বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রকৃতি ও মানবমনের সেতুবন্ধন শীতকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খাদিজা ইসলাম
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী>

হিম হিম শীত শীত, শীত বুঝি এলোরে, কনকনে ঠান্ডায় দম বুঝি গেলোরে... কবির এ অনুভূতির সাথে প্রকৃতি ও মানবমনের অনুভূতি মিলে একাকার। কুয়াশায় মোড়ানো সকাল, উত্তরের বাতাস জানান দেয় শীত সুন্দরী হাজির হয়েছে মন পবনে। চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শীতে যেন একটু বেশিই শুনা যায়। আলস্য ভেঙে, গরম বিছানা থেকে ছুটি নেওয়া মৃত্যু তুল্য। তবুও শুনা যায় মসজিদ থেকে আযানের ধ্বণি। মক্তব থেকে গলা ফাটানো দোয়া দুরুদ। শিশুদের হাতে কায়দা, কোরআন নিয়ে মক্তবে যাওয়ার দৃশ্য মনকে তৃপ্ত করে তোলে, ভুলিয়ে রাখে কনকনে ঠান্ডা।

ধুম পড়ে যায় পিঠাপুলির। উনুনের কাছে বসে থাকার জন্য বেধে যায় লড়াই। মায়ের হাতের শীতের পিঠা খাওয়ার জন্য হলেও শীত আসুক এ মনটায় মানবমনের চাওয়া। শীতের সকালে খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শরীরকে গরম করে আবাল বৃদ্ধবনিতা। মুখ থেকে ও যেন শ্বাস প্রশ্বাসে শীতের হাওয়া ভেসে আসে। ফুলের গায়েও কুয়াশার ছোয়া দেখা যায়। শীতের সকাল আলস্য সকাল বললেও ভুল হবে না।

আত্মীয় স্বজনদের আগমণে হৈ হৈ সারাবাড়ি। উৎসবের মৌসুম মনে হয় শীতকে অনেকের কাছে। বাড়ির মুরুব্বিদের সাথে যোগ দেয় শিশুরা। সবাই মিলে অংশ নেয় শীতের পিঠাপুলিতে। রাতভর আড্ডা চলে খড়কুটার অনলে। শীতের সকালটাকে মনে হয় বরফ রাজ্য। চোখ যতদূর যায় বরফ রাজ্য যেন শেষ হয় না। হালকা রোদের আভাসে গলতে থাকে বরফের রাজ্য। শীতের সকালে রোদ উকিঁ দেয় মনকে রাঙ্গিয়ে তুলতে। এই রোদ যেন খুব মিষ্টি। যা গায়ে লাগাার সাথে সাথে উপলব্ধি হয়।

খেজুরের রস ফেরি, দই ফেরিওয়ালার কাঁধে করে বয়ে বেড়ানো! যেন, শীতের সৌন্দর্য কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রসওয়ালার খাচিঁ ধরে গোলবৈঠকে দেখা যায় শিশুদের। খেজুরের রস মনকে চাঙা করে তুলে। শীতের দিনে বেলা যেন তাড়াতাড়ি মিলে যায়। গৌধূলী লগ্ন যেন নিমেষেই হাজির হয় প্রকৃতিতে। ধীরে ধীরে রাত রাড়তে থাকে, শীত ও যেন সমান তালে বাড়ে। কম্বলের নিচে একবার গেলে আর উঠতে ইচ্ছে হয় না শত দরকারেও।

সকালের ঘুম যেন একটু বেশি মিষ্টি হয়। গ্রামের শিশুরা অপেক্ষা করে কখন সকাল হবে, কখন মায়ের হাতে শীতের পিঠা খাব। সকালের ঘুম যেন শিশুদের কাছে শত্রুতুল্য। কখন মক্তবে যাবে, আর গলা ফাটিয়ে পড়া মুখস্ত করবে। সেই চিন্তায় অধীর শিশুরা। আযানের ধ্বণি শিশুমনে আনন্দের জোয়ার এনে দেয়। তারা চাই শীত বন্ধু থাকুক, সারা বছর জুড়ে তাদের মানসপটে।

শীতে যেন গ্রামবাংলার চিত্র নতুন করে ফুটে উঠে। কৃষকের নতুন ধানের আগমণে নয়নভুলানো হাসিতে শীত নিস্তেজ হয়ে যায় । প্রকৃতিও মানবমনের সেতু বন্ধনে শীত বন্ধু হিসেবে কাজ করে। সোনার বাংলায় সোনা ফলে শীত মৌসুমকে ঘিরে। প্রকৃতি নতুন ভাবে মেলে ধরে তার সৌন্দর্য কে। তাই তো কবি বলেছেন, ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি ’। শীত যেন সে রাণীর অংশ বিশেষ।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ