মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ইজতেমার মুসল্লিদের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রচণ্ড ও শীত ও অবিশ্বাস্য ভিড়। এই মাঝে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসেন দ্বীনি জমায়েত বিশ্ব ইজতেমায়। এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা যেন তিন দিন সুস্থভাবে ইবাদত-বন্দেগি, রোনাজারি ও মোনাজাতে সময় কাটাতে পারেন; সেজন্য তুলে ধরছি দেশের বিশেষজ্ঞ তিন চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।

ঢাকার শান্তিনগরে অবস্থিত বাংলাদেশ আই হসপিটাল’র ডাইরেক্টর ও কনসালটেন্ট ডা. মাসুদ হাশমী বলেন, প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ অংশ নেন।

ধুলাবালি, অপর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন, শীতে খোলা বা হালকা আচ্ছাদিত মাঠে অবস্থান, শারীরিক পরিশ্রম প্রভৃতি কারণে কারও কারও নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সচেতনতার সঙ্গে সবকিছু করতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না; যার ফলে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়বো বা আমার কোনো সাথী ভাই অসুস্থ হয়ে পড়বে।

বিশেষ করে ইজতেমায় প্রচণ্ড শীত ও ভিড়ের কারণে অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা শীতে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে চোখও শুষ্ক হয়ে ওঠে। নিম্ন তাপমাত্রার কারণে এ সময় চোখ জ্বালাপোড়া, অতিরিক্ত ময়লা, অ্যালার্জি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য সান গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন যাতে চোখে ধূলো -বালি প্রবেশ করতে না পারে। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহন্ করুন। এতে শরীরের পাশাপাশি চোখের আর্দ্রতাও বজায় থাকবে।

অজু ও গোসলের সময় পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখুন। চোখ যদি বেশ শুষ্ক থাকে তাহলে নানা ধরনের চোখের অসুখ হতে পারে। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ সঙ্গে রাখতে পারেন।

রাজধানীর খিদমাহ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড’র অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আবু মুহাম্মদ তাওফিকুর রহমান রহমান বলেন, অনেক বয়স্ক মানুষ ইজতেমায় অংশ নেন। তাদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই আগে থেকেই বাড়তি সচেতনতা জরুরি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবশ্যই ইজতেমায় যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, ওষুধ, ইনহেলার সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। এসব নিয়মিত ওষুধ (যেমন রক্তচাপের ওষুধ, ইনহেলার বা ইনসুলিন) বন্ধ করা যাবে না। ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণের পর নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাবেন, নইলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এ সমস্যার নাম হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটা প্রতিরোধের জন্য সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুট, চকলেট বা গ্লুকোজ) রাখতে পারেন।

বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতার কারণে ডায়রিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি ডাবের পানি, বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত ঝাল বা তেল-মসলাযুক্ত খাবার পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে। তাই এগুলো এড়িয়ে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন।

এ সময় প্রচুর হাঁটতে হয় বলে পা সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে, এমন নরম ও টেকসই জুতা পরা ভালো। কিছু সাধারণ পরামর্শ হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখে রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করুন, টয়লেট টিস্যু বা ঢিলা ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। নির্ধারিত টয়লেট ব্যবহার করুন। খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।

প্রয়োজনীয় ওষুধ, ওরস্যালাইন, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম, চশমা সঙ্গে নিয়ে যাবেন। অসুস্থ হলে কাছাকাছি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

রাজধানীর খিদমাহ হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড’র নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ঠান্ডা, ধুলোবালির কারণে এই সময় সর্দিজ্বর, কাশি, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। হাঁচি-সর্দির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন (লোরাটিডিন, ফেক্সোফেনাডিন, সেটিরিজিন), কাশির জন্য থিওফাইলিন বা সালবিউটামল, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। প্রতিরোধের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে-সেখানে কফ বা থুতু ফেলবেন না। শীতে কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডা সব সময়ই লেগে থাকে।

বিশেষ করে গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি হরহামেশাই দেখা যায়। এ ছাড়া হালকা জ্বরের প্রাদুর্ভাবও দেখা দেয়। এগুলো হচ্ছে ঠাণ্ডা বা কমন কোল্ডের লক্ষণ। সাধারণত এমনিতেই সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর ভালো হয়ে যায়। তার পরও যদি না সারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি-অ্যালার্জি, অ্যান্টি-পাইরেটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে পারলে। টয়লেট ও গোসলের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন ঠাণ্ডা লেগে না যায়। বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না। অ্যালার্জি এবং ঠাণ্ডা পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে।

গ্রন্থনা: আদিয়াত হাসান

-এসআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ