শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘রেগ-ডে’ নিষিদ্ধ করুন, বিদায় অনুষ্ঠানকে আড়ম্বরপূর্ণ করুন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম।। Rag অর্থ তেনা বা নেকরা বা ছেড়া কাপরের টুকরা। ‘রেগ ডে’ এর সহজ অর্থ বাজে দিন, নেকরা বা তেনাময় দিন। তেনা-নেকরা মার্কা নষ্টময় দিনে ১৫-১৮ বছরের সন্তানকে ভিনদেশী কালচারে দেখে বাবা-মা বা শিক্ষক আজকাল পুলকিত হন।এটি খুবই বেদনার কথা!

হ্যাডম থাকলে আপনার সন্তান বা ছাত্রটিকে -আমেরিকান গট টেলেন্টে" উপযুক্ত প্রতিযোগী করে পাঠান।না তা পারবেন না। আমেরিকা তো দূর করা বাত, নিজ দেশের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়েওতো পাশ মার্কস পায় না।একজনেরও ইংরেজিতে আশানুরূপ নাম্বার নাই।এবার ভর্তিচ্ছু ৪৬ হাজার তো কলেজেরই ছাত্র ছিলো।

মাদ্রাসার ছিলো সামান্য। সকলকে পেছনে ফেলে দিয়ে প্রথম হলো মাদ্রাসা ছাত্র রেজাউল। এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো।মাদ্রাসায় তো আরও রেগ-ডে হয়না। স্কুল কলেজের দূর্দশা কেন, এবারের রেগ-ডে ই তার প্রমান।কিছু দিন আগের ঢাকা শহরের একটি স্কুলের কতিপয় শিক্ষকের সমর্থনে বিদায়ী এসএসসি ছাত্র ছাত্রীদের রেগ- ডে তে তাদের উদোম নৃত্য এবং নোংরা উল্লাস এখন ভাইরাল। মেইন স্ট্রীমের মিডিয়া গুলোর খবর দেখে দেশের বিবেকবান মানুষ উদ্বিগ্ন ও হতাশ।একই স্কুলের প্রজ্ঞাবান একজন শিক্ষক এই বলে আফসোস করে স্টেটাস দিয়েছেন যে, তার মৃত্যু কেনো হলো না এ-দৃশ্য দেখার আগে।

আফসোস! কতটা ভয়াবহ হলে শিক্ষক দৃশ্য দেখার চেয়ে মৃত্যূকে শ্রেয় মনে করেছেন।স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় একই ক্যাটাগরিতে এগুচ্ছে। আমরা মুখে বড় বড় কথা বলি।আজ কি শিক্ষক কি অভিভাবক তারা তাদের সন্তান বা ছাত্র-ছাত্রীদের নোংরা নাচের উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছেন।পড়ালেখা তো গোল্লায়। ভার্সিটির শ্রদ্ধাভাজন স্যারদের মুখে কুলুপ।

ওয়ার্ল্ড রেন্কিং এ এক হাজার ভার্সিটির মধ্যেও তো নিজেদের র ্যাংকিং মান আনতে পারেন নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ নাই, স্টাডি নাই, উদ্ভাবন প্রচেষ্টা নাই, আবিষ্কার নাই। আছে রাজনীতি, গ্রুপিং, তেলবাজি, হিংসা আর কুটচাল।

কবি মুহিবের মতো যদি বলি,
‘শিক্ষাঙ্গনে কি আর, ফুটবে না ফুল,
পানি পেয়েও শুকনাে,পঁচে গেছে মূল?’

স্কুল শিক্ষার শেষ দিনগুলো আনন্দের, বেদনার কষ্টের।চোখের জ্বলে, হাসিমুখে,কোলাকুলি, দোয়া নেয়া-দেয়ার ভেতর দিয়ে ১০ বছরের স্কুল জীবনকে বিদায় অনুষ্ঠান করে আমাদের পূর্বসূরীরা, আমরা, এমনকি এই সেদিন পর্যন্ত আমাদের উত্তরসূরীরা স্কুলকে বিদায় জানিয়েছে। বিদায়প্রোগ্রামগুলো অসভ্যতা, চেংটামি,নোংরামি আর ফাজলামোর মাধ্যমে সমাপিত হয় নাই।বহুবছর পরে রেগ-ডে নামটি শুনেছি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হৈ-হুল্লোড়ের মাধ্যমে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবন থেকে বিদায় জানাতো।স্কুল বা কলেজে তার কল্পনাও করা যেতো না।

রেগ-ডে এর নামে অসভ্যতা,অভদ্রতা ও নোংরামোর জন্য স্কুল শিক্ষক দায়ী, না তার বাবা-মা, নাকি সময়ের দায়? সময়কে আমরাই কালার দেই। আজকাল শিক্ষকগন বেতনের বিনিময়ে শুধুই চাকুরী করেন।এখন তাদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর বলতে ইতস্তত করেন অনেকেই।তারা তাদের ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠান করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না।সব শিক্ষক অবশ্যই নয়।

এখনও বেশির ভাগ শিক্ষকই ভালোটা চান। কিন্তু দলদাসদের কাছে অসহায়।বিদায় অনুষ্ঠান না করুন ওয়েস্টার্নদের মতো কল্যাণমূলক কাজ করলেও কেউ কষ্ট পেতো না।কারন তাদের কাছে রেগ-ডে মানে, A day on which university students do silly things for charity often the culmination of rag week. তাই ইউরোপের কোনো কোনো ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের রেগ ডে তে চাঁদা তুলে মানব কল্যাণে ব্যয় করার রীতি ও চালু আছে। বাংলাদেশে রেগ ডে পালন শুধুই ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে সীমিত ছিলো। রেগ- ডে স্কুল পর্যায়ে পালিত হবে এবং তা নোংরামোর চরম সীমায় পৌঁছে যাবে তার বোধহয় কারো কল্পনায়ও ছিলো না।

রেগ-ডে" এর অসভ্যতা রুখতে স্কুল কলেজে দ্বীনের শিক্ষা জরুরি। ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।আমাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তার দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের কল্যাণে আমরা বেঁচে আছি,আমাদের কোনো কাজ জবাবদিহিতা মুক্ত নয়, তার রাসুলের সা. দেখানো পথই শান্তির পথ- মুক্তির পথ, ছেলে মেয়েরা বালেগ হলে পর্দা ফরজ, সুদ-ঘোষ হারাম, নেশা দূর্ণীতি হারাম।বড়দের শ্রদ্ধা ছোটদের স্নেহ, এগুলোইতো দ্বীনি শিক্ষা। একজন স্কুল বা কলেজের ছাত্র আল- কোরান খুলে যখন দেখবে তাকে মালিক মাওলার থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে --(সূরা আন-নিসা, ৩৬,৩৭)

وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো, কোনো কিছুকেই তাঁর সাথে অংশীদার বানিয়ো না এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, (আরো) যারা (তোমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, (তোমার) পথচারী সংগী ও তোমার অধিকারভুক্ত (দাস দাসী, তাদের সবার সাথেও ভালো ব্যাবহার করো), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক।

اِ۟لَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ وَ یَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَ یَكْتُمُوْنَ مَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ١ؕ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ عَذَابًا مُّهِیْنًاۚ আল্লাহ তায়ালা এমন ধরনের লোকদেরও ভালোবাসেন না) যারা নিজেরা (যেমন) কার্পণ্য করে, (তেমনি) অন্যদেরও কার্পণ্য করার আদেশ করে, (তাছাড়া) আল্লাহ তায়ালা তাদের যা কিছু (ধন-সম্পদের) অনুগ্রহ দান করেছেন তারা তা লুকিয়ে রাখে; আমি কাফেরদের জন্যে এক লাঞ্ছ্নাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি;
চিন্তাশীল ছাত্র মাত্রই এই শিক্ষা লুফে নিবে।আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আর কোনো ধর্ম গ্রন্থই এমন সুন্দর করে বলেনি।আমাদের সন্তানদের এই শিক্ষা থেকে আমরা বঞ্চিত রেখে দিয়েছি।ভারত,পাকিস্তান, বাংলাদেশ নির্বিশেষে এই কথাটি সত্যি।

প্রতিটি ক্লাসেই ব্যক্তি, মানব পরিবার,সমাজ,দেশ নিয়ে দ্বীনি শিক্ষা জরুরি। দশম ক্লাসের ছাত্রী যখন শিখবে আমার ছাত্র বন্ধুটি আমার মোহাররেম, তার সাথে মেলামেশা হারাম দুনিয়া ও আখেরাতে আমার বিপদ ডেকে আনবে তখন তাকে কোনোরকম ভয়ভীতি দেখিয়ে রেগডে অনুষ্ঠানে নামানো যাবে না।সে উদ্যোগটাই আমরা দেখতে চাই।

-লেখক: গবেষক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর