শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামের দৃষ্টিতে সড়ক ও সেতু নির্মাণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি ।।

ইসলাম ধর্ম একটি কল্যাণময় জীবন বিধান। ইহ ও পরকালে মানবজাতির সব সমস্যার সমাধান রয়েছে এই ধর্মে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের সফল দিকনির্দেশনা। ইসলাম যেভাবে মানুষের নিরাপত্তা বিধান প্রণয়ন করেছে, এভাবেই দিয়েছে সড়কের নিরাপত্তা ও চলাচলের বিধান।

ঘোষণা করেছে সড়ক উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখার জন্য মহাপুরস্কার। রাস্তা তৈরি ও সেতু নির্মাণ এবং মানুষের চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া, রাস্তায় সব যাত্রীর অধিকার নিশ্চিত করা, কষ্টকর পরিস্থিতি প্রতিহত করা ইত্যাদি ইসলামের অন্যতম বিধান, মহানবী (সা.)-এর অনুপম আদর্শ। এ ধরনের জনসেবায় রসুল (সা.) স্বয়ং নিবেদিত ছিলেন। জনসাধারণকে এর প্রতি সচেতন করেছেন। কেয়ামত পর্যন্ত আগত সবাইকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করেছেন।

রাস্তা নিরাপদ ও উন্মুক্তকরণের এ বিষয়টিকে তিনি ইমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। ইমানের পরিচায়ক ও একটি ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘ইমানের ৭০টিরও বেশি শাখা-প্রশাখা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শাখা হলো, এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সবচেয়ে নিচের শাখা বা নিম্ন ধাপটি হলো রাস্তায় কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)। অপর হাদিসে তিনি বলেন, ‘মানুষের ওপর প্রতিদিন তার শরীরের প্রতিটি গ্রন্থির জন্য সদকা দেওয়া আবশ্যক। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া একটি সদকা।’ (সহিহ মুসলিম)। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো মহান প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ ও জান্নাত পাওয়ার মাধ্যম হয়ে যাবে।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একবার রাস্তার ওপর একটি গাছের ডাল পড়ে ছিল, যা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক ছিল, অতঃপর এক লোক তা সরিয়ে দিল। এর ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেছেন।’ (সহিহ বুখারি)। পদ্মা সেতু স্বাধীন রাষ্ট্রের একটা অসম্পূর্ণতা মিটিয়েছে। দেশের বিরাট একটা অংশ চলাচলের মহাদুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

এর মাধ্যমে লাঘব হলো তাদের ভোগান্তি ও দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা। এই সেতু তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। এর ফলে উন্মোচন হবে উন্নয়নের নতুন নতুন দিগন্ত। ঘুচবে জনগণের নানামুখী দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও কষ্টের যাতনা। তাই এই প্রকল্পটি একটি মহৎ কর্ম। সৎ কর্ম। যারা এই বৃহত্তম প্রকল্পের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করেছেন তারা উত্তম প্রতিদান পাওয়ার উপযুক্ত।

এই মহৎ কাজটিকে রাজনৈতিক ও প্রতিহিংসায় পর্যবসিত না করে মানব সেবার নজির হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অংশ নিতে পারি এর রক্ষণাবেক্ষণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায়। উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি মানবজাতির কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার সৎ ও মহৎ উদ্যোগে।

উল্লেখ্য, রাস্তা বা সেতু ইত্যাদির কোনো ক্ষয়ক্ষতি করা বা ক্ষতি সাধন হয় এমন কিছু করা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, রাস্তা দখল করা মহাপাপ হিসেবে গণ্য হবে। হবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর।

লেখক : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর