বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামে মানবসেবার গুরুত্ব ও ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা আশিকুর রহমান রাহমানী চলছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ বন্যা বিপর্যয়। ধারণা করা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের স্বরণ কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা।

সিলেট সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বন্যায় প্লাবিত। এ ছাড়াও নেত্রকোনা, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, ঈশ্বরগঞ্জ সহ আরো প্রায় কয়েকটি জেলায় বন্যার এই প্লাবন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে কত মানুষের ঘর বাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কারো ঘরের টিনের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। কারো ঘরে গলা সমান, হাটু সমান পানি উঠেছে।

হাজার হাজার অসহায় নিঃস্ব মানুষের ঘর বাড়ি দালান সব বন্যার পানিতে প্লাবিত। কেউ কেউ স্বজন হারিয়ে শোকে কাতর। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ একটু উঁচু সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার ঠাই খুঁজছে। সমৃদ্ধ পানি নাই, খাবার নাই।

বানভাসি এলাকাগুলোতে খাদ্যের সংকটে শিশু বৃদ্ধারা হাউমাউ করছে। এই পরিস্থিতিতে যারা ভালো আছি তাদের উপর মানবতার বড় দায়িত্ব কাধে এসেছে। মানুষ মানুষের জন্য। মানব জাতিকে আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন "আশরাফুল মাখলুকাত" তথা সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানব হিসাবে। তার মাঝে থাকবে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, সম্মান, মানবতা, দয়াদ্রতা।

অপর মুসলিম ভাইয়ের কষ্টে এগিয়ে আসবে। তার জন্য ব্যথিত হবে, পাশে দাঁড়াবে,শান্তনা দিবে, সাহস যোগাবে । তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। ইসলাম আমাদের তাই শিক্ষা দেয়। ইসলাম মানুষকে অন্যের কল্যাণে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। কুরআন-হাদিসে মানব সেবার অসীম গুরুত্বারুপ করা হয়ছে। মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ،

‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন ,وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে’। মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/২৯৪৫; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৬; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫;

নবীজি (সা.)নিজে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সেবামূলক সংঘটন তৈরি করে ছিলেন । আর্তমানবতার সেবা, অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করে আরবের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলে।

রাসূলের এই মানব সেবামূলক কাজ বিধর্মীদের কাছেও প্রশংসনীয় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজে না খেয়ে গরীব দুঃখীকে খাবার দিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনকে ত্যাগ করে ছিলেন।

নিচে মানব সেবা কি কি হতে পারে তার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো।

১. অসহায় নিঃস্ব মানুষের পাশে দাড়ানো

অসহায় নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করার জন্য মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে তাকীদ দিয়েছেন। জান্নাতের প্রবেশের ঘাঁটির সন্ধান দিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন।

أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ، يَتِيْمًا ذَا مَقْرَبَةٍ، أَوْ مِسْكِيْنًا ذَا مَتْرَبَةٍ،

‘অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা, ইয়াতীম নিকটাত্মীয়কে অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে’ (বালাদ ১৪-১৬)।

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হ’ল তারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিঃস্ব-দরিদ্র, ইয়াতীম ও কারাবন্দীদেরকে খাদ্য দান করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন।

وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِيْنًا وَيَتِيْمًا وَأَسِيْرًا، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا،

‘তারা আল্লাহর মহববতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদের আহার্য প্রদান করে। (তারা বলে) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আর আমরা তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’ (দাহর ৭৬/৮-৯)

নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের অন্যতম উত্তম আমল। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ،

‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি (অভাবীকে) খাদ্য খাওয়াবে’।

বুখারী হা/১২, ২৮, ৬২৩৬; মুসলিম হা/৪২; আহমাদ হা/৬৭৬৫। প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে পেটপুরে খাওয়া কোন মুমিনের কাজ নয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ، ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’। সহীহুল জামে‘ হা/৫৩৮২; সহীহ আত-তারগীব হা/২৫৬১; বায়হাক্বী হা/২০১৬০; মিশকাত হা/৪৯৯১।

উল্লিখিত আয়াত সমূহ ও হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করা ইসলামের অন্যতম সেবা মূলক কাজ, যার মাধ্যমে জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২.রোগীর সেবা করা ও দেখতে যাওয়া

রোগীর সেবা করা বা রোগীকে দেখতে যাওয়া ইসলামের অন্যতম সেবা ও সমাজকল্যাণমূলক ও পুণ্যময় কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একে এক মুসলিমের প্রতি অন্য মুসলিমের হক্ব বা অধিকার বলে অভিহিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ.

‘একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি অধিকার রয়েছে। যথা- ১. যখন কোন মুমিনের রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করা ২. কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযাহ ও দাফন-কাফনে উপস্থিত হওয়া ৩. কেউ দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করা অথবা কারো ডাকে সাড়া দেয়া ৪. সাক্ষাতে সালাম প্রদান করা ৫. হাঁচি দিলে জবাব দেয়া এবং ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মুমিনের কল্যাণ কামনা করা’।
তিরমিযী হা/২৭৩৭; নাসাঈ হা/১৯৩৮;

রোগীকে দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, أَطْعِمُوا الْجَائِعَ، وَعُوْدُوا الْمَرِيضَ، وَفُكُّوا الْعَانِىَ ‘ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর’। বুখারী হা/৫৩৭৩, ৫৬৪৯; আবূদাঊদ হা/৩১০৫; আহমাদ হা/১৯৫১; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩২৪;

অন্য বর্ণনায় এসেছে, عُودُوا الْمَرِيضَ وَاتَّبِعُوا الْجَنَازَةَ تُذَكِّرُكُمُ الآخِرَةَ ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, জানাযায় অনুসরণ করবে, তাহ’লে তা তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’। আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৮; সহীহাইন হা/১৯৮১।

৩. ত্রাণ বিতরণ

ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষ দুর্যোগে নিপতিত হয়ে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে নিঃস্ব হ’তে পারে। যেমন- ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, নদী ভাঙ্গাসহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোন সংকটময় অবস্থায় অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,

مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ،

‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদ সমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হ’তে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। বুখারী হা/২৪৪২, ৬৯৫১; মুসলিম হা/২৫৮০, ২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন’। মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/১৯৩০; আবূদাউদ হা/১৪০০, ৪৯৪৬; ইবনু মাজাহ হা/২২৫।

পৃথিবীর অধিবাসীদের বিপদাপদে, সংকটময় মুহূর্তে সাহায্যে এগিয়ে আসলে আসমানের অধিবাসী আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

ارْحَمُوا مَنْ فِى الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ، ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর, তাহ’লে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’। তিরমিযী হা/১৯২৪; আবূদাঊদ হা/৪৯৪১; আহমাদ হা/৬৪৯৪;

৪.অসহায় শরণার্থীকে আশ্রয় দান ও সাহায্য

নিঃস্ব অসহায় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া সাহায্য করা ইসলামে অন্যতম একটি সেবামূলক কাজ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শরণার্থীর বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়। অতীতকাল থেকেই মানুষ নিজ জন্মভূমিতে বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত, অসহায় নিষ্পেষিত, বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে বা এলাকায় উদ্ববাস্থ হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানগণ মক্কার কাফির-মুশরিকদের দ্বারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত হয়ে প্রথমে আবিসিনিয়ায় এবং পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সহ মদীনায় হিজরত করেন।

আল্লাহপাক ঈমানের বরকতে আনছাগণের মধ্যে এমন মহববত সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, মুহাজিরগণকে ভাই হিসাবে পাওয়ার জন্য প্রত্যেকে উদ্গ্রীব ছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তারা ছিলেন ঈমানী প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা। সবাই মুহাজিরগণকে স্ব স্ব পরিবারে পেতে চান। ফলে মুহাজিরগণকে আনছারদের সাথে ভাই ভাই হিসাবে ঈমানী বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তারা তাদের জমি, ব্যবসা ও বাড়ীতে মুহাজিরদেরকে অংশীদার করে নেন। এমনকি যাদের দু’জন স্ত্রী ছিল, তারা একজনকে তালাক দিয়ে মুহাজির ভাইকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মুহাজিরগণের প্রতি এরূপ অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য তাঁরা ইতিহাসে ‘আনছার’ নামে অভিহিত হয়েছেন।[38

মুহাজিরদের আশ্রয়দানকারী আনছারদের প্রশংসায় মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন।

وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং তাদেরকে (ফাই থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। বস্ত্ততঃ যারা হৃদয়ের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)।

কোন মানুষ নিজ মাতৃভূমিতে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিলে তাদেরকে কিভাবে আশ্রয় দিতে হয়, সাহায্য করতে হয় এবং ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে হয় তার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মদীনার আনছারগণ। এমন বদান্যতার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে সত্যিই বিরল।

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন। لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রতি দয়া করেন না’।

বুখারী হা/৭৩৭৬; মুসলিম হা/২৩১৯; তিরমিযী হা/১৯২২; মিশকাত হা/৪৯৪৭।

প্রিয় পাঠক, ইসলাম আমাদেরকে সেবামূলক কাজে উৎসাহিত করেছে। উপরের কুরআন হাদিসের দলিল দ্বারা এটাই বুঝে আসে। আজ আমাদের আশপাশে বন্যার প্লাবনে কত অভুক্ত, কত অসহায়, কত দরিদ্র, কত দিনমজুর, কত বৃদ্ধ, কত কৃষকরা হাহাকার করছে। রোদন করছে।

তারা যখন কাজ করার সুযোগ পেত, তখনই তো পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। কঠিন বন্যা বিপর্যয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের পিঠ আজ দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে গেছে। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে তারা । অভুক্ত-অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া তাদের কোনো গত্যন্তর নেই ।

আজ তাদের পাশে দাঁড়ানো, দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া, আমাদের নৈতিক দায়িত্ব! মুক্তির ধর্ম ইসলাম আমাদের এই শিক্ষাই দেয়!

আজই আমাদের মোক্ষম সময়, রাসূলের মহানুভবতা, মানবতা ও আতিথেয়তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের এবং বৃদ্ধ, দিনমজুর, মিসকিন ও শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর! আল্লাহ তা'আলা তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: তরুণ আলেম, ইসলামি চিন্ততাবিদ,লেখক গভেষক।

-এটি


সম্পর্কিত খবর