শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


কোন যুগটি ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| ইফতেখার জামিল ||

আপনি যদি গুগলে এই প্রশ্ন সার্চ করেন, গুগল আপনাকে উত্তর দিবে, ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল আব্বাসি আমলে, যার ব্যাপ্তি দেড়শো থেকে ছয়শো হিজরি পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাখ্যা মতে সাহাবা-তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ীরা স্বর্ণযুগের সন্তান নন।

যেহেতু সালাফে সালেহীনের কেউই সাহিত্য-দর্শন-শিল্প-বিজ্ঞানে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন না, তাই তারা পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতার মাপকাঠি নন। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত-গল্প বলতে তারা দর্শন, প্রযুক্তি, শিল্পের কথা তুলে আনেন, তাই ইবনে মাসউদ, আলী ও মুয়াবিয়ার জায়গা দখল করে নেন ইবনে সিনা, ফারাবি ও ইবনে রুশদরা।

প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা ব্যাখ্যায় ভুল কোথায়, সাহাবীরা কেন শ্রেষ্ঠ ছিলেন? ধর্মীয় রুচি, ঈমানি চেতনা ও সামরিক বিজয়ের মাপকাঠিতে সাহাবা-সালাফের সাথে পরবর্তীরা কোনভাবেই তুলনীয় নন।

অত্যন্ত নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে দেখুন, সাহাবা-সালাফের চিন্তা ছিল কুরআন-সুনানের সারনির্যাস। তারা বিশেষায়িত পড়াশুনা করেননি, গবেষক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেননি, তবু তাদের চিন্তার দৃঢ়তা-প্রশস্ততার কোন তুলনা হয় না।

সালাফ-সাহাবারা সামাজিক ও সামরিক প্রেক্ষাপটে যে সফলতা দেখিয়েছেন, তার কোন তুলনা হয় না। আব্বাসি যুগেও মুসলমানরা ভূখণ্ড জয় করেছে, তবে সেই জয়গুলো ছিল সাহাবা-সালাফদের কাজের সম্প্রসারণ। ওমরের যুগেই পারস্য-রোমান সাম্রাজ্যের ভিত কেঁপে উঠেছিল। পরবর্তীরা শুধু বিজয়ের ধারা বজায় রেখেছেন।

সাহাবারা শুধু বিজয় অর্জন করেই থেমে থাকেননি, সামরিক বিজয় অনেকেই অর্জন করে। বিজয়-পরবর্তী সমাজ বিনির্মাণে সাহাবা-সালাফদের অবদানের কোন তুলনা হয় না। পশ্চিমা সামরিক বিজয়ের সাথে সাহাবা-সালাফদের ভূমিকাকে তুলনা করে দেখুন, পার্থক্য নিজেই ধরতে পারবেন। ভূমি জয় করা কঠিন, মন জয় করা তারচে' অনেকবেশী কঠিন।

সাহাবা-সালাফের বৈশিষ্ট্য ঠিক কী ছিল?

ইবনে মাসউদ বলেন, সাহাবাদের মধ্যে আন্তরিক সততা ছিল সবচেয়ে বেশী, তাদের ইলম ছিল সবচেয়ে গভীর, তাদের মধ্যে লৌকিকতার কোন বালাই ছিলো না, তাদের কর্মপন্থা ছিল সবচেয়ে বেশী সঠিক, স্বভাব-আচরণে তাদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। মূলত এই গুণগুলোই ছিল সাহাবা-সালাফদের সফলতার মূল রহস্য। দর্শন, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ার ফলে মুসলমানরা পরাজিত হয়নি। মুসলমানরা পরাজিত হয়েছে সাহাবা-সালাফদের গুণাবলী হারিয়ে ফেলার প্রেক্ষিতে।

তাতারদের থেকে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে ছিল। মুসলিম স্পেনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে তৎকালীন ইউরোপের কোন তুলনাই হতে পারে না। তবু তাতার-ইউরোপিয়ানদের কাছে মুসলমানরা পরাজিত হয়েছিল। আপনি যখন শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞানকে উদ্দেশ্য ও কেন্দ্রবিন্দু বানানো শুরু করবেন, তখন আপনি ধীরে ধীরে শক্তি হারাবেন।

টুলস ও আসবাব হিসেবে শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই। ফল কাটতে চাইলে অন্তরের স্বচ্ছতা দিয়ে কিছু হবে না, আপনার হাতে ছুরি থাকতে হবে। তবে আপনি যদি ছুরির পূজা শুরু করেন, ফল কাটার কথাই ভুলে যান, তবে ছুরিতে লাভ দূরে থাকুক, ক্ষতির আশংকাই বেশী। শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞান-সার্টিফিকেট পূজা করা যাবে না, কাজে না লাগলে ছুড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধা রাখা যাবে না।

শিক্ষা-ডিগ্রি-সার্টিফিকেট অর্জনের আগে পাত্রও তৈরি হতে হয়, রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা থাকতে হয়। ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি ও রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা না থাকলে জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষায় বিশেষ ফায়দা নেই। পাগল-সন্ত্রাসীর হাতে ছুরি থাকলে বিপদের আশঙ্কাই থাকবে বেশী। সাহাবা-সালাফরা যে পথে সফলতা অর্জন করেছেন, সেটাই হোক আমাদের আদর্শ, আমাদের চেষ্টা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ