মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মানুষের সবচেয়ে বড় বিপদ কী জানেন?: মাওলানা তারিক জামিল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মােহতারাম ভাই ও বন্ধুগণ! দুনিয়াতে মানুষ যত বিপদের মুখােমুখি হয়। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপদ হলাে মৃত্যু। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, দুনিয়াতে মানুষের উপর যত বিপদাপদ আসে তার মধ্যে মৃত্যুই হলাে সবচেয়ে বড় বিপদ।

কিন্তু মানুষের স্বভাব হলাে, সে অন্যান্য ছােটখাট বিপদ নিয়ে চিন্তা করে এবং তা প্রতিরােধের বিবিধ উপায় নিয়ে পরিকল্পনা করে, আর আগামী দিনের চিন্তায় বিভাের হয়ে থাকে। অথচ সবচেয়ে বড় বিপদ মৃত্যুর কথা তার চিন্তা পথে মােটেও উদয় হয় না।

পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে একমাত্র মানুষই হলাে এমন যারা আগামী কাল নিয়ে চিন্তা করে । পিপিলিকা খাদ্য সংগ্রহ করে। মৌমাছি মধু আহরণ করে।

কিন্তু তাদের এই সঞ্চয়-মানসিকতা আগামী দিনের চিন্তা থেকে নয়, বরং এটা তাদের সৃষ্টিগত স্বভাব। খাদ্য সংগ্রহ বা মধু আহরণ তারা এ চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে করে না যে, এই সঞ্চিত খাদ্য তাদের আগামী দিনের প্রয়ােজন মিটাবে।

বরং আল্লাহ পাক তাদেরকে এই আহরণের স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। ফলে অন্য কোন চিন্তা নয়; বরং সৃষ্টিগত স্বভাবের তাড়নাতেই তারা অহর্নিশি সঞ্চয়ের জন্য ছুটোছুটি করতে থাকে। পক্ষান্তরে মানুষ সচেতনভাবেই আগামী দিনের চিন্তা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় বিভাের হয়ে থাকে। আল্লাহ পাকও মানুষকে আগামী দিনের চিন্তার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেন, মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্য সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। তােমরা যা কর, আল্লাহ তা'আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।-সুয়া হাশর - ১৮

আল্লাহর নবী সা. আমাদেরকে আগামী দিনের চিন্তায় ব্যস্ত হবার উপদেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন- “আগামী দিন হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, অথচ আজ তােমাদের আমলের কোন প্রস্তুতি নেই!।

তাে যা বলছিলাম, পৃথিবীতে মানুষের সবচাইতে বড় বিপদ হলাে মৃত্যু এই পৃথিবীকে চিরদিনের মত ছেড়ে যাওয়া। মানুষ কত স্বপ্ন নিয়ে খার-বাড়ী তৈরী করে। শুধু মানুষই নয়, এইযে ছােট ছোট পাখী বিপুল উৎসাহের সঙ্গে | খড়কুটো ঠোটে করে বয়ে এনে বাসা তৈরী করে, তাদের মনে হতো না।

একটা স্বপ্ন থাকে। নিজের থাকার জন্য একটা ঠিকানা তৈরী করা—এটা প্রাণী। মারেই স্বভাব-চাহিদা। তেমনি মানুষও হৃদয় ভরা স্বপ্ন নিয়ে সুরম্য ঘরবাড়ী তৈরী করে। তারপর হয়তাে সে ঘরে নিজের স্বাকবারও সুযোগ হয় না, তার আগেই মানুষের কাঁধে চড়ে নিরবে চলে যেতে হয় কবরের অন্ধকার ঠিকানায়।

আরাম-আয়েশের জন্য মানুষ কতনা আয়ােজন করে। বিদেশী দামী দামী আসৰাৰ সংগ্রহ করে । চোখ ধাধানাে ডিজাইনের খাটি তৈরী করে। শয়নকক্ষে পুষ্টি করে ঝাড়বাতির মন আলাের লুকোচুরি খেলা। কিন্তু সময় এই বিপুল আয়োজন কয়দিনই বা মানুষ ভােগ করতে পারে।

বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎই একদিন শেষ নােটিশ এসে উপস্থিত হয়। সমাপ্ত বিলাশবাসন ছেড়ে চলে যেতে। হী অশোর কবলে। আলাে ঝলমাল ঘরের বাসিন্দা হয়ে পড়ে অন্ধকার নিলয়ের। অধিবাসী। যে দেহ একদিন মশা-মাছি থেকে রক্ষা করার জন্য কত আয়োজন গৃহিত হয়েছে, সে দেহে জোৱ পােকামাকড় এসে বাসা বাঁধে। যে দেহকে একদিন শীত-তাপ ও ক্ষুধা-তৃষ্ণা থেকে ৰক্ষা করার জন্য বিবিধ ব্যবস্থা গৃহিত হয়েছে, সে দেহ পঁচেগলে পােকামাকড়ের আহাৱে পরিণত হয়।

কেউ তার চামড়া কুড়ে কুড়ে খায়। কেউ বা জি কেটে টুকরাে টুকরাে করে। কেউ তার মাথার মগজে কিলবিল করতে থাকবে। যে উলরের লােভ মিটানাের জন্য গোটা জীবন হালাল-হারামের বিচার না করে কেবল খুটাছুটি করে মরেছে, কবরের

মাটির নন্দীশালার সাথে সে পেটই পড়ে ফুলে ফেটে যাবে। আল্লাহ পাক বলেন--হে আমার বাম্পার দুনিয়ার প্রতি লােভের দৃষ্টিতে তাকিয়ো না । কারণ কবরে তোমার দেহের যে অঙ্গটি সর্বপ্রথম পােকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হবে, সেই অতি অল তোমার।

যে অঙ্গটি মায়ের প্র যনেশকে তার কাছে দৃশ্যমান লেখে তার গবনকে আলােকময় করে রাখে, আল্লাহ পাক সবার আগে সে অপটিই পােকামাকড়ের হালা করে দিবেন।

তে যে মানুষের মাথার উপর হিংস্র মৃত্যু থাবা উচিয়ে আছে। মৃত্যুর পর কবলে যার এমন করুন ও ভয়াবহ পরিণতি আপেক্ষা কৰায়ে। যার চারিদিকে বিপদের ফাদ প্যতা আছে। পলে পলে আর পা পিছলে গভীর খাদে পড়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা বিরাজ করছে।

দুশ্চিন্তা-দুৰনার কালাে মেঘ ফুড়ে যার আকাশে কখনাে আশার আলাে উকি দেয় না। ফা-আকাশে হঠাৎ হঠাৎ হয়তো কখনাে আনন্দের বিদ্যুৎ চমকে ওঠে কি পরক্ষণেই তা মিলিয়ে যায় দূর দিগন্তে । আবার সেই পরেশানী ও দুশ্চিন্তায় অথৈ সাগরে হাবুড়ব। রােগ-ব্যাধি নাহাের সঙ্গীর মত পিছু লেগে থাকে।

আত্মীয় বন্ধুদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং সন্তানের অবাধ্য আলিম অতিষ্ঠ করে তােলে। আর ওদিকে কবর প্রতিদিন পাঁচবার ডেকে বলে “আমি একাকিত্বের ঘর, আমি অন্ধকার ঘর, আমি পােকামাকড়ের ঘর। কাজেই আমার নিকট আসার সময় কিছু উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসো। তাে সে মানুষের পক্ষে মৃত্যু ভুলে দুনিয়ার চাকচিক্যের পিছনে ছুটে বেড়ানাে কতটা সঙ্গত ও বুদ্ধিমানের আচরণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ