মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫


বাবার লাশ সামনে রেখে সন্তানদের বিবাদ: আলেমগণ কিভাবে দেখছেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।আবু সাঈদ।।

পিতার মৃত্যুতে সন্তানদের শোকাহত হওয়ার কথা। বাড়ি ভর বিরাজ করার কথা বেদনার আবহ। কিন্তু বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে ভিন্ন চিত্র।

মৃত পিতার লাশ সামনে রেখেই সম্পদ বন্টন নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে সন্তানরা। পরালোকগত পিতার শব সমাহিত করার ভাবনা যেন কারো নেই। নিজের প্রাপ্য পূর্ণরূপে বুঝে নিতেই সবাই ব্যস্ত। কেউ থানায় যায়। কেউ আবার ইউপি সদস্যের দ্বারস্থ হয়। এমন অদ্ভুদ সব ঘটনা ঘটছে দেশের নানা স্থানে।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এলিট পরিবারেও এমন ঘটনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। একেকটি ঘটনার পর সচেতন মানুষজন নানা রকম মন্তব্য করে। ব্যক্ত করে নিজেদের হতাশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তখন লেখালেখি হয় প্রচুর।

সবাই ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণ নিজের পরখ মতো তুলে ধরে। তবে এতে কোন কার্যক্রর ভূমিকা দেখা যায় না সমাজে। পরিবর্তন হয় না এমন অদ্ভুদ মানুষগুলোর স্বভাব। দিন দিন এরূপ ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চিন্তিত দেশের সচেতন সমাজ।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মেহেরপুরের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া মেহেরপুরের শিক্ষা সচিব ও সিনিয়র মুফতি আবদুল্লাহ আল মাদানীর সাথে।

তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘নানা সময় সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, পিতার লাশকে সামনে রেখে সম্পদ বন্টন নিয়ে সন্তানরা বিবাদে লিপ্ত হয়। এটি তাদের অত্যন্ত নীচু মানসিকতার পরিচয় বহন করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা খুবই গর্হিত কাজ। পিতার মৃত্যুর পর তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা সন্তানদের উপর আবশ্যক।’

মুফতি আবদুল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির সম্পদ বন্টনে ইসলামের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর প্রথমে সম্পদ দ্বারা তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হয়। অতপর তার ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কোন ওসিয়ত থাকলে সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা পূরণ করতে হয়। এরপর কিছু উদ্বৃত্ত হলে স্বজনরা তা প্রাপ্ত হয়।’ অতপর মুফতি আবদুল্লাহ আল মাদানী বলেন, ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিধান না জানার কারণেই এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে।’

জামিয়া ইসলামিয়া মেহেরপুরের শিক্ষাসচিব বলেন, আসলে দীনি শিক্ষার অভাবেই মূলত এমন নির্দয় আচরণ দেখা যায়। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকের জন্যই উচিৎ, আমরা আপন সন্তানকে প্রয়োজন পরিমাণ ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করবো।’

এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর মেরুল এলাকার বিখ্যাত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলামির সিনিয়র শিক্ষক ও বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর রিসার্চার এ্যান্ড কনসালটেন্ট মুফতি ফাহিম ফয়সাল আল মাসউদের সাথে।

তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘বাবার শবকে সামনে রেখে বিবাদের মূলে রয়েছে সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা। আর এই লোভ-লালসা তৈরি হয় নৈতিক শিক্ষার অভাবে। সেজন্য সমাজে আমাদের নৈতিকতার চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা আর ঘটবে না।’

প্রত্যেক অভিভাবককে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার আহবান জানিয়ে মুফতি ফাহিম ফয়সাল আল মাসউদ বলেন, ‘সমাজে নৈতিকতা চর্চার জন্য অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাই যদি নিজ নিজ সন্তানদের নৈতিকতার প্রতি মনোযোগী হন, তবে সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা সহজ ও সম্ভব।’

বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর রিসার্চার এ্যান্ড কনসালটেন্ট মুফতি ফাহিম ফয়সাল আল মাসউদ বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটার পেছনে অবশ্য শরীয়াহ বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতাও কম দায়ী নয়। শরীয়াহর নির্দেশ হলো, বাবা মারা যাওয়ার পর সর্ব প্রথম তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। সম্পদ বন্টন করা নয়। এজন্য সন্তানকে আমাদের প্রয়োজনীয় শরীয়াহও জানাতে হবে। তবে এসব ঘটনার অবসায়ন সম্ভব হবে।’

আসলে সন্তান পরিপালন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। গুণীজন থেকে এ শিল্পের অভিজ্ঞতা আহরণ করতে হয়। ইসলাম সুপরিকল্পিতভাবে এ শিল্পের পাঠদান করে। সেজন্য সন্তান পরিপালনে আমাদের ইসলামের শিক্ষা বাস্তবায়ন করা উচিৎ। তবে সমাজে এজাতীয় ঘটনা আর ঘটবে না। পিতামাতার তিরোধানে সন্তান ভারাক্রান্ত হবে। সবিনয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করবে, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগিরা।

সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হোক। সন্তানরা হয়ে ওঠুক আদর্শ সন্তান।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ