শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: আমাদের সবারই কাম্য জান্নাতে যাওয়া। কিন্তু যে সব কাজ করলে জান্নাতে যাওয়া যাতে সে সব কাজ কি আমরা সবাই করি? আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলুল্লাহ সা: চান প্রতিটি মুমিন যেন জান্নাতবাসী হয়। তাই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জান্নাতে যাওয়ার সুস্পষ্ট পথ বাতলে দেয়া হয়েছে।

জান্নাতে যাওয়ার আমল : মহানবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি দু’চোয়ালের মধ্যস্থল তথা মুখ ও দু’পায়ের মধ্যস্থল তথা যৌনাঙ্গের দায়িত্ব নেবে আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেবো।’ (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪১১) অপর হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘তোমরা ছয় জিনিসের দায়িত্ব নাও, আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নেবো।’

১. যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে না; ২. যখন আমানত রাখা হবে তা খিয়ানত করবে না; ৩. যখন অঙ্গীকার করবে তার খেলাপ করবে না; ৪. চলার সময় চোখকে নি¤œগামী রাখবে; ৫. তোমাদের হস্ত নিয়ন্ত্রণ রাখবে ও তোমাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করবে।’ (ইবন কাসির)

সত্য কথা বলা : মহানবী সা: বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এগুলোর কোনো একটি পাওয়া যাবে, সে ওই দোষ ত্যাগ না করা পর্যন্ত নিফাকবিশিষ্ট বলে গণ্য হবে। দোষগুলো হলো- ক. তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখলে খিয়ানত করে; খ. কথা বললে মিথ্যা বলে; গ. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে; ঘ. কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করলে গালিগালাজ করে।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৭)

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। (সূরা মুনাফিকুন-১) রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘সত্যবাদিতা মানুষকে সত্যতার পথে টেনে নিয়ে যায়, আর সততা টেনে নিয়ে যায় জান্নাতের দিকে। আর মিথ্যা টেনে নিয়ে যায় পাপাচারের দিকে, পাপাচার নিয়ে যায় জাহান্নামের দিকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) রাসূল সা: আরো বলেন, ‘তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন না এবং গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। তারা হলো- ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যুক শাসক ও অহঙ্কারী দরিদ্র।’ (সহিহ মুসলিম)

আমানতের খিয়ানত না করা : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত করো না। অথচ তোমরা (এর গুরুত্ব) জানো।’ (সূরা আনফাল-২৭) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিশ্রুতি দেয় তখন ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয় তখন তার খিয়ানত করে। যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে ও নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে।’ (সহিহ মুসলিম, বুখারি) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘যে আমানতদার নয় তার ঈমান নেই এবং সে অঙ্গীকার পালন করে না তার দ্বীন নেই।’ (আহমদ, বাযযায, তারবানি, বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪৫)

অঙ্গীকার পূরণ করা : অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের অঙ্গীকার পূরণ করবে। কারণ অঙ্গীকার পূরণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩৪) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে ও আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।’ (বুখারি)

চোখ নিম্নগামী রাখা : আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ এবং ৩১ নং আয়াতে নারীদের চোখ নিম্নগামী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা, গাইরে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হারাম। মহানবী সা: হজরত আলীকে বলেছেন, ‘হে আলী! দৃষ্টি পর দৃষ্টি দেবে না। কারণ প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ, দ্বিতীয় দৃষ্টি বৈধ নয়।’ (আবু দাউদ-২১৪৯) মহানবী সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান কোনো নারীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার পর ফিরিয়ে নিলে, আল্লাহ তাকে ইবাদতের স্বাদ দান করবেন।’ রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘দৃষ্টি হলো শয়তানের বিষাক্ত শর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে তা বর্জন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এর বিনিময়ে এমন ঈমানে পরিবর্তন করবেন, যার স্বাদ সে অনুভব করবে।’ মহানবী সা: বলেন, ‘চোখের যিনা হলো- বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দান করা।’ (মিশকাত-৮৬) রাসূল সা: আরো বলেন, ‘বিচার দিবসে সব চোখ ক্রন্দন করবে- তিনটি চোখ ব্যতীত। যে চোখ বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়নি, যে চোখ আল্লাহর পথে জাগ্রত রয়েছে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে মাছির ডানা পরিমাণ পানি বের করেছে।’

হাতকে নিয়ন্ত্রণে রাখা : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বিচার দিবসে তাদের জিহ্বা, হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা করেছে।’ (সূরা নূর-২৪) মহানবী সা: বলেছেন, ‘হাতের যিনা হলো অবৈধ কিছু স্পর্শ করা’। (বুখারি, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন-১৬২২) মহানবী সা: আরো বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে।’ (সহিহ বুখারি-১০) সুতরাং হাতকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অপরিহার্য।

যৌনাঙ্গের হিফাজত করা : আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে নারীদের যৌনাঙ্গ হিফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা মুমিনুনের ৫ নং আয়াতে বলেছেন, ‘মুমিন হলো তারা যারা যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। অর্থাৎ স্ত্রী ও শরিয়তসম্মত দাসীদের ছাড়া সব পর নারী থেকে যৌনাঙ্গের সংযত রাখে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ