শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘সাংস্কৃতিক কাজগুলো একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল, আমরা বিস্তৃত করতে পেরেছি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাহ ইফতেখার তারিক। একজন আবৃত্তি শিল্পী, দক্ষ উপস্থাপক। ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে যখন পেছন থেকে তিনি ভয়েস দিতেন তাকে দেখার জন্য তাকিয়ে থাকত শত শত শ্রোতা। সংস্কৃতি নিয়েই তার পথচলা ও বিস্তৃতি। তবে পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন সৃষ্টিশীল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ আর দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে অবাক রঙের আলপনা মুগ্ধ করে মানুষকে। শিল্প আর সংস্কৃতি নিয়ে এখনো কাজ করছেন তিনি। স্বরশৈলী নামের আবৃত্তি সংগঠনের পরিচালক তিনি। কলরবের পরিচালকও হয়েছেন।

শাহ ইফতেখার তারিকের বাবার নাম শাহ আব্দুল আহাদ। পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার রূপশী গ্রাম। তবে তার জন্মস্থান নানাবাড়ী নেত্রকোণা জেলা সদরে। পড়ালেখা খিলগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ এস.এস.সি ও ১৯৯১ সালে এইচ.এস.সি কবি নজরুল ইসলাম সরকারী কলেজ থেকে। এরপর ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতের উপর স্নাতক ও স্নাতকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সঙ্গে সমসাময়িক অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন জামিল আহমদ

আবৃত্তি নিয়ে কাজ করছেন কখন থেকে?

আবৃত্তি হলো আমার একটা শখের জিনিস। ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি ভাল লাগে। তবে আবৃত্তি যে একটা শিল্প এর যে শৈল্পিক কাঠামো আছে তখনও ধারণা ছিলো না। কিন্তু আবৃত্তি করার সময় কাছের মানুষদের হয়তো ভালো লাগত।

আপনার আবৃত্তির প্রথম অ্যলবাম কোনটা, কবে প্রকাশ হলো?

আমার পাশে থাকা সেই মানুষজন উৎসাহ দিল, আমি যেন আবৃত্তির একটা অ্যালবাম বের করি। ব্যাপারটা আমার কাছে মন্দ লাগেনি। চিন্তা করলাম দেখি বের করা যায় কিনা। কিন্তু তখনও আমি আবৃত্তির নিয়ম কানুন ভালোভাবে বুঝতাম না। আবৃত্তির যে একটি ব্যকরণ আছে বা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন আছে সেটাও আমার জানা ছিলো না। তবে আবেগ থেকেই আবৃত্তি করতাম। ভাবতে ভাবতে ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালে প্রথম ‘‘‘দ্রুহ’’’ নামে আবৃত্তির অ্যালবাম বের করলাম।

অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

অ্যালবাম সবার কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে, হয়তো আমাকে ভালবাসার কারণে অ্যালবাম সবার কাছে ভালো লাগে। তবে আমি যখন অ্যালবামটা শুনি তখন আমার কাছে মনে হয়- অ্যালবামটি যথার্থ হয়নি। পরে যখন নিজে নিজেই অ্যালবাম নিয়ে সমালোচনা করলাম তখন বুঝতে পারলাম, অ্যালবামটি আরো উন্নত আরো সুন্দর করা যেতো। আর সে সময় আমাদের অঙ্গনে আবৃত্তি কোন শিল্প হিসেবে ছিল না বা এ বিষয় কেউ তেমন কিছু বুঝতো না।

আপনি কোথায় আবৃত্তি শিখতেন?

১৯৯৭ সালে শেষের দিকে বিশ্বসাহিত্যে কেন্দ্র এক বিশেষ আবৃত্তির কর্মশালা হয়েছিলো যারা মিডিয়ায় কাজ করে তাদের জন্য। সেখানে আমি অংশগ্রহণ করি। এখান থেকে আমার সামনে বিষয়গুলি পরিস্কার হতে লাগলো কিভাবে কী করতে হবে। তারপর সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে আল্লাহর রহমতে আবৃত্তির মজাটা পাই এবং আবৃত্তি শিল্পের যে স্বাদ তা আস্বাদন করতে পারি।

তারপর মনে হলো, আবৃত্তি নিজের কাছে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেই। আবৃত্তির পাশাপাশি উপস্থাপনাও করতে থাকি। বিভিন্ন অঙ্গন থেকে প্রশংসা পাই।

এসব প্রশংসা আপনার মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলত?

এই প্রশংসা আমাকে এক দায়িত্বশীল ভাব এনে দেয়। আমি এ দায়িত্ব বহন করতে মানিয়ে নিলাম এ কারণে যে, এ অঙ্গনে আরো কিছু প্রতিভাবান লোকের প্রয়োজন।

সে চেষ্টা থেকে আমি অনেক ছেলেকে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান করতে পেরেছি এবং আবৃত্তি ক্ষেত্রে তারা অনেক এগিয়ে। দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, আমার ছেলেরা যেকোন অঙ্গনের আবৃত্তি শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

আপনার প্রথম দিকের ছাত্র কারা?

প্রথম দিকে ছাত্র হলো, আসাদুল্লাহ তানজিম, তার কয়েক ব্যাচ পরে সাদ মাশফিক এর কয়েক ব্যাচ পর সালেহ আহমদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু নাম আছে, বহু ছাত্র আছে যারা বিভিন্ন স্থানে কাজ করে যাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করছেন কখন থেকে, কেন?

১৯৯১ সাল থেকেই আমি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আছি। আমার মনে হয়েছিল, সাংস্কৃতিক কাজগুলো একটি নির্দিষ্ট অঙ্গনে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। পুরো ইসলামিক অঙ্গনে সেরকম কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দেখতে পাইনি। শিল্পী সংকট ছিল। এ নিয়ে একটা মজার ঘটনাও ঘটেছিল। সেখান থেকেই সংস্কৃতিতে আসা।

কী একটা মজার ঘটনা ছিল বললেন?

ঘটনাটা হলো, আইনুদ্দীন আল আজাদের প্রথম যে অ্যালবামটি বের হয়, সেখানে শিল্পী সংকট ছিল- তখন আমি সেখানে কোরাস গানে কণ্ঠ দিয়েছিলাম।

আইনুদ্দীন আল আজাদকে কখন থেকে চিনতেন?

একবার ঝিনাইদহে একটি প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম সেখানে একটি ছেলের সংগীত শুনে ভালো লাগে। তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম, তার পেছনে কিছু শ্রম দিতে পারলে ভালো শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। তার নাম ছিলো আইনুদ্দীন আল আজাদ। সেখানে থেকে তার নাম নোট করে আনলাম।

ঢাকায় এসে আমার সহকর্মীদের সাথে তার ব্যাপারে আলোচনা করলাম, দেখলাম কেউ কেউ তাকে চিনে।

১৯৯৭ সালের দিকে সিদ্ধান্ত হলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার। তখন আমাদের একটি পত্রিকা ছিলো যা ট্যাবলয়েট আকারে বের হতো। তাকে পত্রিকার অফিসে থাকার জায়গা দেয় হলো এবং কিছু কাজ দেয়া হয়েছিল পত্রিকার কিন্ত তার মূল কাজ ছিলো সংগীত চর্চা। এরপর তার অ্যলবাম বের করার জন্য লেগে গেলাম। তার প্রথম অ্যলবাম অবগাহন বের হলো।

সে অ্যলবামের শুরুতে ভূমিকাস্বরূপ আমার কিছু কথা ছিল। গানের অ্যালবামে সেটাই ছিলো প্রথম ভূমিকা। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন অ্যালবামে ভোকাল দিয়েছি।

এরপর থেকে আমরা ঢাকার ভেতর প্রোগ্রাম শুরু করি। পর্যাক্রমে ঢাকার বাইরেও প্রোগ্রাম শুরু হয়। ২০০০/২০০১ সালে কবি মুহিব খানের সাথে দেখা হলো। তার প্রথম অ্যালবাম সীমান্ত খুলে দাও বের করি আমরা। তাকে প্রথম দেখাতেই বুঝতে পারি তিনি খুব বড় প্রতিভাবান।

এ পর্যন্ত কতটি অ্যলবামে ভোকাল দিয়েছেন?

আমার ব্যক্তিগতভাবে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ৫০০ উপরে অ্যালবামে ভোকাল দিয়েছি।

এ পর্যন্ত কতটি স্টেজ প্রোগ্রাম করেছেন?

৬শ’র উপরে স্টেজ শো অংশগ্রহণ করেছি, প্রতি বছর প্রায় ৪০এর মতো প্রোগ্রাম করেছি।

এখন তো এসব প্রোগ্রামে একেবারেই করছেন না?

এখন তো অধিকাংশ মানহীন প্রোগ্রাম ও গানে ছেয়ে গেছে। দেখা যায় নকল সুর, গানের সুরে ইসলামি সংগীত এসবের কারণে এখন বাচাই করে মানসম্পন্ন প্রোগ্রামগুলোতে থাকার চেষ্টা করি। আর আমি মানহীন গান, নকল সুর সহ্য করতে পারি না।

আপনি তো কলরবের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন, মূল দায়িত্বে কেন?

উপদেষ্টা পরিষদে থাকার পর আমার কাছে মনে হচ্ছিল, কলরবের যে সম্ভবনা আমি দেখছি তার বাস্তবায়ন খুবই কম হচ্ছে।এর পেছনের কারণ তাদেরকে আরো কাছে থেকে গাইড না করা। সেখান থেকেই মনে হয়েছিল মূল দায়িত্বে থাকলে হয়তো সে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারবো।

অবশেষে এ বছর তারা আবেদন করলে আমি সম্মতি দেই। আমরা এক সময় থাকবো না কিন্ত এই প্লাটর্ফম তো আজীবন থাকেব যা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.। আর এটা যেন মজবুত আরো দীর্ঘ হোক এজন্যই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

কলরব নিয়ে কেমন স্বপ্ন দেখেন?

টার্গেট হলো কলরব যেন আগামীর বাংলাদেশ বির্নিমাণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে সে জায়গাতে কলরবকে নিয়ে যাওয়া একমাত্র লক্ষ্য। অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারিত হয় সাংস্কৃতিক তৎপরতার মাধ্যমেই। যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলন এর সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা ছিলো। যারা আজ আমাদের দেশ পরিচালনা করছে তারা কোন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী বিধায় তাদের সাথে মিল রেখে দেশ পরিচালনা করছে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ