শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মোজ্জাম্মেল হক রাহমানী: দোয়া আল্লাহ তায়ালার অশেষ নেয়ামত ও মহৎ ইবাদত, দোয়া নবীগণ ও মুত্তাকিদের সবচেয়ে বিশিষ্ট গুণাবলীর অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, (হে নবী!) "যখন আমার বান্দাগণ আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন যে,) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি। সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়" (সূরা বাকারাহ ১৮৬)।

আল্লাহ তায়ালা সর্বদা তাঁর বান্দাদের দোয়া-আর্তনাদ শোনেন ও কবুল করেন। তবে কিছু বিশেষ সময়-মুহূর্ত রয়েছে যখন দোয়া খুব দ্রুত কবুল হয়, বিশেষ করে জুমার দিন। সেই সময় কোনো মুসলমান দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন।

হাদিস শরীফে এসেছে,

عن جابر بن عبد الله عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: يوم الجمعة ثنتا عشرة يريد ساعة لا يوجد مسلم يسأل الله شيئا إلا اعطاه الله عز وجل فالتمسوها آخر ساعة بعد العصر

অর্থাৎ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন— "জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহ তায়ালার কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করবেন। কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো" (আবু দাউদ: ১০৪৮)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে:

عن ابي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " خير يوم طلعت فيه الشمس يوم الجمعة، فيه خلق آدم، وفيه ادخل الجنة، وفيه اهبط منها، وفيه ساعة لا يوافقها عبد مسلم يصلي، فيسال الله فيها شيئا إلا اعطاه إياه " قال ابو هريرة: فلقيت عبد الله بن سلام فذكرت له هذا الحديث، فقال: انا اعلم بتلك الساعة فقلت اخبرني بها ولا تضنن بها علي، قال: هي بعد العصر إلى ان تغرب الشمس، فقلت كيف تكون بعد العصر، وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " لا يوافقها عبد مسلم وهو يصلي " وتلك الساعة لا يصلى فيها، فقال عبد الله بن سلام: اليس قد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " من جلس مجلسا ينتظر الصلاة فهو في صلاة " قلت: بلى، قال: فهو ذاك.

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে দিনগুলোয় সূর্য উদিত হয় তন্মধ্যে সর্বোত্তম জুমার দিন, যেদিন হযরত আদম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল, যেদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করা হয়েছিল। এই দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলমান নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দান করবেন।

হযরত আবু হুরায়রা বলেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং হাদিসটি বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, এই বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি বললাম, এ সম্পর্কে আমাকে স্পষ্ট কিছু বলুন, কৃপণতা করবেন না। তিনি বললেন, এই বিশেষ মুহূর্তটি হচ্ছে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আমি বললাম, এটা কিভাবে সম্ভব? অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যদি কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দেবেন।' আসরের পর তো নামাজ পড়া যায় না! হয়রত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি একথা বলেননি? যে ব্যক্তি কোথাও বসে নামাযের জন্য অপেক্ষা করবে, সে যেন নামাযে আছে। আমি বললাম, অবশ্যই বলেছেন, তিনি বললেন, এটাই বুঝানো হয়েছে" (নাসাঈ ১৪৩২, আবু দাউদ ১০৪৬)।

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَی الْأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَسَمِعْتَ أَبَاکَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّی اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّی اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الْإِمَامُ إِلَی أَنْ تُقْضَی الصَّلَاةُ

অর্থাৎ হযরত আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, হযরত ইবনে উমর (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতার কাছ থেকে জুমার প্রহরের মহিমা সম্পর্কে কোনো হাদীস শুনেছ? আমি বললাম হ্যাঁ শুনেছি, তিনি বলেছেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জুমার দিন মহিমান্বিত মুহূর্তটি হচ্ছে ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম শরীফ ১৯৭৫)

এ সকল হাদিসের আলোকে আলেমগণ জুমার দিন মহিমান্বিত প্রহর ও গ্রহণযোগ্য মুহূর্ত দু'টি নির্ধারণ করেছেন, ১. খুতবা শুরু ও নামাজ শেষ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়। ২.আছরের পর সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বে।

তাই অন্তরে কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করবে, আল্লাহ তায়ালা সবার দোয়াই কবুল করেন। তবে দোয়া কবুলের পদ্ধতি-রুপরেখা ভিন্ন, কখনো যা চাওয়া হয় তাই দেন, কখনো কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদাপদ দূর করে দেন, আবার কখনো নিজ অভিপ্রায়-কর্মকুশলতায় বান্দার পরকালের জন্য স্টোরেজে রেখে দেন। মনে দৃঢ় বিশ্বাস-প্রত্যয় নিয়ে ক্রন্দন করে, আগে-পরে দরুদ শরীফ পাঠ করে, দোয়ার আদব ও কবুলের বিশেষ সময়-মুহূর্ত বিবেচনা করে গোলামের মতো আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করবে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও নিরঙ্কুশ শাসক, তিনি যেভাবে ইচ্ছা গ্রহণ করবেন।

সিনিয়র শিক্ষক: মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, বসুন্ধরা, ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ