শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো সাওয়াবের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।। ইসলামে নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদত যেমন ফরয,তেমনিভাবে মু’আশারাত তথা পারস্পরিক আচার-আচরণ,একে অন্যের হক আদায় ও মানবাধিকার রক্ষা করাও ফরয।

এই পৃথিবীর মালিক আল্লাহ তায়ালা। আর সকল সৃষ্টিই তার পরিবারভুক্ত। তাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো,নিঃস্ব মানুষের সাহায্যে সহানুভূতি-সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা নিঃসন্দেহে ইবাদত ও পুণ্যময় কাজ।

গরীব, এতিম, মিসকীন, মুসাফির,বিধবা প্রভৃতি দুঃস্থ মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা ,সাহায্য-সহযোগিতা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব-কর্তব্য। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না। তাকে ধ্বংসের দিকে ফেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাবে সাহায্য করবে,আল্লাহ তায়ালা তার অভাবে সাহায্য করবেন।

যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে,আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের মধ্যে হতে কোন একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। তদ্রুপ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকবে,আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ তার সাহায্যে লেগে থাকবেন (বুখারী,মুসলিম)।

যারা নিঃস্ব,অসহায় ও অভাবী মানুষের সাহাযার্থে এগিয়ে আসে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্থ,এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’ (সূরাঃ দাহর,আয়াতঃ ৮-৯)।

অর্থাৎ জান্নাতীদের এতসব নিয়ামত দেওয়া হবে এ কারণেও যে,তারা দুনিয়াতে অভাবগ্রস্থ,এতীম ও বন্দীদের আহার্য দান করত ,তাদের পাশে দাঁড়াত। হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,রাসূল (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির উপর অনূগ্রহ করেন না। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না (বুখারী)।

মানে সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে স্রষ্টা তার প্রতি দয়া করেন। হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,যে মুসলমান কোন বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় পরাবে,আল্লাহ তাকে (কিয়ামতের দিন) বেহেশতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। যে মুসলমান কোন ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খাদ্য দান করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতের ফল খাদ্যরূপে দান করবেন।

আর যে মুসলমান কোন পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে মুখ বন্ধ করা বোতলের স্বচ্ছ পানি পান করাবেন (মিশকাত)। মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,‘যে মুসলমান কোন মুসলমানকে একটি কাপড় পরাবে,সে আল্লাহর হেফাযতে থাকবে যে পর্যন্ত কাপড়ের একটি টুকরাও তার শরীরে থাকবে’। বস্তুত, আল্লাহর হকের চেয়ে বান্দার হক কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আল্লাহর হকের প্রতি যেমন খেয়াল রাখতে হবে,বান্দার হকও যেন নষ্ট না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সমাজের দুঃস্থ-নিঃস্ব মানুষেরও কিছু হক আছে বিত্তশীলদের নিকট।

যা আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন এবং বিনিময়ে দান করেন জান্নাত। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কারো অভাব পূরণ করবে ওই ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য,প্রকৃতপক্ষে সে আমাকেই খুশি করল,আর যে আমাকে খুশি করল,প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহকেই খুশি করল আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশি করল, আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন (বাইহাকী)। অন্য বর্ণনায় আছে,যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের একটি প্রয়োজন পূরণ করবে ,আল্লাহ তায়ালা তাকে হজ্ব এবং উমরাহ করার সমতুল্য সওয়াব দান করবেন (জামে সাগীর)।

দেখুন,সামান্য ছোট একটি আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা কত বড় পুরস্কার দান করছেন। বর্তমানে সারা দেশে ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষকরে দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। কনকনে শীতে কাঁপছে ছিন্নমূল মানুষ। এসব দরিদ্র-নিঃস্ব মানুষদের শীতবস্ত্র তথা গরম কাপড় দেওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

মানবসেবার গুরুত্ব আরও সুন্দরভাবে এ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেন,হে আদম সন্তান! আমি পীড়িত ছিলাম তুমি আমার সেবা করনি,আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তুমি আমাকে আহার্য দাওনি,আমি তৃঞ্চার্ত ছিলাম তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। তখন বান্দা বলবে,ইয়া রব! আপনি সবকিছুর মালিক।

আপনি কিভাবে পীড়িত হয়েছিলেন,কীভাবে ক্ষুধার্ত ও তৃঞ্চার্ত হয়েছিলেন! আর আমি আপনার বান্দা হয়ে কীভাবে আপনার সেবা করব,খাদ্য পানীয় দেব! আপনিই তো সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ বলবেন,আমার অমুক বান্দা ক্ষুধায় কাতর হয়ে তোমার কাছে আহার্য চেয়েছিল,তুমি তাকে খেতে দাওনি। আমার অমুক বান্দা তৃঞ্চার্ত ছিল,তুমি তাকে পানি দাওনি।

যদি তুমি সেই পীড়িতের সেবা করতে,ক্ষুধার্তকে আহার্য দিতে ও তৃঞ্চার্তকে পানি পান করাতে তাহলেই আমাকে সেবা করা,আহার্য দেওয়া ও পানি পান করানো হতো (মিশকাত)।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ