিহ্য জমায়েত বাংলাদেশের টঙ্গীস্থ তুরাগ নদির তীরে বিশ্ব ইজতিমাও দুই বছর বন্ধ ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ, ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এই ইজতিমা। বিশ্বব্যাপী দীন প্রচারের মাধ্যম প্রচলিত তাবলিগ জামাত নিয়ে বড়দের ভাবনা কেমন ছিলো, এর কয়েকটি নমুনা এখানে তুলে ধরছি।

হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ.

হজরত ইলিয়াস রহ. এই কাজ শুরু করেছেন আলেম-উলামাদের পরামর্শ ও সমর্থন নিয়ে। কাজের নেজাম কী এবং কেমন হবে এই বিষয়েও আমাদের বড়দের সাথে পরামর্শ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি একদিন হাজির হলেন, হজরত থানবি রহ. এর কাছে। হজরত থানবি রহ. তাঁর কাজের পদ্ধতি শুনে খুশি হয়ে তাঁকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আর বলতে হবে না। বুঝে ফেলেছি। ইলিয়াস তো আমাদেরকে হতাশা থেকে আশার আলোর দিয়েছে। এই কাজ হক এর জন্য তোমাকে আর প্রমাণ পেশ করতে হবে না। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও।’

মুফতিয়ে আযম কিফায়াতুল্লাহ রহ.

ভারতের প্রধান মুফতি। একবার ইলিয়াস রহ. তাঁর কাছেও গিয়েছিলেন এই কাজের নীতিমালা নিয়ে পরামর্শ চাওয়ার জন্য। সবকিছু শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘যাও! তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। যদি কেউ প্রশ্ন তুলে তখন বলবে, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ ফতোয়া দিয়েছেন এই কাজ হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। বিদয়াত বলতে যা বুঝানো হয় এখানে তা অনুপস্থিত’।

হাকিমুল ইসলাম কারি তাইয়িব সাহেব রহ.

দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক সফল মুহতামিম। তিনি একবার তাবলিগ প্রসঙ্গে এক বয়ানে বলেছিলেন, ‘নফসের সংশোধনের তরিকা হলো ৪টি। সৌভাগ্যক্রমে তাবলিগের কাজের মধ্যে একসাথে ৪টি তরিকায় একত্র হয়েছে। ৪টি তরিকা হলো, ১. সৎলোকদের সংশ্রব। ২. জিকির ও ফিকির। ৩. আল্লাহ তায়ালার জন্য ভ্রাতৃত্ত্ব বন্ধন। নিজের নফসের হিসাব-নিকাশ।

আলহামদুলিল্লাহ, তাবলিগ জামাতের কাজে এই ৪টি গুণ একত্রে পাওয়া যায়। জনসাধরণের নফসের সংশোধনের জন্য তাবলিগের চেয়ে বিকল্প উত্তম আর কোনো উপায় হতে পারে না।

হজরত শাহ ওসিউল্লাহ খান এলাহবাদি রহ.

হজরত থানবি রহ. এর খলিফাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন খলিফা ছিলেন। একবার তিনি আলিগড় ভার্সিটিতে ছাত্রদের উদ্দেশ্য বয়ান করেন। বয়ানের একপর্যায়ে যেসব ছাত্ররা তাবলিগ জামাতের সাথে জড়িত তাঁদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের সাথে জড়িত ছাত্রদের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য আমি দেখতে পাই, এখানে যারা বসে আছে তাদের মধ্যে সেটি দেখতে পাই না। এবং যারা এই কাজে জড়িত তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, শোনো রাখো! সর্বদায় এই কাজ করতে থাকো।’

একবার হজতের কাছে তাবলিগ জামাত নিয়ে একজন আলেম প্রশ্ন ওঠালে তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনার মতো ব্যক্তি থেকে তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠানোটা আমাকে আশ্চর্য করেছে। শোনেন! এই তাবলিগের কাজ কি আজ থেকে শুরু হয়েছে এমন? তাবলিগের কাজে তো অনেক সময় ধরে চলে আসছে। এখন তো এই কাজের উন্নতি আর অগ্রগতির সময় চলে এসেছে। আর এই সময়েই আপনার মাথায় এই প্রশ্নটি জেগে বসেছে।’

হজরত আব্দুর রহমান রহ.

মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর মাদরাসার সদরে মুদাররিস ছিলেন। হজরত মানুযুর আহমাদ রহ. নামে একজন হজরতের কাছের আলেম মাদরাসা থেকে ছুটি নিয়ে তিন চিল্লায় পাকিস্তান গমন করে। সেখান থেকে তাবলিগের সাথীদের সাথে মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে হজরতের কাছে চিঠি লিখেন।

উত্তরে হজরত বলেছিলেন, ঠিক আছে যান। আপনি যে কাজে নিয়োজিত এই কাজ বর্তমান সময়ের সবচেয় বড় জিহাদ এতে কোনো সন্দেহ নেই।

হজরত হাবিবুর রহমান আযমি রহ.

দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার শায়খুল হাদিস। তিনি একবার তাবলিগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাবলিগ জামাত দীনের অনেক ভালো কাজ করতেছে। আমি তাদের কাজের কোনো বিরোধিতা করি না। আমি কেবল তাদের বিরোধিতা করি, যারা এই কাজে বাড়াবাড়ি করে বলে, মসজিদ, মাদরাসা ছেড়ে এই কাজে আসো। এবং মসজিদ, মাদরাসার কাজকে দীনের কোনো কাজ মনে করে না।’

ফাজায়েলে আমল কিতাবের দুর্বল হাদিস সম্পর্কে হজরতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, ‘মসজিদে এই কিতাব পড়ে শোনানোর কারণে গুমরাহি ছড়িয়ে পড়ার কোনো আশংকা নেই। তবে উক্ত কিতাবে কোথাও কোথাও অত্যন্ত দুর্বল হাদিসও চলে এসেছে। সুতরাং কোনো মুহাক্কিক আলেম যদি এই বিষয়ে পরামর্শ দেন, তাহলে তাঁর কথা মেনে নেওয়া। কিন্তু এই দুর্বল হাদিসগুলোর কারণে উক্ত কিতাব শোনা থেকে বিরত না থাকা। কারণ, দুর্বল অনেক হাদিস ইবনে মাজাহ শরিফেও আছে। তো, এই দুর্বল হাদিসগুলোর জন্য কি ইবনে মাজাহ শরিফকে দাওরার কিতাব থেকে বের করে দেওয়া উচিত হবে? বা পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে?’

সাইয়েদ আবুল হাসান নদবি রহ.

হজরতকে বিশ্বে পরিচয় করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনিই আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা সারা বিশ্বে পরিচয় করিয়েছেন। তাবলিগ জামাতকেও তিনি তাঁর বক্তৃতার দ্বারা আরব-আমিরাতের দেশগুলোতে সর্বপ্রথম প্রচার-প্রসার করিয়েছেন। তাবলিগ জামাত সফলতার শীর্ষে কীভাবে পৌঁছেছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়।

উত্তরে তিনি বলেন, ৪টি কারণ।

১. তাবলিগ জামাতের মধ্যে অনুগত ও মেনে নেওয়ার এক বিশেষ গুণ আছে। দশ জনের জামাত। জিম্মাদারগণ একটি কাজগ ধরিয়ে দেন অমুক স্থানে যেতে হবে ব্যস। কেউ পাল্টা প্রশ্ন করে না যে আমাদের সেখানে কেনো যেতে হবে? অমুক স্থানে কেনো পাঠানো হলো না?

২. তাবলিগের কাজের সাথীদের প্রত্যেকের মধ্যে পরিপূর্ণ এখলাস থাকে। কারো কাছে কিছু চায় না। কেউ কিছু না দিলেও রাগ নেই। অভিমান নেই। সকলের মধ্যে একটি জযবাই কাজ করে যে, আমাদের এই কাজের বিনিময় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে পাবো।

৩. তাবলিগে প্রতিটি মানুষ ইবাদত, জিকির, খেদমত ইত্যাদি সওয়াবের কাছে সর্বদায় লিপ্ত থাকে। প্রতিটি কাজ সুন্নত ও মুস্তাহাব অনুযায়ী করার চেষ্টা করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখের মধ্যে দোয়া চালু থাকে।

৪. তাবলিগের সাথীদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকে না। অর্থাৎ একদিকে মসজিদে গাশতের বয়ান চলছে একই সাথে মসজিদের বাইরে লোকজন গাশত করছে। খাবারের মুজাকারা চলছে সাথে সাথে খাবারও চলছে। এই কাজটি তাবলিগ জামাত সফল হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সাইয়েদ শহিদ ইউসুফ লুদয়ানবি রহ.

পাকিস্তানের শ্রদ্ধাভাজন মুহাক্কিক আলেম। ‘আপ কে মাসায়িল আওয়ার উনকা হল’ ফতোয়ার কিতাবের লেখক। তাবলিগ জামাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষদের ভুল বুঝাবুঝির কারণে উক্ত বরকতপূর্ণ জামাতকে সমালোচনার স্থানে দাঁড় করাতে দেখা যায়। তাবলিগের কাজ বন্ধ করে দেওয়ারও পাঁয়তারা করা হয়েছে। বদনাম করার জন্য সংগঠনও করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটি হলো আল্লাহ তায়ালার কাজ। আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রকারের প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুখলিস বান্দাদের দ্বারা নিজের দীনের দাওয়াতি কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহে আশা করি তিনি নিজের মুখলিস বান্দাদেরকে উক্ত কাজের জন্য প্রস্তুত করতেই থাকবেন।’

হজরত আব্দুর শুকুর দীনপুরি রহ.

তাবলিগ জামাতের কাজের প্রশংসায় তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস রহ. এর মেহনতের বদৌলতে যেসব মানুষ ফরজ নামাজ আদায় করতো না, আজ তাঁদের গভির রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ কাজা হয় না। যারা কূদৃষ্টির রোগে আক্রান্ত ছিলো, তাঁদের অবস্থাও ভালোর দিকে মোড় নিয়েছে। নোংরা পরিবেশ সুন্দর ও সজিব হতে শুরু করেছে। হাজার হাজার নয়; লাখো লাখো মানুষ তাবলিগ জামাত দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। যারা নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত জানতো না, আজ তাঁরাও জানতে শুরু করেছে। আমি আশা করি, হাদিসের মধ্যে যে প্রতিটি ঘরে ইসলামের কালিমা প্রবেশ করার কথা বর্ণিত হয়েছে, এই তাবলিগ জামাত দ্বারা সেটি বাস্তবে রুপ নিবে।’

হজরত সালিমুল্লাহ খান রহ.

তাবলিগের কাজের সাথে নিজে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তো আপাদমস্তক তাবলিগের মানুষ। তিনি যখন রায়বেন্ড চিল্লা লাগানোর জন্য চলে যান, তখন কাউকে কোনো কিছু বলেও যাননি। তাশকিলের লোকেরা যখন তাশকিল শুরু করলো, তখন তিনি বললেন, আমার নাম লিখুন। আমি সলিমুল্লাহ চিল্লায় যাবো।’

এক বয়ানে তিনি বলেন, ‘মসজিদের সাথে সম্পর্ক রাখা জরুরি। তাবলিগ জামাতের সাথেও সম্পর্ক রাখা জরুরি। অর্থ-সম্পদ, সুনাম-সুখ্যাতি হলো, মানুষদের জন্য দুনিয়া ও পরকাল বিনষ্টকারী আসবাব’।

হজরত আবরারুল হক হক্কি রহ.

হজরত তাবলিগের একটি ইজতিমায় বয়ান করছিলেন। সাড়ে তিন লাখ বা চার লাখের মতো লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলো। বয়ানে তিনি বলেন, ‘তাবলিগ জামাত অত্যন্ত উপকারী একটি জামাত। তবে যতেষ্ট না। উপকারীর পাশাপাশি যতেষ্ট তখন হবে, যখন এই জামাতের লোকজন হক্কানি আলেম-উলামাদের সাথে গভির সম্পর্ক বজায় রেখে নিজেদের কাজ পরিচালনা করবে। কারণ, ৬টি উসুলের মধ্যে পরিপূর্ণ দীন চলে আসেনি। পরিপূর্ণ দীন বুঝার জন্য আলেম-উলামাদের স্মরণাপন্ন হওয়া জরুরি। সুতরাং এই জামাত পরিচালনার জন্য সর্বদায় আলেম-উলামাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখনো প্রয়োজন অদূর ভবিষ্যতেও প্রয়োজন।’

এক বয়ানে তিনি বলেন, ‘মকতব, মাদরাসার মধ্যে আমলের নীতিমালার যে আলোচনা করা হয়, সেই আমলের বাস্তবায়ন তাবলিগ জামাতের মধ্যে দেখা যায়। আর খানকাহ ও আল্লাহওয়ালাদের থেকে আমল কবুল হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায়।’

হজরত আব্দুল গণি জালালি রহ.

হজরত মাদানি রহ. এর ছাত্র। হজরতের কাছে তাবলিগ জামাতের কিছু লোক এসে দোয়ার কামনা করে। তাঁদের কথা শুনে হজরত বললেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করুন। কারণ, আপনারা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় আছেন। এই অর্থে আপনারা হলেন, আল্লাহ তায়ালার মুজাহিদ।’

হজরত আব্দুর রহিম লাজপুরি রহ.

‘ফতোয়ায়ে রহিমিয়া’র লেখক। তিনি বলেন, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে জান-মাল ও সময় বের করে সাধারণ লোকজনকে কালিমা, নামাজ, দীন শিখানোর জন্য বের হয়েছে, তাদের কাজ ছাড়া উত্তম আর কি কাজ আছে? আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদের প্রশংসা করেই পবিত্র কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাা ও আমলে সালেহ এর দিকে লোকজনকে ডাকে, তাঁর কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কি হতে পারে?’

হজরত হাকিম আখতার সাহেব রহ.

হজরত আব্দুল গণি ফুলপুরি ও হারদুঈ হজরতের খলিফা। আমাদের করাচি হজরত। তিনি তাবিলগ জামাতের প্রশংসায় বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের বের হওয়া সৌভাগ্যের আলামত। কারণ, এই জামাতের লোকজন নিজের পরিবেশ ছেড়ে সৎলোকদের সান্নিধ্যে থেকে উত্তম ফলাফল লাভ করে থাকে। বাস্তবতাও এটি বলে। কারণ, অফিস-আদালত, কলেজ-ভার্সিটি, ব্যবসায়ী তাবলিগে সময় দেওয়ার পর তাঁদের পোশাক-আশাক, সুরত-সিরাতে দেখতে দীনি মাদরাসার ছাত্রদের মতো মনে হয়। অর্থাৎ, বাহ্যিক আকৃতিতে তাঁদের নেক মানুষ মনে হয়।’

আরেক বয়ানে বলেন, ‘যে জামাত দ্বারা বিশ্ববাসী দীনের উপকার পাচ্ছে। রাসূলের উম্মতগণ উক্ত কাজে স্বইচ্ছায় যোগ দিচ্ছে। সুতরাং যারা উক্ত জামাতের বিরুদ্ধে ওঠেপড়ে লেগেছে, আশংকা আছে কেয়ামতের দিন তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে পাকড়াও হয়ে যাবে। এমনকি তারা ঈমানহারা হয়ে মৃত্যুবরণ করারও প্রবল আশংকা আছে। কারণ, এই জামাতের সাথে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক সুসংবাদ জড়িয়ে আছে। ‘

অন্যত্রে বলেন, ‘যৌথভাবে দীনি কাজ যারা করছেন, তাঁদের মধ্যে বর্তমানে তাবলিগ জামাত হলো, সবচেয়ে উত্তম জামাত। তাবলিগের নীতি-আদর্শ বলে দেওয়াকে আমি ওয়াজিব মনে করি। তদ্রুপ তাবলিগের নিন্দা বলা, সমালোচনা করা, তাবলিগ জামাতকে হেয় প্রতিপন্ন, হাসি-মজাক করাকেও হারাম মনে করি। কারণ, ইলিয়াস রহ. কে? তিনি তো আমাদেরই আকাবির-আসলফদের একজন। হক্কানি আলেম। আমাদের মুরব্বি। তিনি কি আমাদের জন্য শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজের সূচনা করে যেতে পারেন?’

আরেক বয়ানে বলেন, ‘আমি তো তাবিলগ জামাতকে বরকতপূর্ণ জামাত বলে থাকি। পৃথিবীর মধ্যে এই জামাতের কোনো নজির নেই। কারণ, সারা বিশ্বে এই জামাত দীনের জন্য অনেক অনে-ক কষ্ট করে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের এই মেহনতকে কবুল করুন। আমীন। কারণ, আমার অন্তর সাক্ষী দেয়, যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে, আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে বিছানাপত্র কাঁধে নিয়ে দীনি কাজের জন্য বের হয়; আল্লাহ তায়ালা তাঁদের এই মেহনতকে বিফল করবেন না। আমি আজ তাঁদের মেহনতের কারণেই এখানে মেহনত করে এসেছি। যেনো তাঁদের মেহনত বিফলে না যায়। আর এখলাসের বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা যেনো এই মেহনতকে কবুল করে নেন।

একবার হজরতের কাছে হজরত থানবি রহ. এবং হজরত ইলিয়াস রহ. এই দুই জনের দাওয়াতের পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাওয়া হয়।

উত্তরে তিনি বলেন, ‘হজরত থানবি রহ. এর দাওয়াতের পদ্ধতির মধ্যে গায়রতের প্রভাব বেশি। আর হজরত ইলিয়াস রহ. এর দাওয়াতের পদ্ধতির মধ্যে শফকত-মায়া, মমতা বেশি। প্রথম পদ্ধতি পরিপূর্ণ উপকারিতার দাবি রাখে আর দ্বিতীয় পদ্ধতি ব্যাপক উপকারিতার দাবি রাখে। করাচি হজরত বলেন, আমার এই উত্তরকে আমার মুরব্বিগণও পছন্দ করেছেন।’

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উক্ত বরকতপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: শিক্ষাসচিব, জামিয়া ইসলামিয়া নিদাউল কুরআন, টঙ্গী, গাজীপুর।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ