শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আল্লাহওয়ালাদের নেক নজরের বরকতে যেনাকারী যখন আল্লাহওয়ালা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত মুজাফফর হুসাইন রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার ঘটনা৷ যিনি দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার মুদাররিস ছিলেন৷ ছিলেন উঁচু মাপের আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ৷

তিনি একবার জালালাবাদ বা শামেলী অতিক্রম করে কোথাও যাচ্ছিলেন৷ সেখানে অনাবাদ একটি মসজিদ নজরে আসে৷ তিনি উক্ত মসজিদে নামাজ পড়ার জন্যে ওজুর পানি নিয়ে আসতে বলেন৷ ওজু করেন৷

মসজিদ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে নামাজ পড়েন৷ নামাজ শেষ করে সেখানের একজনকে জিজ্ঞাস করলেন, এখানে কি কেউ নামজী নেই? লোকটি বললো, এইতো সামনে খান সাহেবের বাড়ি৷ তার মদ ও নারীবাজি করার নেশা৷ যদি সে নামাজ পড়তো, তাহলে তার দেখাদেখি আরো অনেকেই নামাজ পড়তো৷

তিনি খান সাহেবের বাড়িতে যান৷ তখন খান সাহেবের কাছে পতিতারা বসা ছিলো৷ সেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো৷ তিনি খান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ভাই! খান সাহেব! যদি আপনি নামাজ পড়তেন, তাহলে আপনার দেখাদেখি আরো কিছু মানুষ নামাজ পড়া শুরু করতো৷ এতেকরে মসজিদটিও আবাদ হয়ে যেতো৷ হজরতের কথা শুনে খান সাহেব বললো, ঠিক আছে৷ আমি নামাজ পড়বো৷ তবে শর্ত হলো, আমি ওজু করতে পারবো না আর এইসব কাজ ছাড়তে পারবো না৷ হজরত বললেন, ঠিক আছে৷ আপনি ওজু ছাড়াই নামাজ পড়বেন আর এইসব কাজও চালু রাখবেন৷ কোন সমস্যা নেই৷ খান সাহেব হজরতের সাথে নামাজ পড়ার ওয়াদাবদ্ধ হলো৷

হজরত সেখান থেকে একটু দূরে এসে নামাজ পড়লেন৷ এবং সেজদার মধ্যে অনেক বেশি রোনাজারি করলেন৷ সাথীদের একজন হজরতের কাছে জানতে চাইলো, হজরত!

আজ আপনার থেকে দুটি ভিন্ন জিনিস দেখেছি যেগুলো ইতোপূর্বে দেখেনি৷ একটি হলো, আপনি মদ খাওয়া ও যিনা করার অনুমতি প্রদান অন্যটি হলো সেজদায় কান্নাকাটি৷ উত্তরে হজরত বললেন, সেজদায় আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করেছি৷ বলেছি, আয় আল্লাহ তায়ালা! আমি তো খান সাহেবকে তোমার সামনে দাঁড় করে দিয়েছি কিন্তু অন্তর আপনার হাতে৷ আপনি তার অন্তরকে পরিবর্তন করে দিন৷

ওই দিন খান সাহেবের অবস্থা ছিলো, যখন পতিতারা চলে যায়, তখন জোহরের নামাজের সময় হয়ে যায়৷ তখন হজরতের সাথে দেওয়া ওয়াদা খান সাহেবের মনে এসে যায়৷ তিনি ভাবলেন, আজ প্রথম দিন৷ সুতরাং গোসল করেই নামাজটি আদায় করি৷ আগামীকাল থেকে অজু ছাড়া পড়বো৷ তাই খান সাহেব গোসল করে পবিত্র কাপড় পরে নামাজ আদায় করলো৷ নামাজের পর বাগানে চলে যায়৷ বাগানে গোসলের ওজু দ্বারাই আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করলো৷

মাগরিব পর বাড়িতে আসেন৷ পতিতারা প্রতিদিনের রুটিন মাফিক নির্দিষ্ট সময়েই এসে হাজির ছিলো৷ তিনি খাবার খেতে ঘরে যান৷ হঠাৎ বিবির দিকে দৃষ্টি পড়ে যায়৷ তিনি বিবির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন৷ তাঁদের বিয়ের সাত বছরের মধ্যে তিনি কখনো স্ত্রীর কাছে যাননি৷ স্ত্রীর চেহারা দেখেননি৷ আজই দীর্ঘ বছর পর হঠাৎ স্ত্রীর চেহারা দেখেছেন৷ দেখেই তিনি স্ত্রীর প্রতি আসক্ত ও ভেঙে পড়েন৷ সাথে সাথে ঘর থেকে বাইরে এসে খাদেমকে বলেন, এইসব পতিতাদেরকে বিদায় করে দাও৷

আর বলে দাও, ওরা যেনো আগামীকাল থেকে এখানে কেউ না আসে৷ আর বৈঠকখানার সবকিছু ঘরের ভিতরে নিয়ে আসো৷ আজ থেকে এখানে কোন গুনাহের কাজ চলবে না৷ বলা হয়, এই খান সাহেব পরবর্তীতে এমন আল্লাওয়ালা বুজুর্গ হয়েছিলেন যে, একাধারে পঁচিশ বছর তাঁর তাহাজ্জুদের নামাজ কাজা হয়নি৷ সুবহানাল্লাহি তায়ালা৷

সূত্র: আরওয়াহে সালাসা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ