শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

আপনাকে ভুলব না দাদু ভাই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাসউদুল কাদির।।

চলে গেলেন আমাদের প্রিয় রফিকুল হক দাদু ভাই। দাদু ভাইকে ভুলবার নয়। ভুলে যাওয়া অসম্ভব। একটা সুন্দর সময়ে দাদু আমাদের হৃদয়ের বারান্দায় আলো জ্বেলেছিলেন। তারুণ্যদীপ্ত দাদু ভাই সৌন্দর্য ফেরি করে বেড়াতেন। অনন্যময় পেছনের আলোকোজ্জ্বল দিনগুলো রেখে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। দাদু ভাই, অত্যন্ত মজার ও রসবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। আমাদের সাহিত্যসভাগুলোতে হাজির হলেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়তো চতুর্দিকে। সবার মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব চলে আসতো। আমরা জবাটবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করতাম। দাদু ভাইও পড়তেন। একদিন দাদু ভাই বললেন, কী আশ্চর্য! তোমরা মসজিদে জিলাপি বিতরণের বিরোধিতা করো। মসজিদে একটু দুআ দরূদ হলে, মিলাদ হলে, মিষ্টান্য বিতরণ হলে বাচ্চারা তো খুশি হয়। তাই না? এরাও তো মসজিদে আসতে আগ্রহী হয়। আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম তার কথা।

সময়টা প্রথম দশক। আমার মনে পড়ে, আহমেদ কায়সার ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কমলকুঁঁড়ি একাডেমির সবচেয়ে আকর্ষণের মানুষটি ছিলেন রফিকুল হক দাদুভাই।

দাদু ভাইয়ের তিরাশিতম জন্মদিনে ফেসবুক ওয়ালে দেখেছিলাম, আশরাফুল আলম পিনটু ভাই একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমার এই প্রথম মনে হলো, দাদু ভাইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি।

অনেকগুলো ভালো কাজ মনের ভেতর পুশে রাখি, করতে পারি না। নিজেকে ব্যস্ত মানুষ হিসেবে জাহির করার জন্যই হয়তো অনেক ভালো কাজে অংশ নিতে পারি না। এরমধ্যে মহিউদ্দিন আকবর আমার এবং আমাদের জীবনে অসামান্য অবদান রাখলেও তাকে দেখতেও যেতে পারি না। যাই না। নিজের অগোছালো জীবনের করুণ বাস্তবতা এটি। পরে অবশ্য আমাদের ছেড়ে মহি ভাইও চলে গেলেন। অবশ্য জানাযায় অংশ নেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।

রফিকুল হক দাদু ভাইকে খুব মনে পড়ছে। ছড়া পড়ে পড়ে অনেক পুরস্কার নিয়েছি তার হাত থেকে। অনেক উৎসাহ পেয়েছি। শীলন বাংলাদেশ-এর সাহিত্যসভায় তিনি আসতেন। আমরা দাওয়াত করে নিয়ে আসতাম। আমাদের তরুণরা তাকে ভালোবাসতো। তিনি যুগান্তরের কুট্টুস লিখতেন। আমরা শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশ হওয়ার আগেই কুট্টুস ছড়াটা শুনতাম। অনেক মজা করে পড়তেন। কত আবেগী শ্রোতা ছিলাম তা বলে বুঝানো যাবে না।

বয়সে আশি পেরিয়ে পঁচাশিতে দাদুভাই। এরপরই থেমে তার বাতি। ইন্তেকালের আগে তার চলা আর বলায় দারুণ বলিষ্ঠতা ছিল। ছড়ায় সাহসের গল্প আঁকতেন তসবির দানার মতো। শ্রোতাকে যাদুর মতো টানতেন তিনি। সমকালীন বাংলা ছড়া সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি বলতেই হবে তাকে।

সাইয়্যিদ আতিক নকীব ভাইয়ের কিশোর কাফেলা, রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের কচিকাঁচার আসর, কবি হাবিবুর রহমান ‘ভাইয়া’র খেলাঘর এবং রফিকুল হক দাদুভাইয়ের চাঁদের হাট- বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য চর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছে তা হলফ করেই বলা যায়। আজকের এই দিনে শিশুদের পাতাগুলো আগের মতো প্রাণময় নয়। আমাদের দাদারা যে কাজ করেছেন তাদের চর্চা আমরা তরুণরা ধরে রাখতে পারিনি। পারছি না। বইমেলাকেন্দ্রিক কিছু হয়, তা-ও আন্দোলিত করার মতো নয়।

আমাদের প্রিয় দাদুভাইয়ের কথা বলছিলাম। তিনি চাঁদের হাটের চাঁদ। মিষ্টি চাঁদ। কথায় কথায় মিষ্টি ছড়িয়ে দিতে জানতেন তিনি। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক পূর্বদেশের ছোটদের পাতা ‘চাঁদের হাটের’ সম্পাদক ও পরে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ ৬ দশকের সাহিত্য সাক্ষী তিনি।

শিশুসাহিত্যের বাইরে তিনি একজন বড় সাংবাদিকও ছিলেন। দাদুভাই দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতাও করেছেন। উপমহাদেশে শিশু-কিশোরদের প্রথম সংবাদপত্র ‘কিশোর বাংলা’ তার সম্পাদনায় ঢাকা থেকে দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয়। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরে ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ইতোমধ্যেই তিনি ১৪০৫ বঙ্গাব্দে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। শিশুসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ফেলোশিপ লাভ করেছেন। বাংলা ১৪২০ সালে তাকে শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

১৯৭২ সাল দেশে প্রত্যাবর্তনের পর চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু লন্ডন যান। তার দেশে ফিরে আসা উপলক্ষ্যে সেই সময়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে। ওই পত্রিকার প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে ‘ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু’ শিরোনামে একটি কবিতা ছাপা হয়। রফিকুল হকের লেখা ওই কবিতা খুবই আলোচিত হয়।

রফিকুল হকের ছড়াগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- পান্তাভাতে ঘি, বর্গি এলো দেশে, নেবুর পাতা করমচা ইত্যাদি। আমরা যুগ যুগ ধরে একজন রফিকুল হক দাদুভাইয়ের অপেক্ষা করি। বিশ্ব শিশুসাহিত্যও এরকমই অপেক্ষা করে। দাদু ভাই মনের গভীরে জায়গা নিয়ে, ভালোবাসা কুড়িয়ে অবশেষে ১০ অক্টোবর ২০২১ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর মুগদার নিজ বাসায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

এর আগে রফিকুল হক দাদু ভাই জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের কামালকাচনায়। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। তিনি যুগান্তরের ফিচার এডিটর ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন। নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত দৈনিক রূপালীর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক। এর আগে দৈনিক জনতার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। কাজ করেছেন দৈনিক লাল-সবুজ, আজাদ, বাংলাদেশ অবজারভারে। সত্তর দশকে শিশুকিশোরদের জনপ্রিয় ‘কিশোর বাংলা’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

রফিকুল হক দাদু ভাইকে সবসময় মিস করবো। তার কথা ও কবিতা দুই-ই আমাদের মনে থাকবে। তার ভালো কাজগুলোর উপর মহান আল্লাহ রহম করুন। তার পরকালকে সুন্দর করুন। আমীন

লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক আমার বার্তা ও মুদাররিস, জামিআ আফতাবনগর (আবদুল হাফেজ তাহসীনুল কুরআন মাদরাসা), ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ