
নতুন বছরে সময়মতো পাঠ্যপুস্তক ছাপানো বড় চ্যালেঞ্জ: শিক্ষামন্ত্রী
আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নতুন বছরে সময়মতো পাঠ্যপুস্তক ছাপানোতে বড় চ্যালেঞ্জ… ...
নুরুদ্দীন তাসলিম।।
করোনা, লকডাউন, বিধি-নিষেধ, ঘর বন্দী জীবন, অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক- ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই বিষাদের ছাপ ছিল ২০২১-এর বেশ কিছু অংশ জুড়ে। এর মধ্যেই ঘটে গেছে কত ঘটনাপ্রবাহ। চোখে অশ্রু ঝরিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন বরেণ্য আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক, গবেষক, লেখক ও সাংবাদিকদের অনেকেই।
২০২০ এর মত এ বছরেও বর্ষীয়ান আলেমদের ইন্তেকাল বেশ ধাক্কা দিয়েছে ইসলামি অঙ্গনকে। ২১- এ হারানো বরেণ্যজনদের নিয়েই বছরান্তে স্মৃতিমন্থনের এই আয়োজন। আজ পাঠকের জন্য রইল চার পর্বের এই প্রতিবেদনটির প্রথম পর্ব।
২০২১- এর একেবারে শুরুতে ৩জানুয়ারি শোক বার্তা নিয়ে আসে শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর সর্বশেষ খলিফা আল্লামা আব্দুল হালিম ইসলামাবাদী রহ.-এর ইন্তেকালের খবর।
বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ জানুুয়ারি (রোববার) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়াস্থ তেওয়ারিখীল গ্রামে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আল্লামা আব্দুল হালিম ইসলামাবাদীর জন্মভূমি আনোয়ারা উপজেলা পীরখাইন গ্রামে। তিনি হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর ৩৯ তম ও সর্বশেষ খলিফা ছিলেন।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে অবস্থানকালীন সময়ে নিরবে নিভৃতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মিয়ানমারের প্রবীণ আলেম ও শায়খুল হাদিস মুফতি কারি মুহাম্মদ ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ইন্তেকাল করেন ১৮ জানুয়ারি (সোমবার)।
মুফতি ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ছিলেন মিয়ানমারের প্রবীণ আলেম ও কারি। এক সময় তিনি বার্মার সরকারি চ্যানেলে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করতেন।
রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তার অমানবিক নির্যাতনের সময় তার নাগরিত্ব বাতিল করে তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে নিরূপায় হয়ে তিনি বাংলাদেশে হিজরত করতে বাধ্য হন। ১১০ বছর বয়সী এ প্রবীণ আলেম বার্মার মংগডুর অধিবাসী ছিলেন। তিনি আরাকান মুসলিমদের একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ছিলেন।
মুফতি ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ভারতের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা সম্পন্ন করেন। পড়ালেখা শেষ করে তিনি আরাকানের মুংগডুতে জামিয়াতুল আশরাফিয়ার শাইখুল হাদিস হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এক সময় বার্মার সরকারি চ্যানেলে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্বাচিত হন এবং দেশটির বিখ্যাত কারি হিসেবে সরকারি চ্যানেলে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করতেন।
রাজধানীর জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার প্রবীণ উস্তাদ মাওলানা আব্দুর রব (৭ জানুয়ারি) মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা আব্দুর রব লালবাগ মাদরাসায় মদিনার হুজুর নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন লালবাগ জামিয়ায় হাদিসের কিতাব পড়িয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৭ বছর।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার শাইখুল হাদীস, ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতীব আল্লামা শামসুল ইসলাম প্রায় ১৯ দিন আইসিইউতে থাকার পর ৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মরহুম শাইখুল হাদীস আল্লামা শামসুল ইসলাম রহ. একজন বিচক্ষণ ও বর্ষীয়ান আলেমদ্বীন। প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। হাদীস শাস্ত্রের উপর বিশেষ দক্ষতা থাকায় আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় ১৯৮৩ থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে পাঠদান দিয়ে আসছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচারে তাঁর রয়েছে অসামান্য ভুমিকা। ফলে পুরো দেশেই তাঁর হাজারো ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে।
এ ছাড়াও তিনি তাফসিরে শাস্ত্রেও অসামান্য দক্ষতা থাকায় ১৯৮৬ থেকে ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় কোরাআনে পাকের তাফসির করতেন। সুরা ফাতেহা থেকে শুরু করে তিনি সূরা ইকরা পর্যন্ত তাফসির সম্পন্ন করেছিলেন। তার তাফসিরেহাজারো মহিলা দ্বীনের পথে ফিরে এসেছেন। এ জন্য কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যমনি হিসেবে সবাই তাঁকে সমিহ করতেন।
সাংবাদিক, ছড়াকার ও লেখক এবং দৈনিক যুগান্তরের দীর্ঘদিনের বিভাগীয় সম্পাদক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ (বুধবার) ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
হাফেজ আহমাদ উল্লাহ দৈনিক যুগান্তরের শুরু থেকেই পত্রিকাটির সঙ্গে ছিলেন। ২১ বছরের বেশি সময় তিনি যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতাটি সম্পাদনা করেন। এর বাইরেও তিনি বিভিন্ন সময় ফিচার বিভাগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তিনি অগণিত নবীন লেখককে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
আহমাদ উল্লাহর জন্ম ১ নভেম্বর ১৯৫৮ নরসিংদীতে। তিনি কুরআনের হাফেজ ছিলেন এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস রহ. (বুধবার) ৩১ মার্চ ভোর ৪.৩০মিনিটে রাজধানী ঢাকার মহাখালী শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মুফতি ওয়াক্কাস যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোটরগাড়ি প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। এর পর তিনি এরশাদ সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তী সময় মুফতি ওয়াক্কাস জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামে ধর্মভিত্তিক সংগঠনে জড়িত হন। একাধারে ২৪ বছর জমিয়তের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন তিনি।
মুফতি ওয়াক্কাস ২০২০ সালের শেষ দিকেও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে প্রয়াত হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীর অবর্তমানে অভ্যন্তরীণ নানা কারণে তিনি নিজেই হেফাজত ছেড়েদেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সহসভাপতি, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়ার কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া এমদাদিয়া মাদানীনগরের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রামের জামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদরাসার পরিচালক আল্লামা নোমান ফয়জী আর নেই (সোমবার) ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।
হাই ডায়াবেটিস ও পেশাবের রাস্তায় ইনফেকশন দেখা দিয়েছিলো তার। উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালের ডা. হায়দার আলীর পরামর্শে চিকিৎধীন ছিলেন তিনি। এরপর ইন্তেকাল করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এ উপদেষ্টা আল্লামা নোমান ফয়জী।
বিশিষ্ট কবি, ছড়াকার ও নজরুল গবেষক মহিউদ্দিন আকবর বুধবার (৭ এপিল) রাত ৩ টায় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কবি মহিউদ্দিন আকবর একজন ছড়াকার, লেখক ও নজরুল গবেষক। কিন্তু তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। মুক্তিযুদ্ধের একদম শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। যুদ্ধে তিনি তার ভাই, চাচাসহ একাধিক আপনজনকে হারিয়েছেন।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ বুধবার (৫ এপ্রিল) ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে ড. আহসান উল্লাহ ফয়সালের বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৪৫ বছর।
অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ ফয়সাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যাল থেক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল মালেক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) ইন্তেকাল করেন।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে দীর্ঘ অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভাগে শিক্ষাদান করেছেন তিনি। শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদেরকে সবসময় আপনি বলে সম্বোধন করতেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি নানামুখি সামাজিক কার্যক্রমেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন মুহাম্মদ আব্দুল মালেক। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা বই তাঁর রচনা।
এটি/এনটি