শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বাংলাদেশে ‘ভাষা’ হিসেবে আরবি শেখার গুরুত্ব কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

‘অ আ ক খ'র সাথে আরবি বর্ণমালা আলিফ, বা, তা, শিখে বড় হতে দেখা যায় বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশুদের। শিশুকাল থেকেই আরবি ভাষার প্রতি তৈরি হয় এক ধরনের শ্রদ্ধা ও আবেগের সম্পর্ক। তবে শিশুকাল থেকে আরবি বর্ণমালার সাথে পরিচয় হলেও ভাষা হিসেবে আরবিটা অজানা থেকে যায় অনেকেরই। বাংলাদেশে ভাষা হিসেবে আরবি চর্চার গুরুত্বও খুব একটা নেই বললেই চলে। এর কারণ হিসেবে অনেকেই দায়ী করেন শেখানোর পদ্ধতির দুর্বলতাকে।

এ বিষয়ে আরবি ভাষার শিক্ষক, গবেষক ও  রাজধানীর মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়ার পরিচালক মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী বলেছেন, ‘আরবিকে ভাষা হিসেবে শেখানোর গুরুত্ব সরকারিভাবে আমরা খুব একটা দেখি না। আরবি ভাষার বহুমাত্রিক যে সম্ভাবনা তাকে কাজে লাগিয়েও কোন ধরনের কাজ রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়নি। দ্বীনি অঙ্গন থেকেও আরবি ভাষার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর খুব একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি’।

‘গত এক দশক ধরে, ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই আরবীকে ধর্মীয় ও ভাষাগত দিক থেকে চর্চা শুরু করেছেন। এর মাধ্যমেধর্মীয় এবং দাওয়াতি সবদিক থেকে আরবি ভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘আবার অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে কাজ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহারিক আরবি ভাষা শেখানোর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, কেউ বা ব্যক্তি উদ্যোগে আরবি ভাষা শিখে বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে কাজ করছেন, তবে এর সবগুলোই বেসরকারি উদ্যোগে হচ্ছে যা গত এক যুগ আগেও ছিল না’ আওয়ার ইসলামকে বলছেন এই আরবি ভাষার শিক্ষক।

ছোটবেলা থেকেই আরবি ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আবেগের সম্পর্ক তৈরি হয়, এরপরও আরবি ভাষা জানা মানুষের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকী চিহ্নিত করছেন, দেশের মানুষ আরবি ভাষা শেখার বিষয়টিকে অনেকটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এবং কুরআন কারীম পড়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ মনে করে।

মাদ্রাসাগুলোতে  আরবি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে অনেকাংশে একে ভাষা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার থেকে ব্যাকরণিক দিকগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মহিউদ্দিন ফারুকী বক্তব্য হলো, ‘শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত উপমহাদেশেরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগ যুগ ধরে বিদেশী ভাষা শেখার ধরন অনেকটা এমনই ছিল। পরবর্তীতে বিদেশী ভাষা শিক্ষার পদ্ধতিগুলোতে উন্নয়ন ঘটেছে এবং সে বিষয়গুলো সব দেশেই গ্রহণ করতে শুরু করেছে’।

দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের কাজের উন্নয়নেও আরবি ভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ভাষাবিদ।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ভিন্নভাবে আরবি ভাষা শেখানো হয়। এছাড়াও অবাক করা বিষয় হলো, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াতে হজের জন্য আলাদা ভাষা আরবি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই দিক থেকে বাংলাদেশের শ্রমিকরা আরব দেশগুলোতে নির্যাতিত। অনেক ক্ষেত্রে নিজের মালিককে তারা বোঝাতে পারেন না পেটের ক্ষুধার কথাটাও। এ বিষয়গুলোতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে’ বলে উল্লেখ করেছেন আরবি ভাষার শিক্ষক মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকী।

এদিকে  জামিয়াতুল উস্তায শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী রহ. ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মাওলানা শফিকুল ইসলাম ইমদাদি বলেছেন, ধর্মীয় এবং আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই আরবি ভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ভাষা হিসেবে বাংলাদেশে আরবি চর্চার গুরুত্ব গত ১০ বছরে বেড়েছে এবং তা আগামী ১০ বছরে আরো সম্ভাবনাময় বলে জানিয়েছেন এই আরবি ভাষার শিক্ষক।

‘যেই পথ পদ্ধতি অবলম্বন করে ওলামায়ে কেরাম দীর্ঘসময় এগিয়ে চলেছেন সেখানে কুরআন হাদিসকে বোঝাই মূল উদ্দেশ্য উদ্দেশ্য ছিল। তাই এক্ষেত্রে কোরআন হাদিস বুঝার জন্য আরবি ভাষা শেখাকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও আরবি ভাষা শেখাটা মুখ্য হয়ে উঠতো না। এ কারণে দেখা যেত ভালো নাহু সরফ ভালো জ্ঞান থাকলেও আরবি ভাষার দিক থেকে কিছুটা পিছিয়েও থাকতেন অনেকে। তবে বর্তমানের পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে, ভাষা হিসেবে আরবি শেখার গুরুত্ব বেড়েছে, গবেষণার জন্যও ভাষা হিসেবে আরবির গুরুত্ব অপরিসীম, তাই এদিকেও নজর বাড়াতে শুরু করেছেন ওলামায়ে কেরাম’ আওয়ার ইসলামকে বলেছেন মাওলানা শফিকুল ইসলাম ইমদাদি।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালনের পরিধি এখনো বাড়েনি, এবং গুরুত্ব না থাকায় ঘরোয়াভাবে অনেকেই দিবসটি পালন করে আসছেন।

বাংলাদেশে আরবি ভাষা নিয়ে যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করে আসছেন তাদের অনেকেই শুধু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাষা শেখানোর কাজ করে চলেছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে এখনও তাদের ভিন্ন কোনো কর্মপন্থা চালু হয়নি।

এ বিষয়ে মাওলানা শফিকুল ইসলাম ইমদাদি আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের ভাষা হিসেবে আরবি শেখার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই পারদর্শিতা থাকে না, তারা যেন বাইরে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে গিয়ে কোন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন, তাই তাদের নিয়েই আপাতত কাজ চলছে, শ্রমিকদের নিয়ে ভাষার কাজ এখনো শুরু হয়নি খুব একটা, তবে ভবিষ্যতে  এ বিষয়ে তাদের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে’।

সর্বশেষ মাওলানা শফিকুল ইসলাম ইমদাদী বলেছেন, আরবি ভাষার গুরুত্ব যতটুকু হওয়া দরকার ছিল, আমাদের ওলামায়ে কেরামের ভেতরেও সেই গুরুত্ব পাওয়া যায় না, তাই এ ভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও যারা কওমি অঙ্গনের মুরুব্বি হিসেবে পরিচিত তাদেরও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ের  গুরুত্ব বোঝানোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এতে করে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রও বিস্তৃত হবে বলে মনে করেন আরবি ভাষার শিক্ষক  মাওলানা শফিকুল ইসলাম ইমদাদি।

প্রসঙ্গত আরবি এখনকার বিশ্বের প্রায় বিশটিরও বেশি দেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচলিত আছে এবং এর বাইরেও অনেকগুলো দেশে আরবি ভাষার প্রচলন আছে।

এক হিসেবে দেখা যায় এখন প্রায় ২৮ কোটি মানুষের মাতৃভাষা আরবি আর প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আরবি ব্যবহার করে।

সবমিলিয়ে ১৮০ কোটি মুসলিমের ধর্মীয় ভাষা আরবি। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মধ্যে চতুর্থ কিংবা পঞ্চম।

এছাড়া জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আরব লীগের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেও আরবি ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালন করা হয়। ১৯৭৩ সালের এ দিনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরবিকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ১৯০তম অধিবেশনে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এটি


সম্পর্কিত খবর