মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


বিদেশি তরুণ-তরুণীরা সাময়িক ইনজয়ের জন্য আসছে না তো!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের প্রেমের টানে সাত-সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে নিজ দেশ, পরিবার, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে চলে আসছেন ভিনদেশিরা। একজন, দুইজন নয় বরং চলতি বছরে এক ডজনেরও বেশি বিদেশি প্রেমিক-প্রেমিকা বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের প্রত্যেকই আমাদের দেশের চেয়ে উন্নত দেশের নাগরিক। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রেমিক পুরুষ প্রেমের টানে সম্প্রতি গাজীপুরে এসে বিয়ে করেন।

প্রেমের টানে ছুটে আসা এসব অতিথি পাখিরা শুধু প্রেমের জন্যই ছুটে আসছে নাকি উদ্দেশ্য ভিন্নকিছু? আমাদের তরুণ সমাজের জন্য এটি কী বার্তাই বা দিচ্ছে? আবেগের টানে গড়ে ওঠা এসব সংসারের মধুরতা কয়দিনই বা টিকবে? এসব বিষয়ে জানতে কথা বলেছিলাম দেশের দুই গবেষক আলেমের সঙ্গে।

এ বিষয়ে গবেষক আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন বলছেন, বিয়ে পূর্বে প্রেমটা দেশের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হোক বা বিদেশের ছেলে মেয়েদের মধ্যে এটা শরীয়ত সমর্থন করে না। প্রেমের নামে এসব নোংরামো আমাদের সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রেমের টানে বিদেশ থেকে তরুণ-তরুণীর যে স্রোত শুরু হয়েছে এটা বিপদ সীমা যাওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ।

আরেক গবেষেক আলেম ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন বলছেন, বাংলাদেশে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত নারীদের প্রেমে ইউরোপ আমেরিকার মত দেশ থেকে পুরুষরা ছুটে আসছেন। এখানে আসার পর শরীয়ত সম্মতভাবে ধর্ম পরিবর্তন করে তাদের সঙ্গে বিয়ে সম্পাদন হচ্ছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। যদি ধর্ম পরিবর্তন না করে থাকে তাহলে তো এই বিয়ে শরীয়তসম্মতভাবে বৈধ নয়। ইসলাম একে বৈধতা দেয় না। আর যদি শরীয়তসম্মতভাবে ধর্ম পরিবর্তন করে বাংলাদেশে এসে সে বিয়ে করে থাকে তাহলে এখানে প্রশ্ন থাকে, যে পুরুষটা ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশ থেকে এলো সে আসলে কে? তার বংশ পরিচয় কি? তার সামাজিক অবস্থান কি? প্রেমের পেছনে ভিন্ন কি উদ্দেশ্য তাকে এখানে নিয়ে এসেছে? ব্যক্তি জীবনে তার অভ্যাসগুলোই বা কি? এসব প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে প্রেমের টানে গড়ে ওঠা এসব সংসার একটি সঙ্কার ওপরে গড়ে উঠছে।

আমরা জানি ইউরোপ-আমেরিকার মত দেশগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারিবারিক প্রথা বলে কিছু নেই। প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসছে উন্নত দেশের তরুণরা। তারা কি সাময়িক ইনজয়ের জন্য আসছে নাকি দীর্ঘ কোন পরিকল্পনা? নাকি তারা কিছুদিন এখানে ঘর বেঁধে তার স্ত্রীকে ফেলে চলে যাবে নিজ দেশে? অথবা নিজ দেশে সঙ্গে করে যদি বাংলাদেশের কোন তরুণীকে নিয়েও যায় তাকে সেখানে কেমন সামাজিক মর্যাদা দেয়া হবে? তার সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং ধর্ম পালনে কতটা সুযোগ থাকবে? এসব আশঙ্কা কিন্তু থেকে যায়।’- বলেন, আফম খালিদ হোসাইন

এ ইসলামি গবেষকের আশঙ্কার প্রমাণও পাওয়া যায়। গত মাসে সংবাদমাধ্যমগুলোতে উঠে আসে একটি খবর, ‘প্রেমের টানে এসে বিয়ে করে উধাও ব্রাজিল কন্যা!’ এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রেমের টানে ব্রাজিল থেকে ছুটে আসে সিলভা নামে এক তরুণী। বিয়ে হয় রাজবাড়ীর এক তরুণের সঙ্গে। চারদিন সংসার করে ঢাকা ছেড়ে ব্রাজিলে পাড়ি জমান জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা। এরপর থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। সিলভা ব্রাজিলে ফিরে তার সেই ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেন। এমনকি যে সিম ব্যবহার করতো সেই সিমও বন্ধ করে রাখেন। ফেসবুকে প্রেম এরপর বিয়ে। তারপর বিচ্ছেদ! সংসার জীবন মাত্র ৪ দিনের।

এসব বিষয় সামনে রেখে ড. আ ফ ম খালিদ বলছেন, প্রেমের বিয়ে বাংলাদেশের তরুন-তরুণীদের মধ্যেও হয়। এক্ষেত্রে পারিবারিক জীবনে কোন ঝড় এলে দুই পরিবার একসঙ্গে বসে বিভিন্ন বিষয়ে সুরাহা করে দিতে পারে। অথবা আদালতের দারস্ত হলে কঠিন কোনো বিষয় সমাধান হয়। কিন্তু যদি বিদেশী এই তরুণরা বাংলাদেশের তরুণীকে বিয়ে করার পর তাকে একটি বিপদের মধ্যে ফেলে নিজ দেশে চলে যায় তাকে আপনি কিভাবে বিচারের মুখোমুখি করবেন? কিংবা পারিবারিক জীবনের ছোটখাটো ঝড় ঝাপটার মীমাংসাই বা কিভাবে করবেন! অথবা এমন হতে পারে সে নিজ দেশে বিয়ে-শাদী করে ছেলে সন্তান রেখে কয়েক মাস ইনজয় এর জন্য বাংলাদেশে এসেছে সবকিছু ফেলে আবার চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণীর গর্ভে কোনো সন্তান এলে তার ভবিষ্যত কী হবে? বাবার সম্পদের ওয়ারাসাত বিষয় সমাধা হবে কীভাবে? এসব প্রশ্ন সামনে রেখে কিন্তু এই বিয়ে গুলোকে ইতিবাচক এর চেয়ে নেতিবাচক বেশি মনে হচ্ছে।

আরো গভীর আশঙ্কা প্রকাশে করে এই গবেষক আলেম বলেন, বিশ্বে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা হলো নারী পাচার। যেসব তরুণ বিদেশ থেকে প্রেমের টানে ছুটে আসছে তারা আন্তর্জাতিক কোনো নারী পাচারকারী দলের সদস্য কিনা তাও তো জানার ব্যবস্থা নেই।

তবে বাংলাদেশে যেসব মুসলিম দেশের তরুণীরা এসে বাংলাদেশের ছেলেদেরকে বিয়ে করছে তাদের বিষয়ে আশঙ্কাটা অনেকটা কম বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে বিদেশ থেকে ছুটে আসা এ প্রেমিক-প্রেমিকাদের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দুরভিসন্ধি কোনো চক্রান্ত থাকতে পারে কি জানতে চাইলে মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন বলেন, ‘আমার কাছে এটা মনে হয় না। কেননা এমনটি যদি হতো তাহলে তারা এলিট শ্রেণীর মানুষদেরকে টার্গেট করত।’

তবে ইদানিং প্রেমের টানে ছুটে আসা বিদেশিদের ধর্মীয় বিভিন্ন চক্রান্তের কথা উঠে আসছে নানা মাধ্যমে।

কেএল/এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ