শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে দোয়া করা যাবে কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন অনেক জরুরি একটা বিষয়। এজন্য রয়েছে ইসলামি রীতি। কিন্তু কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে যদি একে অন্যকে পছন্দ করে কিংবা ভালো লাগে; তবে ওই ছেলে-মেয়ে পরস্পর কোনো ধরনের সম্পর্কে জড়ানো ছাড়া একে অপরকে বিয়ে করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তাদের এ দোয়া করা কি বৈধ হবে? এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

কোনো ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিংবা কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়েছে; এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ছেলে কিংবা মেয়েকে বিয়ে করতে বা বিয়ের কাজ সহজ হতে, পারিবারিক সম্মতির উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে কি না। এ রকম পরিস্থিতিতে দোয়া করা জায়েজ আছে কিনা। ক্ষেত্রে করণীয়ই বা কী?

‘হ্যাঁ’, দোয়া করা যাবে। কাউকে জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে; যদি সংশ্লিষ্ট ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কোনো অবৈধ বা ইসলাম বিরোধী কোনো সর্ম্পক জড়িত না থাকে। পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে কিংবা বিয়ে সহজ হতে দোয়া করা প্রসঙ্গে হাদিসের একটি বর্ণনা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে দোয়া করা যাবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সব সময় গ্রহণ করা হয়; যদি না সে দোয়া কোনো অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা না থাকে। এবং (দোয়ায়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দোয়ায়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন- সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দোয়া করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

কোনো উদ্দেশ্যে দোয়া করার বিষয়টি এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- উল্লেখিত ৩টি ক্ষেত্রে দোয়া করা যাবে না। যা করতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাহলো-
- যে কাজে গোনাহ হবে, এমন কোনো কাজের উদ্দেশ্যে দোয়া করা যাবে না।
- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে দোয়া করা যাবে না।
- দোয়া করে তার ফলাফল পেতে তাড়াহুড়া করা যাবে না।

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতিত যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য লাভে দোয়া করা যেতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। তবে ইসলামি শরিয়ত একজন মুসলিমকে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ক্ষেত্রে একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে দোয়া করার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়। আবার কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে ইসতেখারা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

শর্ত জুড়ে দিয়ে দোয়া করা: কেউ সুনির্দিষ্ট বা কাঙ্ক্ষিত কাউকে বিয়ে করতে চায় বা বিয়ের ব্যবস্থাপনায় সহজ হতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের আলোকে একটি শর্ত উল্লেখ করে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। তাহলো-
‘হে আল্লাহ! তাকে ( অমুক ব্যক্তিকে) জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পাওয়া যদি সার্বিক দিক থেকে আমার জন্য কল্যাণকর হয় তবে আপনি সেটি আমার জন্য সহজ করে দিন।’

আর এভাবে দোয়া করা প্রত্যেকের জন্য কল্যাণকর, ভালো এবং উপকারি। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে শর্ত জুড়ে দিয়ে এভাবে দোয়া করার বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
‘আর তোমাদের কাছে হয়তো কোনো একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোনো একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তা তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১৬)

ইস্তেখারা করা: কাউকে বিয়ে করার জন্য আল্লাহর কাছে শর্তজুড়ে দিয়ে দোয়া করার পাশাপাশি ইস্তেখারা করা যেতে পারে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্মের ভালো-মন্দ ইঙ্গিত লাভে ইস্তেখারা করার নসিহত পেশ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সব কাজের জন্য ইস্তেখারার শিক্ষা দিতেন। যেমনভাবে তিনি কুরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। (বলতেন)- যখন তোমাদের কারো কোনো বিশেষ কাজ করার ইচ্ছে হয়, তখন সে যেন দুই রাকাআত নামাজ পড়ে এভাবে দোয়া করে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ،
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের দ্বারা আমার উদ্দিষ্ট কাজের ভালো-মন্দ জানতে চাই এবং আপনার ক্ষমতা বলে আমি কাজে সক্ষম হতে চাই। আর আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। কারণ, আপনি ক্ষমতাবান আর আমার কোনো ক্ষমতা নেই এবং আপনি জানেন আর আমি জানি না। আপনিই গায়েব সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।’

হে আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটিকে আমার দ্বীনের ব্যাপারে, আমার জীবন ধারণে ও পরিণামে (রাবী বলেন; কিংবা তিনি বলেছেন)- আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে মঙ্গলজনক বলে জানেন তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর যদি আমার এ কাজটি আমার দ্বীনের ব্যাপারে, জীবন ধারণে ও পরিণামে- রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন- দুনিয়ায় আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে আপনি আমার জন্য অমঙ্গলজনক মনে করেন, তবে আপনি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নিন। আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আর যেখানেই হোক, আমার জন্য মঙ্গলজনক কাজ নির্ধারিত করে দিন। তারপর আমাকে আপনার নির্ধারিত কাজের প্রতি তৃপ্ত রাখুন। রাবী বলেন, সে যেন এ সময় তার প্রয়োজনের নির্দিষ্ট বিষয়ের কথা উল্লেখ করে।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য কেনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পাওয়ার জন্য দোয়া করতে কোনো ধরনের বাধা নেই। কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী শর্তজুড়ে দিয়ে এবং ইস্তেখারা করে যদি দোয়া করা হয়, তাতে বরকত ও কল্যাণের দরজা খুলে দেবেন মহান আল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর বিয়ে প্রত্যাশী ছেলে-মেয়েকে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সাহায্য লাভে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ