বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


হাইআতুল উলিয়ার পরীক্ষায় কেন অংশ নেবে না সেই কওমি বোর্ড?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ::
নিউজরুম এডিটর

কওমি মাদরাসারগুলোর সর্বোচ্চ অথরিটি ‘আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার কথা জানিয়েছে ‘জাতীয় কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ নামের সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি কওমি মাদরাসা বোর্ড।

আজ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) এ বোর্ডের মহাসচিব, রাজধানীর জামিয়া আল হাসনাইনের মহাপরিচালক মুফতি সৈয়দ উসামা ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন কথা জানানো হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন তাবলিগের মুরব্বী নিজামুদ্দীন মারকাযপন্থী (এতাআতি) মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। তিনি রাজধানীর সাভারে অবস্থিত মারকাজুল উলুম আশ শরীয়াহ মাদরাসার মুহতামিম। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, এখন থেকে সরকারী স্বীকৃতির বাইরে স্বতন্ত্রভাবে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার আয়োজন করবে তারা।

তাদের এমন সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন কওমি মাদরাসারগুলোর সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলবৃন্দ? জানতে কথা বলেছিলাম কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব ও হাইআতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা মাহফজুল হক এর সঙ্গে। আপাতত নতুন এ বোর্ড বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হোননি তিনি।

তিনি বলেছেন, ‘আলাদা করে কোনো মন্তব্য আমি এখনি করতে চাই না। তবে মুরুব্বিদের সঙ্গে পরামর্শ করে যদি কোনো মন্তব্য করার থাকে তাহলে আমরা জানাবো।’ তবে এ বোর্ড সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।’

এদিকে নতুন প্রতিষ্ঠিত এ বোর্ডটি কেনো সরকার স্বীকৃত কওমি মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না? এ বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের সদস্য ও রাজধানীর আফতাবনগর মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি মুহাম্মদ আলী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘দেশে আরও এমন বোর্ড ও কওমি মাদরাসা আছে, যারা হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় না। যেমন সিলেটের অনেক বড় আলেম মাওলানা আলীমুদ্দীন দূর্লভপুরী প্রতিষ্ঠিত বোর্ড আছে। যা হাইয়ার পরীক্ষায় অংশ নেয় না। এমনিভাবে সিলেটের বায়মপুরী রহ. এর মাদরাসাও হাইয়ার অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না। মোটকথা হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক না। যার ইচ্ছা পরীক্ষায় অংশ নিবে। যার ইচ্ছে হয় নেবে না। এখানে জোরাজুরির কিছু নেই।’

‘সেই বোর্ডে নিবন্ধিত মাদরাসাগুলোকে হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে পরীক্ষা দিতে বাধা দেওয়া হয়’ বোর্ডটির এমন অভিযোগ বিষয়ে মুফতী মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের বোর্ডের নীতিমালায় বলা আছে, যারা দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি-আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত তারা এ বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।

‘যেমন মনে করেন, অনেক আলিয়া মাদরাসা এখানে নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা বলেছি, দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি-আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত শুধু খালেস কওমি মাদরাসার জন্য গঠন করা হয়েছে এ বোর্ড। তাই তারা অংশ নিতে পারেন না।’- বলেন মুফতী মুহাম্মদ আলী।

হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে নতুন প্রতিষ্ঠিত বোর্ডটির চেয়ারম্যান মাওলানা জিয়া বিন কাসিমের সঙ্গে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজী হোননি।

তবে নতুন প্রতিষ্ঠিত এ বোর্ডের অফিস সূত্র দাবি করছে, ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে বোর্ডটি। কওমি মাদরাসার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত বোর্ড হাইয়াতুল উলইয়া তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসাগুলোর নামে পরীক্ষা না নেয়ার কারণেই বাধ্য হয়ে নতুন বোর্ড তৈরী করেছেন বলে দাবি তাদের।

নতুন বোর্ড প্রতিষ্ঠার কারণ ও এ বোর্ড সরকার স্বীকৃত হাইয়ার পরীক্ষায় অংশ নেবে না কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, ‘স্বকীয়তা নষ্ট হওয়া, নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে না পারা।’

জানা গেছে, বোর্ডটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন, আল মঈনুল ইসলাম বারিধারা (কোকাকোলা মাদরাসা) এর মুহতামিম  শায়খুল হাদীস মাওলানা মুফতী আতাউর রহমান। তার মৃত্যুর পর বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের মান ঘোষণা করার পর হাইআতুল উলয়ার অধীনে ৬ বোর্ডের সম্মিলিত দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদের ২২ তম অধিবেশনে ‘কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস হয়।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ