শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


বর্তমান সময়ে পায়ে হেঁটে হজ যাত্রা কি ইসলাম সমর্থন করে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। কাউসার লাবীব ।।

কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার আথাভানাদ এলাকার বাসিন্দা শিহাব ছিত্তুর। গত ২ জুন ফজরের নামাজ আদায় শেষে পবিত্র মক্কা নগরীতে হজপালনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পরদিন ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ কেরালার জুমা মসজিদে নামাজ আদায় করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন, তার এই হজযাত্রা কবুলের জন্য।

পবিত্র নগরীতে হজ পালন করতে ২৮০ দিনে ৮৬৪০ কিমি. পথ পাড়ি দিতে হবে তার। এ জন্য প্রতিদিন তাকে হাঁটতে হবে ২৫ কিমি.পথ।

জানা যায়, ভারতের কেরালা, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, হারিয়ানা এবং পাঞ্জাবের ওয়াগাহ বর্ডার পার হয়ে পাকিস্তানে পৌছাবেন তিনি। এরপর ইরান, ইরাক, কুয়েত পাড়ি দিয়ে পৌছাবেন সৌদি আরবে। পথিমধ্যে কোন ধরণের যানবাহনে চরবেন না ভারতীয় এই যুবক। রাত্রিযাপন করবেন দেশগুলোর বিভিন্ন মসজিদে। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিতে শিহাব ছিত্তুর সঙ্গে নিয়েছেন একটি ছাতা এবং ১০ কেজি ওজনের একটি ব্যাগ। যাতে রয়েছে কয়েকটি টিশার্ট, ট্রাউজার, বিছানার চাদর ও সামান্য কিছু খাবার।

গণমাধ্যমকে শিহাব বলেন, ‘আমি হেঁটে মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছি এবং প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছি। প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আমি একজন সুস্থ মানুষ এবং দিনে ২৫ কিলোমিটার হাঁটতে পারি। সুতরাং আমার হজযাত্রা শুরু করা আবশ্যক। আমার পরিবার, বন্ধুমহলসহ অসংখ্য মানুষ আমাকে সমর্থন করেছেন। ’

এদিকে আট মাস আগে শিহাবের প্রস্তুতি শুরু হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রার জন্য আমার ভ্রমণ বিমার প্রয়োজন ছিল, যেন পথে কোনও দুর্ঘটনার শিকার হলে আর্থিক সাহায্য পাই। এ ছাড়া পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরবের ভিসার প্রয়োজন ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরালিধরন আমাকে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন।’

উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার এ যুগে পায়ে হেঁটে হজ যাত্রার বিষয়টি ইসলাম কীভাবে দেখে? এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম গবেষক আলেম মুফতি হাফিজুদ্দীন ও মুফতি আব্দুল মাজিদের সঙ্গে। তাদের মতে, হজ সামর্থবান ধনী ব্যক্তিদের উপরই ফরজ হয়ে থাকে। যাতায়াত খরচ যার কাছে থাকবে তার ওপর হজ ফরজ। যে ব্যক্তির যাতায়াত খরচ নাই, তার জন্য হজ ফরজ নয়। সুতরাং বর্তমান সময়ে পায়ে হেঁটে কারো হজে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বা কেউ পায়ে হেঁটে মক্কা যেতে পারলেই তার ওপর হজ ফরজ হবে না। কেননা বিশ্বব্যাপী এখন অনেক প্রশাসনিক নিয়মকানুন রয়েছে যা পূর্বের যুগে ছিল না।

‘তবে কেউ যদি গরিব হয় এবং তার হৃদয়ে যদি বাইতুল্লার অঢেল প্রেম জন্মে। সে যদি বাইতুল্লাহকে ছুঁয়ে দেখার আশায় পায়ে হেঁটে মক্কায় রওনা দেয় তাহলে এতে দুষের কিছু নেই। এটি গভীর প্রণয়ের বিষয়। এ বিষয়টিকে ইসলাম নেতিবাচক ভাবে দেখে না।’ -বলেন, এ দুই গবেষক।

মুফতি হাফিজুদ্দীন আরো যোগ করেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে বলেছেন, ‘আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’ সুরা হজ: ২৭। এখানে পায়ে হেঁটে হজের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি প্রশাসনিক সব বিষয় সমাধান করে পায়ে হেঁটে হজে যেতে পারে, তাহলে সে যাবে। এজন্য ওইব্যক্তিকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। পাশাপাশি এ আয়াতে যেহেতু বাহন ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, সামর্থ থাকলে বাহন ব্যবহার করতে হবে। কেননা পায়ে হেঁটে হজযাত্রা বর্তমান সময়ে ততোটা নিরাপদ নয়।

এদিকে মুফতি আব্দুল মাজিদ পায়ে হেঁটে হজের বৈধতার বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি সতর্ক করে বলেন, কেউ যদি নিজের নাম ডাক চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড-এ নাম লেখানোর জন্য, অথবা সহজ ভাষায় ‘ভাইরাল’ হওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে হজ করার জন্য রওনা দেয় তাহলে এই বিষয়টিকে ইসলাম সমর্থন করে না। বরং এসব কাজ পরিত্যাগ করাই কাম্য। তবে এ কথাও মাথায় রাখতে হবে মানুষের মনের খবর একমাত্র আল্লাহ ভাল জানেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ