শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


একজন রাষ্ট্র প্রধান যেভাবে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করেছেন: হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত আয়েশা সিদ্দীকা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আমার আব্বাজান অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে অসুস্থে তিনি দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা আমার সম্পদ যাচাই—বাছাই করো।

আমি খেলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যে সম্পদ আমার নিজস্ব সম্পদের চেয়ে অতিরিক্ত আছে, সেগুলোকে তোমরা আমার মৃত্যুর পর আমার পরবর্তী খলিফার কাছে হস্তান্তর করে দিয়ো। কারণ, আমার জীবদ্দশায় আমি যিম্মাদারী পালন করার কারণে সেগুলো ব্যবহার করা আমার জন্য হালাল মনে করতাম। আমি মারা যাওয়ার পর সেগুলো আমার ব্যবহার করা হালাল নয়’।

তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী সেই সম্পদ হজরত উমর রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিলো। তিনি সেগুলো দেখে কাঁদতে শুরু করেন। এবং বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর দয়া করুন। তিনি তাঁর পরবর্তী লোকদেরকে অনেক কষ্ট ফেলে দিয়েছেন’।

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আমার আব্বাজানের যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলো। তখন তিনি উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয় আমার জানা মতে এই উটনী ও পালিশকারী গোলাম, যে গোলাম মুসলমানদের তরবারি পালিশের কাজ করতো এবং আমাদেরও খেদমত করতো এই দুটি জিনিস ছাড়া বায়তুল মালের কোন জিনিস আমার কাছে নেই। সুতরাং যখন আমি মারা যাবো, তখন এই দুটি জিনিসকে তোমরা হজরত উমর রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে পেঁৗছে দিয়ো’।

অতপর যখন তিনি মারা যান, তখন আমি এই দুটি জিনিস হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে পেঁৗছে দিই। হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এইগুলি দেখে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর উপর দয়া করুন। তিনি তাঁর পরবর্তী লোকদেরকে কষ্টে ফেলে রেখে গেছেন’।

হজরত মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন মারা যান, তখন বেতন বাবদ বায়তুল মালের ছয় হাজার দেরহাম তিনি ভোগ করেছিলেন।

যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তিনি পরিবারে লোকজনকে ওসিয়ত করে বলেন,নিশ্চয় হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে ছাড়েননি। (অর্থাৎ বায়তুল মাল থেকে বেতন গ্রহণ করতে তিনি আমাকে বাধ্য করেছেন) ফলে বাধ্য হয়ে আমি বায়তুল মাল থেকে ছয় হাজার দেরহাম গ্রহণ করেছি। অমুক অমুক স্থানে আমার যেসব বাগান আছে, সেগুলোর দ্বারা তোমরা উক্ত গৃহিত বেতন বায়তুল মালে পরিশোধ করে দিয়ো’।

হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন মারা যান, তখন ওসিয়তকৃত এই বিষয়টি হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সামনে তুলে ধরা হয়। হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এমন সতর্কতা দেখে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে ওঠেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর দয়া করুন। তিনি পছন্দ করেছেন যে, তাঁর ইন্তেকালের পর কেউ তাঁর উপর কোন অভিযোগ ওঠাতে না পারুক।

তাই তিনি ওসিয়ত করে পরবর্তী লোকজনের অভিযোগ করার পথ বন্ধ করে দিয়ে যান। তবে আমি যেহেতু তাঁর পরবর্তী খলিফা, তাই আমি আমার নীতিতে তোমাদের কাছে উক্ত সম্পদ ফিরিয়ে দিলাম। তোমরা নিয়ে আসার কারণে তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের যিম্মাদারীও পালন হয়ে গেছে’।

সূত্র: তবাকাতু ইবনি সাআদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ