বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘লস হয় না, রোজাদারদের কাছে অল্প দামে বেচে শান্তি পাই’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম।।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা দুপুরে, প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন ক্লান্ত, খুব দ্রুত প্রশান্তি আনতে খুলনার নিউমাকের্টের ১নং গেইটে ছুটে যায় অনেকে। মজিবর চাচা ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন সেখানটায়। মুখে পানের রং মাখা মিষ্টি হাসি নিয়ে বসে থাকেন তিনি। ভ্যানে ডাবের ছড়ি। পাশে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা রোজাদারের জন্য ৫ টাকা ছাড়, রোগীর জন্য ৫ টাকা ছাড়, রমজান মাসে সবার জন্য ৫ টাকা ছাড়, অসহায়দের জন্য ২০ টাকায় ডাব।

এভাবেই রোজাদার আর অসহায়দের সেবা করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন। কথা বলেছিলাম মজিবর চাচার সঙ্গে। তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, স্বাধীনতার আগ থেকেই আমি ডাব বেচি। আটানা করে লঞ্চে লঞ্চে ডাব বেচতাম তখন। স্বাধীনতা দেখলাম, কতদিন পাড় হয়ে গেলো, এখন আমি ভ্যানে করে ডাব বেচি। আল্লাহ অনেক অনেক ভালো রেখেছেন।

তিন মেয়ে এক ছেলের সংসার। ছেলেটাকে মাদরাসায় দিয়েছিলাম, ২৪ পাড়া মুখস্থ করেছে। পড়া মনে রাখতে পারে না তাই মাদরাসা থেকে চইল্লা আসলো। তারে একটা জাহাজে চাকরি দিয়া দিমু। কাজ শিখবো। কাজ করে খাইব। মেয়েরা ভালো আছে। পড়াশোনা করে। সব মিলাইয়া আল্লাহ অনেক ভালা রাখছে।

জিজ্ঞেস করলাম, আপনি দীর্ঘদিন ধরে রোজাদার আর অসহায়দের অল্প দামে ডাব বিক্রি করছেন, কী কারণ? বাবার কথা মনে করে ভাঙ্গা গলায় তিনি বললেন, বাবা ছোট থাকতেই মারা যান। মরার আগে মুরে বলছিলো নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে যাবি। অসহায়দের যখা সম্ভব পাশে দাঁড়াবি। তাই আমি যেহেতু ডাব বিক্রি করি, এটাতে মানুষের সেবা দাম কমানো ছাড়া আর কিভাবে করুম। তাই অসহায়দের জন্য ২০ টাকায় ডাব বেচি।

আপনার লস হয় না? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, না আমার লস হয় না। আল্লাহ আমাকে বরকত দেন। আমি শান্তি পাই।

রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য কত টাকায় দেন? তিনি বলেন, এই তো যখন আমি কমে কিনতে পারি আমার কেনা দাম থেকে ৫ টাকা রেখে কমিয়ে দেই। ৫০ টাকায় কিনলে রোজাদারকে ৫৫ টাকায় দিয়ে দেই। আর অন্যদের কাছে ৬৫ টাকা ৭০ টাকা বিক্রি করি।

ডাব সম্পূর্ণরূপে একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এতে কোনো কৃত্রিম রং, প্রিজারভেটিভ, ফ্লেভার—এর কিছুই থাকে না। তাই বাজারে যত কৃত্রিম পানীয় আছে, তার তুলনায় ডাবের পানি সেরা। মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ডাবের পানির স্বাদ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ভারতের ডাবের পানি যেমন বেশ মিষ্টি হয়, তেমনি বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি ও হালকা নোনতা স্বাদের হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো দেশের ডাবের পানি পানসে হয়।

ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী ও জনপ্রিয় একটি পানীয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক এনজাইম ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এ পানীয়। ১০০ মিলি ডাবের পানিতে থাকে ১৮ ক্যালরি, ৪ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২০৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২.৬ মিলিগ্রাম সুগার, ২.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন ও ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ